কলকাতার পুজোয় এবার অন্যতম আকর্ষণ শ্রীভূমিতে বুর্জ খলিফার আদলে তৈরি প্যান্ডেল। সপ্তমীতে পুলিশ তার প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কলকাতার বুর্জ খলিফা এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর এই পুজো ঘিরে একাধিক সমস্যা। যার জেরে বুধবার, অষ্টমীতে পুলিশ ব্যারিকেড লাগিয়ে প্যান্ডেলের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। পুলিশের দাবি, ভিড়ের কারণেই এ কাজ করতে হয়েছে তাদের।
দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার আদলে কলকাতায় তৈরি হয়েছে বুর্জ খলিফা প্যান্ডেল। শ্রীভূমির এই পুজো মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো হিসেবে পরিচিত। প্রতিবারই তার পুজোয় কিছু না কিছু চমক থাকে। এবার তারা তৈরি করেছে চোখ ধাঁধানো বুর্জ খলিফা। বিশাল প্যান্ডেলে লাগানো হয়েছিল শক্তিশালী লেজার আলো। বহু দূর থেকে যাতে ঝকঝক করতে থাকে প্যান্ডেলটি। আর তাতেই বিতর্কের সূত্রপাত।
কলকাতার বনেদিবাড়ির পুজো, ঐতিহ্য ও ইতিহাস যেখানে মেশে
কোনো পুজোর বয়স চারশ বছর, কোনোটা তিনশ বা আড়াইশ। কলকাতার বনেদিবাড়ির পুজোর আকর্ষণই অন্যরকম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো
বনেদিবাড়ির পুজোর মধ্যে উত্তর কলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ দেবের শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো খুবই বিখ্যাত। ফেলে আসা সময়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী এই পুজো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সকলের জন্য দরজা খোলা
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরেই প্রথমবার দুর্গাপুজো হয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে। রাজা নবকৃষ্ণ দেব সেবার পুজোয় লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়ারেন হেস্টিংসকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো এখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এ শহরের অন্যান্য বিখ্যাত পুজোগুলোর মত লম্বা লাইন এবং ভিড় এই পুজো দেখতেও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শোভাবাজারের ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা
একচালা প্রতিমা। ডাকের সাজ। সিংহ ও অসুর অন্য পুজোর থেকে আলাদা। দেবীর টানা চোখ। এই মূর্তিই হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজো
কলকাতার পারিবারিক পুজোর ইতিহাসে সব চেয়ে পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজো। এই পরিবারের কাছ থেকেই তিনটি গ্রাম কিনেছিলেন জোব চার্নক। দক্ষিণ কলকাতার বেহালায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। সবকটিতেই দুর্গাপূজা হয়। আটচালা দুর্গা সেগুলোর অন্যতম। সাবর্ণ পরিবারের আটচালা পুজো আজ থেকে চারশ এগারো বছর আগে শুরু করেন লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মেজবাড়ির পুজো
আটচালা পুজোর পাশেই মেজবাড়ির পুজো। কয়েক শতক পুরনো এই পুজোয় পরিবারের লোকজন ছাড়া বাকিদের প্রবেশ নিষেধ। করোনাকালে এমন নিষেধাজ্ঞা কলকাতার বহু বনেদিবাড়িতেই বহাল আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পশুবলি বন্ধ, এখন প্রতীকী বলি
পশুবলি বন্ধ অনেকদিন। তবে বনেদিবাড়ির পুজোগুলোয় পশুবলির রেওয়াজ বহুকাল ধরেই চলে আসছে। নিয়ম মানতে তাই প্রতীকী বলি। সাবর্ণ পরিবারের বড়বাড়িতে পাঁঠার পরিবর্তে একটি চালকুমড়ো এবং মোষের পরিবর্তে পাঁচটি আঁখ একসঙ্গে বলি দেওয়া হয় এখন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রানি রাসমণির বাড়িতেও
হাড়িকাঠ চোখে পড়বে রানি রাসমণির বাড়ির পুজোতেও। এখানেও একসময় নিয়মিত পশুবলি হতো। এখন বন্ধ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রানি রাসমণির পুজো এখনো চলছে
এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা রানি রাসমণি স্বয়ং। ১৮৬১তে তার মৃত্যুর পরেও পরিবারের সদস্যরা মধ্য কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোডের এই বাড়িতে পুজো চালিয়ে আসছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পটলডাঙার বসুমল্লিকদের পুজো
পটলডাঙাকে অমর করে দিয়েছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। তার টেনিদা, প্যালারামরা পটলডাঙার ছেলে। পটলডাঙার আরেক আকর্ষণ বসুমল্লিক বাড়ির দুর্গাপুজো। দুইশ বছরের পুরনো। শুরু করেছিলেন রাধানাথ মল্লিক।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বসুমল্লিকদের দুইটি পুজো
১৮ এবং ২২ রাধানাথ মল্লিক লেনের দুটি বাড়িই বসুমল্লিক পরিবারের। দুটিতেই শতাব্দীপ্রাচীন দুর্গাপুজো চলে আসছে। বসুমল্লিকদের প্রথম পুজো চালু হয় ১৮ নম্বর রাধানাথ মল্লিক লেনের বাড়িতেই। এটা দ্বিতীয় বাড়ি। এখানে পরবর্তীকালে পূজা চালু হয়। উপরের ছবিতে দ্বিতীয় বাড়ির পুজো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হরিনাথ মুখোপাধ্যায়ের পুজো
পরিবারের সদস্যদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় তিনশ বছরের পুরনো এই পুজো। উত্তর কলকাতার রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের পিছনে এই বাড়িটিতে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন হরিনাথ মুখোপাধ্যায়।
উত্তর কলকাতার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটের এই বাড়ির দুর্গাপুজো দুইশ চল্লিশ বছরের পুরনো। চন্দননগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বৈষ্ণবদাস মল্লিক এই পুজোর সূচনা করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অন্যরকম প্রতিমা
বৈকুন্ঠনাথ মল্লিকের বাড়ির পুজোয় লক্ষ্মী এবং সরস্বতী আকারে কার্তিক-গণেশের থেকে বড়। এমনকী হর-গৌরীর থেকেও। এটাই এই পরিবারের পুজোর রীতি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নীলমণি সেনের পুজো
যশোরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নীলমণি সেন কলকাতায় আসেন ১৯ শতকে। ১৯১৩ সালে ফুলের কারুকাজ করা ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তবে সে আড়ম্বর আজ আর নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ সবই বর্ণহীন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুই হাতের দুর্গা
বিগত বছরগুলোর তুলনায় মূর্তির আকার আজ একটু ছোটো। রীতি মেনে সেনবাড়ির দুর্গার হাত দশটি নয়, দুটি। দুর্গামায়ের অভয়মূর্তি এ’বাড়িতে একশ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
16 ছবি1 | 16
শ্রীভূমি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে খুব দূরে নয়। রাতের বিমানবন্দরে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পাইলট অভিযোগ করেন, বুর্জ খলিফার আলোয় তাদের সমস্যা হচ্ছে। বিমানবন্দর চিনতে পারছেন না তারা। অভিযোগ সামনে আসার পর অবশ্য সুজিতের নির্দেশে প্যান্ডেলের শক্তিশালী লেজার আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আলো বন্ধ হয়েছে, কিন্তু মানুষের উৎসাহ কমেনি। করোনাবিধি শিঁকেয় তুলে হাজার হাজার মানুষ ওই প্যান্ডেলের বাইরে লাইন দিতে শুরু করেন। পুজো শুরুর আগে থেকেই বুর্জ খলিফা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা শুরু হয়। যার জেরে বিমানবন্দরে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকার পুজো দেখার ক্ষেত্রে যে করোনাবিধি তৈরি করেছে, তা-ও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে অষ্টমীতে ভিড় কমাতে প্যান্ডেলে ঢোকার প্রবেশপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গতবছর হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে পুজোর সময় কড়া করোনাবিধি আরোপ করা হয়েছিল। পুজো কমিটিগুলি তা মানতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এবার নিয়ম অনেক শিথিল। আর তারই সুযোগে সমস্ত নিয়ম উপেক্ষা করে মানুষ নেমে পড়েছেন রাস্তায়। পুজো দেখতে। যার জেরে গত দুই দিনে কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, আরো দুইদিন এই পরিস্থিতি চললে, করোনা সংক্রমণ আরো অনেকটাই বাড়ার সম্ভাবনা আছে। দ্রুত এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন ওয়াকিবহাল মহল।