দীর্ঘ জাতীয় সংগীত গেয়ে সময় নষ্ট না করে চটজলদি ম্যাচ শুরু করাই ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন ফিফার উদ্দেশ্য৷ কিন্তু গ্যালারিতে দর্শকরা বাজনা তামার পরেও গান গেয়েই চলেছেন৷ ফলে বিশ্বকাপে ঠিক সময়ে ম্যাচ শুরু করা যাচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
৯০ সেকেন্ডের মধ্যে জাতীয় সংগীত শেষ করতে হবে – এটাই স্থির করে দিয়েছে ফিফা৷ কিন্তু সমস্যা হলো সব দেশের জাতীয় সংগীত তো সমান নয়! দেশ অনুযায়ী দেশাত্মবোধেরও তফাত রয়েছে৷ যেমন দক্ষিণ অ্যামেরিকার মানুষ নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ তাই তারা স্টেডিয়ামে এসে বেশ আবেগের সঙ্গে নিজেদের জাতীয় সংগীত গেয়ে চলেছেন৷ তাঁদের মধ্যে অনেকের কাছে ৯০ সেকেন্ড যথেষ্ট নয়৷ তাই মাঠে বাজনা থেমে গেলেও তারা দিব্যি গেয়ে চলেছেন৷ খেলোয়াড়রাও তখন আর ঘড়ি দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারেন না৷ খোদ ব্রাজিলের ক্যাপ্টেন টিয়াগো সিলভা বলেছেন, দর্শকদের সমবেত গান শুনলে বেশ প্রেরণা পাওয়া যায়৷ খেলার উপরেও তার প্রভাব পড়ে৷
লাখো কণ্ঠে ‘সোনার বাংলা’
বুধবার স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার প্যারেড ময়দানে লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘সোনার বাংলা’৷ আড়াই লাখের বেশি মানুষ সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ সম্পন্ন করেন৷ বিশাল এই আয়োজনের কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আমার সোনার বাংলা’
স্বাধীনতা দিবসে প্যারেড ময়দানে আড়াই লাখের বেশি মানুষ একত্রে গেয়ে ওঠেন ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷’’ জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, ২৫৪,৬৮১ জন সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ভোর থেকেই প্যারেড ময়দানে হাজির হতে থাকেন অগুনতি মানুষ৷ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এই আয়োজনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘বাঙালি ইতিহাস সৃষ্টি করে’
জাতীয় সংগীতের রেকর্ড গড়ার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি সবসময় ইতিহাস সৃষ্টি করে৷ বাঙালি আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তা
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচি নিয়ে কর্মতৎপরতা শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে৷ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ৷ ছবিতে প্যারেড ময়দানে জাতীয় সংগীত গাইছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘খুব ভালো লাগছে’
জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী রাজীব রুদ্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ক্লাসের বন্ধুরা একসঙ্গে এখানে এসেছি৷ খুব ভালো লাগছে, আমরাও সবার সঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়েছি৷ বিশ্ব রেকর্ডের অংশ হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Reuters
‘স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে’
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় উত্তরার ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব হাজী মতিন বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ জাতীয় সংগীত গাইলাম৷ নিজেকে আজ স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে৷ ভালো লাগছে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
অনলাইন আয়োজন
শুধু ঢাকার প্যারেড ময়দান নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনে অংশ নেন৷ আলাদা ওয়েবসাইট, ফেসবুকে ইভেন্ট এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়৷
ছবি: facebook.com
দ্বিতীয় উদ্যোগ
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ডিসেম্বরে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটা ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়নি৷ এবার সরকারই উদ্যোগ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর আয়োজন করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
রেকর্ড গড়ার জন্য যথেষ্ট
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ২০১৩ সালে রেকর্ড গড়ে ভারতের সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার৷ গিনেস বুকে স্থান করে নেয়া সেই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল সোয়া লাখের মতো মানুষ৷ সেই তুলনায় ঢাকায় বুধবারের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিগুনের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সিদ্ধান্ত জানাবে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ
লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার এই আয়োজন রেকর্ড গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণে সক্ষম হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেছে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ৷ তাদের স্বীকৃতির পর এই আয়োজন আন্তর্জাতিক রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
আসলে এই প্রবণতা নতুন নয়৷ ব্রাজিলের সমর্থকরা গত বছরই জাতীয় সংগীত গাওয়ার লাগামছাড়া প্রবণতা চালু করেছিলেন৷ তাঁদের দেখাদেখি চিলি ও কলম্বিয়ার সমর্থকরাও গানে গলা মেলাচ্ছেন৷ সত্যি বলতে কি, কোনো বাজনা ছাড়াই হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে গান শুনলে কার না রোম খাড়া হয়! প্রতিপক্ষ টিম ও তার সমর্থকরাও তখন কিছুটা চুপসে যায়৷ এবারের বিশ্বকাপে চিলির সমর্থকরা দু'টি ম্যাচে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন৷ কলম্বিয়ার সমর্থকরাও গ্রিসের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাজনা থামার প্রায় ৩০ সেকেন্ড পরেও গান চালিয়ে গেছেন৷ কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন ব্রাজিলের সমর্থকরা৷ তাঁদের প্রায় ৪ মিনিটের জাতীয় সংগীতকে ৯০ সেকেন্ডে কমানো কঠিন৷ অনেক কাটছাঁট করেও শেষ পর্যন্ত বাজনা থামার ১ মিনিট পর্যন্ত গান চলছে৷
ফিফা এই প্রবণতা লক্ষ্য করছে বটে, কিন্তু এখনই নিয়ম বদলানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তাছাড়া এই নিয়ে মাঠেও কোনোরকম গোলযোগ দেখা যায়নি৷ প্রতিপক্ষ টিম, কর্মকর্তা বা সমর্থকরা বিষয়টি লক্ষ্য করেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন৷