1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দমন পীড়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে দমন পীড়ন একটি ‘সংস্কৃতিতে' পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷ যারা ক্ষমতায় থাকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন পীড়নের মাধ্যমে মেকাবেলার পথ বেছে নেয়৷ এজন্য শুধু সরকার নয়, বিরোধী শক্তির ভূমিকা রয়েছে৷

ছবি: bdnews24

তারা মোটা দাগে বাংলাদেশের শাসকদের দুই ভাগে ভাগ করেন, শামরিক শাসক এবং নির্বাচিত৷ এই দুই ধরনের শাসকেরাই দমন পীড়নে রাষ্ট্রযন্ত্রকে যেমন ব্যবহার করেছেন, তেমনি তাদের দলকেও ব্যবহার করেছেন৷

বাংলাদেশের এই প্রজন্মের তরুণেরাও মনে করে রাজনৈতিক দমন পীড়নের সাংস্কৃতি সব পর্যায়েই ছড়িয়ে পড়েছে৷ এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এর বাইরে নয়৷ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে পেশিশক্তির প্রদর্শন করে৷ কেন তারা এটা করে? এই প্রশ্নের জবাবে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থী মঞ্চের সাবেক সমন্বয়ক এবং ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আবু রায়হান বলেন, ‘‘ছাত্ররাই সাধারণত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে৷ তাই এই প্রতিবাদী শক্তিকে তারা দমিয়ে রাখতে চায়৷ এটা তারা করে তাদের মূল রাজনৈতিক শক্তির স্বার্থে৷'' তিনি বলেন, ‘‘যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে সেই দলের ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখে৷''

বাংলাদেশে দুইজন সামরিক শাসক ছিলেন৷ ক্ষমতায় থাকাকালে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘‘জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ দুজনই ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাজনৈতিক দমন পীড়ন চালিয়েছেন৷'' এর বাইরে যারা নির্বাচিত তারাও দমন পীড়ন করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ রাজনীতির এই চরিত্রের প্রধান দু'টি কারণকে তিনি চিহ্নিত করেন৷ প্রথমত, যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পরিবর্তে দমন পীড়নের মাধ্যমে মেকাবেলা করে৷ দ্বিতীয়ত, বিরোধীদের রাজনীতির ধরন ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সহিংসতার সুযোগ করে দেয়৷ 

ড. শান্তনু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসে৷ কিন্তু মেয়াদ শেষে এই দলটি একক নির্বাচনের দিকে চলে যায়৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে তারা বিরোধীদের দমন পীড়ন করে৷ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত হয়ে আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ ঘটায়৷ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অব্যাহতভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দমন পীড়নের অভিযোগ করছে৷ দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন৷

অন্যদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ এই হামলা চালানো হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়৷ শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও নিহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী৷

রাজনৈতিক দমন পীড়নে শুধু রাষ্ট্রীয় নানা বাহিনী ও সংস্থাই নয়, আইন এবং কালা কানুনকেও ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায়৷ সামরিক শাসক এরশাদও এই দুই নেত্রী ও তাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন পীড়ন চালায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে৷

আফসান চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতিতে দমন ও সহিংসতা নিয়ে গবেষণাও করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি নুরের (ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর) কেসটা দেখি তার ওপর নয়বার আক্রমণ হয়েছে৷ তার ওপর আক্রমণ এখন হালাল পর্যায়ে চলে গিয়েছে৷ সরকার যখন আমলে নিল তখন তার ওপর আক্রমনের প্রতিবাদ হলো, তার আগে নয়৷ এখন নুরের ওপর আক্রমণকে ছাত্রলীগও খারাপ বলছে৷ এটা দমন পীড়নের একটা উদহারণ৷ আর রাজনৈতিক দমন পীড়নতো ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত৷ অল্প সংখ্যক মানুষ মূল ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত৷ তাদের মেসেজ যা সেভাবেই চলে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘এই দমন পীড়ন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটা একটা সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷ এককভাবে রাজনৈতিক দমন বলে কিছু নেই৷'' তার মতে, ‘‘শুধু রাজনৈতিক নয়, গোটা ব্যবস্থার মধ্যেই দমন পীড়ন হয়৷ শিশুরা পরিবারে দমন পীড়নের শিকার৷ নারী নির্যাতন হচ্ছে, এটাওতো দমন পীড়ন৷ সামাজিক পরিসরে হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়৷ রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দমন হচেছ৷ মোটমুটি আমরা দমন পীড়নকে একটা গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে দিয়েছি৷ যে যার যোগাযোগের শক্তির মাধ্যমে দমন পীড়ন চালায়৷''

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে দমন পীড়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আরেকটি রূপ প্রকাশ পায় রাজনৈতিক সহিংসতার মাধ্যমে, শক্তি প্রকাশের জন্য সব দলই এই কৌশল ব্যবহার করে আসছে৷ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরেও আঞ্চলিক এবং ব্যক্তির ক্ষমতা রয়েছে৷ দলের মধ্যে ক্ষমতার নানা ভাগ আছে৷ ফলে এই সহিংসতা দুই দলের মধ্যে যেমন হয়, তেমনি একই দলের মধ্যেও হয়৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে গত ৬ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষে ৬৩৪ জন নিহত হয়েছেন৷ এই সময়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে তিন হাজার ৮৯৪টি৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ