1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দমনের রাজনীতি ও বাংলাদেশে সাংবাদিকতা

শামীমা নাসরিন
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, একটি গণতান্ত্রিক দেশের মহা গুরুত্বপূর্ণ উপযোগ৷ অথচ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যা দেখছি সেটা বলা বা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার স্বাধীনতা আসলেই আছে কী? কিংবা এভাবেও বলা যায়, কখনো ছিল কী?

ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

আমরা সাংবাদিকেরাই বা কতটা নিরপেক্ষ হতে পারছি৷ নাকি দল কানা হয়ে নিজের পকেট ভারী করার ধান্দায় আছি৷

ছোট্ট বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের অভাব নেই৷ তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিবন্ধিত পত্রপত্রিকার সংখ্যাই ৩০৬১৷ তার উপর আছে বেসরকারি টেলিভিশ চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম৷ এগুলোর সংখ্যার হিসাবে আর না যাই৷

এই যে এত এত সংবাদমাধ্যম সেগুলোর কয়টি নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করে৷ নাকি ‘বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন' প্রচার করেই খুশি৷ যদিও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম৷ তাই সরকারের পক্ষে প্রচারের একটা চাপ তাদের উপর আছে৷

কিন্তু বাকি সংবাদমাধ্যমগুলোর ঘাড়ে সেই অদৃশ্য দৈত্যটি কে; সরকার, মালিক, সম্পাদক নাকি আমরা সাংবাদিকেরা নিজেরাই৷ দিন দিন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সও একই কথা বলছে৷ এ বছর ওই তালিকায় বাংলাদেশের আরো চার ধাপ অবনমন হয়েছে৷ ৫০ দশমিক ৭৪ স্কোর নিয়ে এবার অবস্থান ১৫০তম৷ এমনকি পাকিস্তান আমাদের থেকে আট ধাপ উপরে৷

বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাংবাদমাধ্যম এখন রাষ্ট্র বা স্বআরোপিত সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ঠিক করে বলতে গেলে যেতে বাধ্য হচ্ছে৷ কোনো সংবাদ সেটা যত বস্তুনিষ্ঠ হোক না কেন তা সরকার বা প্রশাসনের বিপক্ষে গেলে নানা মুখি চাপ আসতে শুরু করে৷ সেই চাপ বিজ্ঞাপন না পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি পর্যন্ত আছে৷

সংবাদকর্মীরা ব্যক্তিগতভাবেও হুমকির শিকার হন৷ শারীরিকভাবে নিপীড়ন বা সামাজিকভাবে হেনেস্তার শিকার হতে হয়৷ কখনো কখনো সেটা এতটাই প্রকট যে প্রাণনাশের ঝুঁকিতেও পড়তে হয়৷ এক্ষেত্রে মফস্বল সাংবাদিকেরা অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন৷ দেখা যায় ঝুঁকির কারণে ভয়ে সাংবাদিকরা খবর প্রকাশ করেন না৷ আবার যদিও বা করেন সেটাতে নাম না দেওয়া বা খবরটি তুলে নেওয়াসহ নানা অনুরোধ আসতে থাকে৷ এরকম অসংখ্য ঘটনা আমার সামনে ঘটেছে৷ প্রতিনিধিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে খবরের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে কম গুরুত্ব দিয়ে খবর পুনরায় সম্পাদনা করতে হয়েছে৷

আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)র হিসাব অনুযায়ী ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্তত ২১ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ হামলার শিকার হয়েছেন কতজন তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন৷

এই যখন অবস্থা তখন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ‘কুখ্যাত' ৫৭ ধারা৷ যেটিকে মূলত ‘সাংবাদিকদের নির্যাতনের' জন্যই তৈরি করা হয়েছিল বলে মত বিশ্লেষকদের৷

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার ফাঁদে এমন কী একেবারেই ব্যক্তিগত মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের পোস্টের কারণেও অনেক সাংবাদিককে মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে৷ বাদ যাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ব্লগাররা, এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত৷

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কড়া সমালোচনার মুখে গত বছর আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয় সরকার৷ তবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ৫৭ ধারার বিষয়বস্তুগুলো ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে' ঠিকই রেখে দেওয়া হয়েছে৷ পার্থক্য শুধু ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো একসঙ্গে লেখা ছিল, নতুন আইনে সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে৷ যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  #আমিগুপ্তচর বলে একটি হ্যাশট্যাগ চালু হয়৷

এত গেলো আইনের দৃশ্যমান ফাঁদ৷ এবার আসি অদৃশ্য ফাঁদ প্রসঙ্গে৷ বাংলাদেশে সরকার যন্ত্রের অংশ মানেই তিনি ভিআইপি৷ চারিদিকে ভিআইপি আর প্রটোকলের ছড়াছড়ি৷ সেই সরকার যন্ত্রের মাথা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আপনি চাইলেই যেতে পারবেন না, তা সে আপনি যত অভিজ্ঞ সাংবাদিকই হন না কেন৷ বরং আপনাকে হতে হবে তেলবাজ, সরকারের সঙ্গে রাখতে হবে সুসম্পর্ক৷ তবেই আপনি জায়গা পাবেন প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে৷ 

শামীমা নাসরিন, ডয়চে ভেলেছবি: privat

যদিও ওগুলোকে আমি সংবাদ সম্মেলন বলতে চাই না৷ বরং সেখানে গিয়ে সাংবাদিকরা আবেগে কাঁপতে থাকা গলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন৷ তারপর যদিও বা একটি প্রশ্ন করেন সেটা এমনই বোকা বোকা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী হেসে উড়িয় দেন বা কড়া গলায় ধমকে থামিয়ে দেন৷ অনেকে বলেন,  এখন তবু সাংবাদিকেরা মুখ খোলার সুযোগ পান৷ আগে তো লিখিত বক্তব্য পাঠ করেই উঠে যেতেন প্রধানমন্ত্রী৷ এই যখন অবস্থা তখন কিভাবে সরকারের  কাজের জবাবদিহি চাইবো৷

এই যে বালিতে মুখ গুঁজে সব সহ্য করে নেওয়ায় অসংস্কৃতি চালু হয়েছে তাতে একদিন পুরো শরীর কবরে চলে যাবে নিশ্চিত৷ তা প্রতিরোধের কোনো উদ্যেগ আছে কী, আমি তো দেখতে পাচ্ছি না৷ বরং আমরা ব্যস্ত কোন মন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলেছি তা প্রকাশে৷ ভাব খানা এমন যেন মোরা দুটিতে প্রাণের সখা৷ মন্ত্রীদের বিশাল বহরের সফরসঙ্গী হওয়াতেই যেন সব সুখ৷

এই অপসংস্কৃতি থেকে সাংবাদিকদের বেরিয়ে আসতে হবে৷ যখন একজন সাংবাদিক শুধু ঠিকঠাক মত দায়িত্ব পালনের কারণে বিপদে পড়বেন তখন তার প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই তার পাশে দাঁড়াতে হবে, দাঁড়াতে হবে তার সহকর্মীদেরও৷ রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন বলে বিভেদে জড়িয়ে না পড়ে বরং সত্যের প্রশ্নে এক হতে হবে৷ সাংবাদিকদের যেসব সংগঠনগুলো আছে তাদেরও এক্ষেত্র ভূমিকা চাই৷ ভোট আর পিকনিকেই যেন সংগঠনগুলোর নেতাদের ভূমিকা শেষ হয়ে না যায়৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ