করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাই দর্শকহীন অলিম্পিকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও। অন্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ দর্শক থাকতে পারে।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দিনে টোকিও-তে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়েছে। অলিম্পিকে যোগ দিতে যাওয়া বেশকিছু খেলোয়াড়েরও করোনা ধরা পড়েছে। ফলে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না জাপানের প্রধানমন্ত্রী। টোকিও শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। লকডাউন না হলেও নাগরিকের চলাফেরায় রাশ টানা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে টোকিও-তে অলিম্পিক স্টেডিয়ামেও যেতে পারবেন না কোনো দর্শক। আগে ঠিক হয়েছিল, ৫০ শতাংশ দর্শক খেলা দেখতে যেতে পারবেন। তবে বিদেশি দর্শকরা আসতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল জাপান। বৃহস্পতিবার জাপান অলিম্পিকের প্রধান কর্মকর্তা সেইকো হাসিমোতো জানিয়েছেন, অলিম্পিক হলেও তা খুব সীমাবদ্ধ ভাবে আয়োজন করা হবে। করোনার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত তাদের নিতেই হয়েছে।
করোনা কেড়েছে তার অলিম্পিক স্বপ্ন
স্বপ্ন পূরণের জন্য ভালো চাকরিটা ছেড়েছিলেন৷ সপ্তাহে ছয়দিন অনুশীলন করেছেন টানা এক বছর৷ তবু টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া হচ্ছে না আরিসার৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
জাপান-সেরা আরিসা
২০১৯ সালে জাপানের জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের মিডল ওয়েট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আরিসা সুবাতা৷ দেশসেরা হয়ে ভেবেছিলেন, নিজেকে আরো তৈরি করে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেবেন৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
করোনাকে জয়ের মরিয়া চেষ্টা
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক হতে পারেনি৷ কিন্তু আসর এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় আরিসার কোনো সমস্যা হবার কথা নয়৷ দেশসেরা তিনি, সুতরাং ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে নিজের ভালো সম্ভাবনাই দেখছিলেন৷ সম্ভাবনা আরো উজ্জল করতে অনুশীলনে জোর দিয়েছিলেন প্রচণ্ড৷ তাতে করোনা তো কাছে আসেইনি, পারফর্ম্যান্সেও দেখা যাচ্ছিল উন্নতির ধারা৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্ন ধরতে চাকরি ছাড়া
২৭ বছর বয়সি আরিসা পেশায় নার্স৷ টোকিওর অন্যতম সেরা হাসপাতালে চাকরি করতেন৷ শুধু রোববার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষণের সময় বের করতে সেই চাকরিটা দিলেন ছেড়ে৷ ছোট একটা ক্লিনিকে চাকরি নিয়ে শতভাগ একাগ্রতা নিয়েই শুরু করলেন অলিম্পিকের পথে স্বপ্নযাত্রা৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্নের মৃত্যু
আগামী জুনে বাছাইপর্ব হবে, সেখানে উতরে গেলেই নিজের দেশের আয়োজনে অংশ নেয়া নিশ্চিত৷ কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব মনে হচ্ছিল না মোটেই৷ কিন্তু হঠাৎ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কাউন্সিল (আইওসি)-র ঘোষণা- যথেষ্ট সময় না থাকায় কোনো বাছাইপর্ব হবে না, সর্বশেষ র্যাঙ্কিং অনুযায়ী যারা এগিয়ে, এবার শুধু তারাই পাবেন অলিম্পিক মাতানোর সুযোগ৷ আরিসার অলিম্পিক-স্বপ্নের সমাধি হলো সেখানেই৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্ন দেখা কঠিন
২০১৯ সালে দেশসেরা হলেও ২০১৭ সালের র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া হবে না৷ এমন দুর্ভাগ্য মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে আরিসার৷ তবে বাস্তবতা মেনেই হতাশার কথা শোনালেন তিনি, ‘‘টানা এক বছর কঠোর অনুশীলন করেছি৷ তারপরও অংশ নিতে পারবো না জেনে আমি ভীষণ হতাশ৷’’ আরিসা জানেন, তিন বছর পর বয়স ত্রিশ ছাড়াবে, তখন প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নেয়া তার জন্য প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
5 ছবি1 | 5
টোকিও-তে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে অলিম্পিক হলেও পার্শ্ববর্তী ফুকুশিমা, মিয়াগি এবং শিজুওকায় এখনো অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের কথা ঘোষণা হয়নি। ফলে সেখানে এখনো ৫০ শতাংশ দর্শক স্টেডিয়ামে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছন অলিম্পিক কর্মকর্তারা। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে যেতে পারবেন। তবে প্যারা অলিম্পিকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বজায় থাকবে কি না, তা স্থির হবে ৮ অগাস্ট অলিম্পিক শেষ হওয়ার পরে। আগামী ২৩ জুলাই অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা।
গত বছরেই জাপানেঅলিম্পিকের আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও অলিম্পিক হবে কি না, তা নিয়ে বহু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। জাপানের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অলিম্পিক আয়োজনের বিরোধী ছিলেন। জাপানের নাগরিক সমাজের একাংশও অলিম্পিকের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত জাপান সিদ্ধান্ত নেয়, অলিম্পিক হবে, তবে নিয়মের কড়াকড়ি থাকবে। অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত সকলকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও টোকিওতে সংক্রমণ বৃদ্ধি আটকানো যায়নি। এই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।