দেখলে সাধারণ পোশাক-পরিচ্ছদ মনে হলেও আসলে কাঠের তৈরি৷ এক জার্মান শিল্পী এমন আশ্চর্য শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে এমনকি দর্শকের বিরক্তিরও পাত্র হচ্ছেন৷ ভাস্কর্যের গায়েও সেই পোশাক চাপানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইয়েসি স্ট্রিক্সনার জুতা, অন্তর্বাস, জ্যাকেট ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন৷ দেখতে হুবহু আসল মনে হলেও সেগুলি বেশ ভারি এবং পরারও উপায় নেই৷ কারণ সব পোশাকই কাঠের তৈরি৷ একটি জ্যাকেটের ওজন প্রায় ১২ কিলো৷ ইয়েসি বলেন, ‘‘অত্যন্ত শক্ত একটি উপকরণকেও আমি নরম হিসেবে দেখাতে পারি৷ কাপড়ের বদলে কাঠ দিয়ে পোশাক তৈরি করে মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে আমি খুব আনন্দ পাই৷’’
জার্মানির এই শিল্পী তার কাঠের তৈরি পোশাক শুধু কাপড়ের কাঠামো নকল করেন না, দৈনন্দিন জীবনের সারল্যও তুলে ধরেন৷ একটি রেনকোট তৈরি করতে ইয়েসির এক সপ্তাহ সময় লাগে৷ শিল্পীর হাতে কাঠের বড় টুকরো ধীরে ধীরে চূড়ান্ত রূপ পায়৷ সেই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ইয়েসি স্ট্রিক্সনার বলেন, ‘‘এই কাঠের টুকরোর মধ্যে কীভাবে আমি আমার বস্তুকে ঢোকাবো? কীভাবে সেটি ঝোলানো যাবে? পোশাকের ঝোলা অংশ কীভাবে দেখানো যাবে? প্রত্যেক কাপড়ই তো আলাদা হয়৷ রেনকোট যেমন কিছুটা তৈলাক্ত ও খাঁজে ভরা৷ আমি খেয়ালখুশি মতো কোনো খাঁজ চাপিয়ে দিতে পারি না৷ দর্শকের চোখে সেই ত্রুটি ধরা না পড়লেও সে অবশ্যই বুঝবে, কিছু একটা গোলমাল রয়েছে৷
যে শিল্পীর কাজ দেখে দর্শকরা বিরক্ত হন
02:49
ইতোমধ্যে আর্ট গ্যালারিগুলিও ২৯ বছর বয়সি এই শিল্পীর সৃষ্টিকর্মে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে৷ যদিও ইয়েসি স্ট্রিক্সনারের তৈরি কিছু শিল্পকীর্তি দেখে দর্শকদের অস্বস্তি হচ্ছে৷ বিশেষ করে অন্তর্বাস সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ইয়েসি বলেন, ‘‘একবার গ্যালারিতে এক নারী দর্শক প্রবেশ করে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে আমার সামনে বললেন, এ আবার কেমন ইনস্টলেশন! কারণ তিনি সেটিকে আসল অন্তর্বাস ভেবেছিলেন৷ প্রদর্শনীতে গিয়ে এমন কিছু দেখে তিনি লজ্জা পাওয়ায় আমি কিন্তু খুব খুশি হয়েছিলাম৷ মানুষ সেটিকে আসল অন্তর্বাস ভাবলে সেটাই তো আমার সৃষ্টির সাফল্য! আমার কাছে এমন প্রতিক্রিয়া সত্যি ইতিবাচক৷’’
তার তৈরি কাঠের পোশাক এমনকি পরার কাজেও লাগছে৷ জার্মান শিল্পী ফিলিপ লিয়রের তৈরি কংক্রিটের ভাস্কর্যগুলিকে ইয়েসি স্ট্রিক্সনারের তৈরি কাঠের পোশাক পরানো হয়েছে৷ আমস্টারডামের এক আর্ট গ্যালারিতে সেই শিল্পকর্মগুলি দেখার সুযোগ রয়েছে৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷