দরিদ্র দেশের মতো জার্মানিতে বস্তি নেই৷ তবে একটু খেয়াল করলেই এখানে চোখে পড়বে দরিদ্র আর গৃহহীন মানুষের অস্তিত্ব৷ অবশ্য দরিদ্রতম মানুষদেরও এখানে মেলে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শৌচাগার ও বর্জ্য নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুবিধা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি এমন একটি দেশ, কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে যে দেশের দরিদ্রতম বাসিন্দারাও পান নানা সুযোগ-সুবিধা৷ রাষ্ট্র থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে অন্যান্য অনেক অবস্থাপন্ন দেশের তুলনায় এখানে সামাজিক কল্যাণের নেটওয়ার্ক অনেক বেশি শক্তিশালী৷ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নিম্ন বেকারত্বের হার যা এখন শতকরা ছ'ভাগের কম, সেই সাথে জ্বালানি ও খাবারের দাম ইউরোপের অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম জার্মানিতে৷ কিন্তু এর পরও দারিদ্র মানুষ চোখে পড়বে জার্মানির পথেঘাটে৷
ফেডারেল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য সাপোর্ট অফ হোমলেস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জার্মানিতে সাড়ে আট লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন৷ এঁদের মধ্যে প্রায় আট লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে বা পরিচিতদের সাথে রাত কাটালেও বাকিরা থাকেন রাস্তায়, অর্থাৎ মোট গৃহহীনের ৬ ভাগ খোলা আকাশের নীচে রাত কাটায়৷ অন্যদিকে প্রায় সাড়ে চার লাখ শরণার্থির থাকার আইনি অধিকার রয়েছে, যদিও তাঁদের বেশির ভাগই থাকেন গণআবাসনে৷ তবে এ সব ক্ষেত্রে অনেকেই ভাড়া নেয়া সত্ত্বেও আবাসন থেকে বিতাড়িত হন৷
ইউরোপের বস্তিগুলো
ইউরোপের শহরগুলোর বস্তিতে তিন কোটিরও বেশি মানুষের বাস৷ এসব বস্তিতে নেই বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা৷
ছবি: FILIPPO MONTEFORTE/AFP/Getty Images
অমানবিক অবস্থা
বেশিরভাগ বস্তিতে এক ছাদের নীচে অনেকে বাস করেন৷ মাত্র চার বর্গমিটার এলাকায় তিন জন মানুষ গাদাগাদি করে থাকে৷ নেই বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার বা নিরাপত্তা৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্যারিসের অন্য রূপ
ইউরোপের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাম রোমা৷ অভিজাত শহর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি বস্তির ছবি এটি৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরের বস্তিতে রোমাদের সংখ্যাটাই বেশি৷ এদের বেশিরভাগই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বেকার৷
ছবি: DW/G. Ketels
ঘর হারানোর ভয়
আমাদের দেশের মতোই বেশিরভাগ বস্তি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে৷ তবে প্রধান শহরগুলোতে কিছু বস্তি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত৷ রোমারা এসব বস্তিতে খুব আশঙ্কার মধ্যে থাকে, কেননা তারা শ্রেণি বৈষ্যমের শিকার এবং যে-কোনো সময় তাদের বের করে দেয়ার ভয় দেখানো হয়৷
ছবি: Pablo Blazquez Dominguez/Getty Images
প্রদীপের নীচে অন্ধকার
ইউরোপকে সবসময় ধনসম্পদে পরিপূর্ণ এবং জীবনযাপনের জন্য ভালো স্থান বলে তুলে ধরা হয়৷ কিন্তু ফ্রান্স থেকে সার্বিয়া বা তুরস্ক সব জায়গাতেই কিন্তু বস্তি রয়েছে৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় বস্তিটি স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের কাছে অবস্থিত৷ ৪০ বছর আগে গড়ে ওঠা এই বস্তিতে বাস করেন প্রায় ৩০,০০০ মানুষ৷
ছবি: DW
বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা
জাতিসংঘের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে সাহারা অধ্যুষিত আফ্রিকায় মোট জনসংখ্যার ২৬.৬ শতাংশ বস্তিতে বাস করবে, যা বর্তমানের চেয়ে একটু বেশি৷ এশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫৭.৭ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করবে৷ সেই তুলনায় ইউরোপের দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ থাকবে বস্তিতে৷
ছবি: Mindjazz pictures
বৃত্ত থেকে বের হওয়ার উপায় নেই
বিশ্বের অন্যান্য বস্তির তুলনায় ইউরোপের বস্তিগুলোর মানুষ অবশ্য সুযোগ সুবিধা থেকে ততটা বঞ্চিত নয়৷ তবে বিশ্বের সব বস্তিতে একটা বিষয়ে মিল আছে আর তা হলো শিক্ষার আলো থেকে বস্তিবাসীরা বঞ্চিত৷ ফলে এরা কেউ এই দরিদ্রতা থেকে বেরিতে আসতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কণ্টকিত জীবন
ইউরোপের বস্তিগুলো কেবল রোমা সম্প্রদায় নয় অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাথা গোঁজার জায়গা৷ বিশেষ করে স্পেনে অর্থনৈতিক মন্দার পর অনেকেই বাসা ভাড়া এবং বাড়ি বন্ধকীর অর্থ শোধ করতে না পারায় বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছেন৷
ছবি: DW
গৃহহীন
ইটালির রাজধানী রোমের উপকণ্ঠে একটি শরণার্থী শিবিরে এই পরিবারটির বাস৷ আসলে একটা বস্তির আকার ও আয়তন কি হবে তা পরিমাপ করাটা কঠিন৷ তবে বরাবরই কর্তৃপক্ষ যা ঘোষণা করে তার চেয়ে বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে৷
ছবি: FILIPPO MONTEFORTE/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
আবাসন সংকটের একটা বড় কারণ সোশ্যাল হাউজিং প্রকল্প থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে আসা৷ ৩০ বছর আগে, কেবল দক্ষিণ জার্মানিতেই চার মিলিয়ন ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত আবাসন ব্যবস্থা ছিল৷ কিন্তু এখন পুরো জার্মানিতেই এ সংখ্যা এক দশমিক তিন মিলিয়ন৷ সাধ্যের মধ্যে থাকার জায়গা মেলা এখন কষ্টকর৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আবাসন খরচ৷ বিশেষ করে ছোট অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বেড়েছে অনেক৷ প্রায় ১৭ মিলিয়ন একজনের উপযোগী ঘরের বিপরীতে এখানে ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন এক ও দু'কামরার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে৷
যেসব শরণার্থীদের চাকরি নেই তাঁরা সোশ্যাল বেনিফিট পান না, যদি না অন্তত পাঁচ বছর ধরে তাঁরা জার্মানিতে থাকেন বা অন্তত এক বছর এমন চাকরি করেন, যাতে সোশ্যাল বেনিফিটের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়৷ কাজেই এ দু'টোর কোনোটিই যাঁদের নেই, তাঁরা বাধ্য হয় রাস্তায় থাকতে যা আবার জার্মানিতে অবৈধ৷
গৃহহীন মানুষরা প্রায়ই বড় শহরগুলোতে অবস্থান নেয়, কারণ বড় শহরে চাকরির সুযোগ বেশি৷ সেইসাথে বড় শহরগুলোতে পর্যটকও আসে প্রচুর যারা ভিক্ষা দিতে তুলনামূলকভাবে উদারহস্ত৷ জার্মানির জরুরি দাতব্য সেবা সংস্থা বানহফ্সমিশন-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কেবল বার্লিনের বিভিন্ন স্টেশনের আশেপাশে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার৷ জার্মানিতে শরণার্থীদের মধ্যে অন্তত ৬০ ভাগই এসেছেন রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ড থেকে৷
গৃহহীনদের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় এই শীতকাল৷ ১৯৯০ সাল থেকে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা গেছে ঠান্ডার কারণে, এই ধনী দেশ জার্মানিতেই৷
পৃথিবীর লজ্জা: শত কোটি গরিবের সমান ৬২ জন বড়লোক!
বিশ্বে ধনীর সংখ্যা কমছে, কিন্তু বাড়ছে দরিদ্র আর দারিদ্র্য৷ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৬২ ব্যাক্তির মোট সম্পদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের সমান!
ছবি: Colourbox/M. Shmeljov
পৃথিবীর লজ্জা
বিশ্বের মোট জনসংখ্যা এখন ৭৩০ কোটির মতো৷ এই ৭৩০ কোটির মধ্যে মাত্র ৬২ জনের টাকার জোরের কাছে বলতে গেলে সবাই-ই নত৷ সোমবার ‘এক শতাংশের অর্থনীতি’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে অক্সফাম জানিয়েছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে ধনী ৬২ ব্যাক্তির মোট সম্পদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের সমান!
ছবি: picture-alliance/AP Images/B. Curtis
নিরন্নের আর্তনাদ, ধনকুবেরের আস্ফালন
বিশ্বে কোটি মানুষ এখনো অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে৷ সিরিয়ায় তিনটি মাস প্রায় না খেয়ে থেকেছে কত নারী, শিশু! ঠিক এই সময়েই অক্সফাম প্রকাশ করেছে এই প্রতিবেদন৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
ধনী কমছে, ধনীর ধন বাড়ছে
পাঁচ বছর আগে বিশেষ মাপকাঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় যেখানে ছিল মোট ৩৮৮জন, একই মাপকাঠিতে সেই তালিকায় এখন স্থান পাচ্ছেন মাত্র ৬২ জন৷ এই হিসেব অনুযায়ী, ধনীর সংখ্যা যদিও কমছে, কিন্তু দরিদ্র মানুষ বা তাঁদের দারিদ্র্য কমছে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
গরিব আরো গরিব
এ সপ্তাহেই দাভোসে বসছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)-এর শীর্ষ সম্মেলন৷ গত বছর এই সম্মেলনের আগেই অক্সফাম জানিয়েছিল, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বের এক শতাংশ ধনী৷ এবার অক্সফাম বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের সঙ্গে অন্যদের ব্যবধান এক বছরে অনেক বেড়েছে৷সাড়ে তিনশ কোটি দরিদ্র মানুষের মোট সম্পদ আগে যা ছিল তার চেয়ে শতকরা ৪১ ভাগ কমেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ধনীর ধনসম্পদ বেড়েই চলেছে
আরেকটি বিষয়ও বেরিয়ে এসেছে অক্সফাম-এর এই গবেষণায়৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় স্থান পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৬২ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদের পরিমাণ ৪৪ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: Colourbox/M. Shmeljov
5 ছবি1 | 5
ফল্কার ভাগেনার/আরএন
ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশেও যে এত মানুষ গরিব, সেটা কি ভাবা যায়? লিখুন নীচের ঘরে৷