‘দমনের রাজনীতির সব মাত্রা এই আমলে ছাড়িয়ে গেছে’
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে দমন-পীড়নের রাজনীতি কবে থেকে শুরু?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক : ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে৷
কিভাবে এই দমন পীড়নের বিস্তার ঘটল?
বিস্তার ঘটেছে বছরের পর বছর প্রত্যেক রাজনৈতিক দল যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের আমলেই দমন পীড়ন হয়েছে৷ একটি বৃক্ষ যেমন ছোট থেকে বড় হয়৷ পাতা বাড়ে, ডালপালা বেড়ে একটি বটবৃক্ষ হয় তেমনি এটা বটবৃক্ষ হয়েছে৷ গাছের মতো সরকার কর্তৃক জনগনের উপর, বিরোধী দলের উপর দমন বাড়তে বাড়তে এটা এতই বড় হয়েছে যে এটার বর্ণনা করা আমার জন্য কঠিন৷
বর্তমান সরকারের সময় এই দমন পীড়ন কোন পর্যায়ে?
এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে৷ এটা অত্যন্ত কৌশলগত৷ একটা প্রকাশ্যে, আরেকটা কৌশলগতভাবে৷ সর্বাঙ্গিকে এখন দমন পীড়ন করা হয়৷ টাকা পয়সা, ব্যবসা বানিজ্য, দুর্নীতি করে করা হচ্ছে৷ আর পুলিশ, র্যাব দিয়ে, দলীয় ক্যাডার দিয়ে শারীরিক দমন পীড়ন করা হচ্ছে৷ জুডিশিয়ারিকে ব্যবহার করেও দমন পীড়ন করা হচ্ছে৷
কোন আমলে এই ধরনের দমন পীড়ন বেশি ছিল?
বর্তমান আমলেই সব আমলের চেয়ে বেশি আছে৷
এই দমনের ফলে কি ক্ষমতাসীনরা খুব বেশি সুবিধা পায়?
ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকার জন্য এই দমন পীড়ন বেশি করে৷ সমালোচনাকারীদের কণ্ঠকে নিশ্চুপ করার জন্য এটা করে৷ যাতে করে মানুষ ভীত হয়, সত্য প্রকাশে সাহসী না হয়৷ তারা বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারান্তরীণ রেখে বিএনপির দৃষ্টি ও ফোকাস ওই বেগম জিয়ার দিকে নিয়ে গেছে৷ যাতে তারা অন্য দিকে মনোযোগ দিতে না পারে৷
দমন পীড়নের শেষ পরিনতি কি?
ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে ‘বুমেরাং'৷ এই বুমেরাংটা হচ্ছে একমাত্র পরিণতি৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ এটা মিশরে হয়েছে, ইরাকে হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্সে হয়েছে, এমনকি বাংলাদেশেও হয়েছে৷ অর্থাৎ এটা আপনার উপরই এসে পড়বে এর কোনো বিকল্প নেই৷
ডাকসু ভিপি নুরকে তো প্রায়ই পেটাচ্ছে ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতারা৷ এটা আপনি কিভাবে দেখেন?
এটাকে অত্যন্ত অসভ্য রাজনৈতিক কালচার হিসেবে দেখি৷ সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত হীন একটি কাজ হিসেবে দেখি৷ একটি উন্নতমানের সরকার এই কাজ কখনই করতে পারে না৷
শুধু নুর নয়, বিরোধী মতাদর্শের মানুষও কি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন না?
সকলেই হচ্ছে৷ যেহেতু নুর সুপরিচিত একটি চেহারা, সুপরিচিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি বা পরিচয়, তাই এটা বারবার সামনে আসছে৷ আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৫৷ সেখানেও সাধারণ মানুষ এমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন৷ আমি একটু আগে বলছিলাম, মাত্রা আছে, আঙ্গিক আছে৷ যেখানে যে শক্তি প্রয়োজন, সরকার সেই শক্তি সেখানে ব্যবহার করছে৷
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের পথ কী?
একটা উদাহরণ দেই, শব্দের একটা লিমিট আছে৷ শব্দের গতিটা হচ্ছে এক হাজার ৮০ ফিট প্রতি সেকেন্ড৷ একটি রকেট যদি শব্দের এই গতি থেকে কম স্পিডে চলে তাকে বলে সাবসনিক৷ আর কোনো কিছু যদি শব্দের গতি থেকে বেশি গতিতে চলে তাকে বলে সুপারসনিক৷ একটি যুদ্ধবিমান যখন টেকআপ করে তখন সাবসনিক স্পিডে থাকে, একটা পর্যায়ে এটা সুপারসনিক স্পিডে চলে যায়, তখন এটার বিরাট আওয়াজ হয়৷ তখন এটাকে বলে ‘বুম'৷ তেমনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ‘সনিক বুম' দরকার৷ সনিক প্রতিকী অর্থে, দরকার রাজনৈতিক বুম৷ পরিণতির কথা চিন্তা না করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যখন আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হবেন অর্থাৎ আমাকে জেলখানায় যেতে হবে, যাব৷ মার খেতে হলে, খাব৷ কিন্তু এখানেই এর ফয়সালা হতে হবে৷ এটাই বিভিন্ন দেশে হয়েছে, বাংলাদেশেও হয়েছে৷ আমাদের মতো প্রবীণদের পক্ষে এই দায়িত্ব নেওয়া কঠিন৷ তরুণ সম্প্রদায়কে এজন্য দায়িত্ব নিতে হবে৷
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা কি সম্ভব?
আমি তো বলেছি, স্বাভাবিক নিয়মে অনেক কিছু সম্ভব হয় না, সেটা অস্বাভাবিক নিয়মে সম্ভব হয়৷ আইয়ুব খানের পতনের জন্য কোনো স্বাভাবিক নিয়ম এলাউ করত না, কোন স্বাভাবিক নিয়মে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা যেত না, কোন স্বাভাবিক নিয়মে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হতো না৷ মিশরে হোসনে মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন কোনো স্বাভাবিক নিয়মে হয়নি৷ তাই বুঝতে হবে স্বাভাবিক নিয়ম প্রযোজ্য হবে স্বাভাবিক সময়ে৷ অস্বাভাবিক সময়ে অস্বাভাবিক নিয়ম প্রযোজ্য করতে হবে৷
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কি সেই ভিশন আছে?
আমি একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং একটি জোটের শরীক৷ তাদের সম্পর্কে আমার মন্তব্য করা শোভনীয় নয়৷
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কি ঐক্যবদ্ধ?
ঐক্যের মধ্যে কিছু শিথিলতা আছে, সীমাবদ্ধতা আছে৷
কিভাবে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে?
সেটার জন্যই তো অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এখন আমরা আনসাটেনিটিতে ভুগছি যে, দেশনেত্রী বেগম জিয়ার মুক্তি কবে হবে৷ কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রকাশ্যে আলোচনা হয় না যে, বেগম জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থায় মুক্তি পেলেও সমস্ত বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তার আছে কি-না৷ তাহলে তার বিকল্প কী? সেটা নিয়ে আলোচনা হয় না৷ এটা হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি৷ পৃথিবীর কোনো কিছুই কোনো অবস্থায় স্থবির থাকে না৷ সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলে৷
জোটের শরিক হিসেবে আপনি কি কখনও এই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন?
এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো পরিবেশ এখনও আমরা পাইনি৷ আমি কলাম লিখি, টকশোতেও কথা বলি৷ সেখান থেকে এগুলো বুঝে নিতে হবে৷