বাংলাদেশে বসেই বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখেছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল হক৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি উঠে এলো তাঁর কথায়৷
ছবি: REUTERS
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: এবার বিশ্বকাপটা কেমন হলো?
আমিনুল হক: আমার মনে হয়, রাশিয়া বিশ্বকাপটি অন্যান্য বিশ্বকাপের চেয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ছিল৷ আমরা জানি যে, গতানুগতিকভাবে যাঁরা বিশ্বকাপের দাবিদার, যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, এমনকি জার্মানির মতো দল, যারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, তারা আগেভাগেই বিদায় নিয়েছে৷ জার্মানি তো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে৷ স্বাগতিক হিসেবে রাশিয়া ভালো খেলেছে৷ আইসল্যান্ডের শেষটা ভালো না হলেও শুরুটা ভালো হয়েছে৷ পাশাপাশি বেলজিয়ামের অসাধারণ পারফরম্যান্স৷ এই দলটাকে তাদের গোল্ডেন ‘জেনারেশন বলা' হয়৷ ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে বাদ পড়েছে৷ ক্রোয়েশিয়ার মতো দল ফাইনালে উঠেছে৷ ফুটবলের এই যে পরিবর্তনের ধারা, সেটা ভালো লেগেছে৷ নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে দেখতে বিশ্ববাসী আগ্রহভরে অপেক্ষা করেছে৷ যদিও ফ্রান্স আগেও চ্যাম্পিনয় হয়েছে৷ আমার মনে হয়, এই বিশ্বকাপ থেকে ফুটবল নতুন কিছু পেয়েছে৷ এর অন্যতম হলো, আমরা জানি স্পেন, জার্মানি বা ব্রাজিল টিকিটাকা ফুটবল খেলে থাকে৷ তারা হয়ত বল ৭০ বা ৭৫ ভাগ সময় দখলে রেখেছে, কিন্তু যারা ২৫ বা ৩০ ভাগ সময় বল রেখেছে, তাদের অনেক দলও কিন্তু দিন শেষে জিতে গেছে৷ এবার কাউন্টার অ্যাটাকে কিন্তু প্রতিটি দলই সফলতা পেয়েছে৷
আমিনুল হক
This browser does not support the audio element.
এবারের বিশ্বকাপের কোন দিকটা আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে?
আয়োজন তো অবশ্যই৷ যে দেশেই এই আয়োজন হয়, ওই দেশের কালচার সেখানে থাকে৷ এবার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার যে বিষয়, সেটা হলো, দলগুলোর মধ্যে যে পার্থক্যটা, সেটা এবার অনেক কমে গেছে৷ আগে যেখানে একটি দলের মান ২০ হলে আরেকটি দলের মান ছিল ১৭ বা ১৮, এবার সেখানে আমাদের এশিয়ার দল বা আফ্রিকার দল, ল্যাটিন অ্যামেরিকার দল বা ইউরোপের দল কারো মধ্যেই পার্থক্য খুব বেশি ছিল না৷ এটা সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ বা ২০৷ বিশেষ করে এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপান তো খুবই ভালো খেলেছে৷
এবার তো বেশ কিছু বড় দল আগেভাগেই বিদায় নিয়েছে৷ বিশেষ করে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, এমনকি ব্রাজিলও প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি৷ কেন এমন হলো?
এটা হয়কি সবগুলো দেশেরই বড় প্লেয়াররা বিশ্বের নামি-দামি ক্লাবে খেলে থাকেন৷ ফলে সেখান থেকে এসে দলের অন্য প্লেয়ারদের সঙ্গে অ্যাডজাষ্ট করে টিম কম্বিনেশনে কিছুটা সময় লাগে৷ আমরা জানি, জার্মানি সব সময় পাওয়ার ফুটবল খেলে, রোবটিক ফুটবল খেলে, তবে এখন কিন্তু তাদের খেলার ধরনও বদলে গেছে৷ দেখেন সবশেষ ম্যাচে আমাদের দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে কাউন্টার অ্যাটাকে জার্মানিকে গোল দিলো সেটা কিন্তু খুবই দৃষ্টিনন্দন৷ সারা বিশ্ববাসী এটা অনেকদিন মনে রাখবে৷ এখন খেলাটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেমন ধরেন আর্জেন্টিনার আগে যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার দরকার ছিল, সেটা কিন্তু তারা খেলতে পারেনি, যে কারণে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে কোচ সাম্পাওলিকে টিম কম্বিনেশন করতে হয়েছে৷ তাঁর কাছে তো এটা কল্পনাই করা যায় না৷ আবার ব্রাজিলের সব বিভাগেই ভালো করার কথা ছিল৷ যেহেতু খেলার ধরন বদলে গেছে, সবাই ডিফেন্স ঠিক রেখে অ্যাটাকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে৷ সেখানে ব্রাজিলের ডিফেন্সে কিন্তু সমস্যা দেখা গেছে৷ ওদের ডিফেন্ডাররা উপরে উঠে গেলে আর নামতে পারেনি৷ স্পেন রাশিয়ার সঙ্গে ৭৫ ভাগ সময় বল দখলে রেখে খেলেছে৷ কিন্তু দিন শেষে রেজাল্ট নিতে পারেনি৷ ট্রাইব্রেকারে তারা হেরে গেছে৷
এবারের বিশ্বকাপের যা কিছু সেরা
আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় একটি মাত্র দল৷ সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জোটে একজনের ভাগ্যে৷ কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে এর বাইরেও তো স্মরণীয় অনেক কিছু থাকে৷ সেরকম বিষয়গুলো নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
বেশি গোল যে দলের
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল কোন দল করেছে, বলুন তো? বেলজিয়াম৷ হ্যাঁ, সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার আগে ১৪ গোল করে তারা৷ তারপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারানোয় সংখ্যাটি বেড়ে হয়ে যায় ১৬৷ এত গোল আর কোনো দল করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল
কোন দল কতটা আক্রমণাত্মক তা নির্ধারণের একটাই উপায় আর তা হলো কোন দল কত বেশি আক্রমণ করেছে সে হিসেবটা দেখা৷ সেই হিসেবে ব্রাজিলই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে৷ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে ২৯২টি আক্রমণ শানিয়েছে নেইমারের দল৷ তবে পরে ক্রোয়েশিয়া পেছনে ফেলে তাদের৷ ফাইনাল শেষে, অর্থাৎ ব্রাজিলের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলায় ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সংখ্যায় দাঁড়ায় ৩২২৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সবচেয়ে বেশি পাস
এখানে কারা এগিয়ে ইংল্যান্ড৷ মোট সাতটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৩৩৬টি পাস দিয়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Smith
সেরা গোলরক্ষক?
এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক কে? অনেকের নামই হয়ত উঠে আসবে৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচানো যদি মানদণ্ড হয়, তাহলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন মেক্সিকোর গুইলেরমো ওচোয়া৷ দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত চার ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৫টি গোল বাঁচিয়ৈছিলেন তিনি৷ তবে পরে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোই তাঁকেও ছাড়িয়ে যান৷ ৭ ম্যাচে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৭টি গোল৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়
নিন্দুকেরা তাঁর মাঠে গড়াগড়ি দেখতে দেখতেই হয়রান, অথচ পরিসংখ্যান বলছে নেইমার জুনিয়রই ছিলেন এবারে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ড৷ ব্রাজিল তো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে৷ তাই মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন নেইমার৷ ওই পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছেন মোট ২৭টি৷ এত শট আর কোনো ফরোয়ার্ড নিতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
সবচেয়ে পরিশ্রমী পেরিসিচ
ক্রোয়েশিয়া যে এবার বিশ্বকাপ মাতালো, তার মূল কৃতিত্ব যদি একজন খেলোয়াড়কে দিতে চান, কার কথা বলবেন আপনি? নিশ্চয়ই লুকা মদ্রিচ! সেমিফাইনাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার ছয়টি ম্যাচে সব মিলিয়ে ৬৩ কিলোমিটার দৌড়েছেন ৩৩ বছর বয়সি এই প্লে-মেকার৷ তবে ফাইনাল শেষে দেখা যায় তাঁকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন পেরিসিচ৷ ৭ ম্যাচে ৭২ কিলোমিটার দৌড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সেরা রক্ষণভাগ
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দলের রক্ষণভাগের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রোয়েশিয়াই সেরা৷ ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে মোট ৩০১টি ক্লিয়ারেন্স, ট্যাকল এবং সেভ করেছে ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
রামোসকে মনে রাখতে হবে যে কারণে
স্পেনের রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী সার্হিয়ো রামোস৷ তবে এবার শুধু রক্ষণের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন না রেয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক৷ আক্রমণ রচনাতেও ভূমিকা রেখেছেন অনেক৷ তাই বিশ্বকাপের অন্য সব খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন তিনি৷ এ আসরে মোট ৪৮৫টি পাস দিয়েছেন রামোস৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বেশি গোলের ম্যাচ
এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে রাশিয়ার ৫-০ গোলের জয় দিয়ে৷ স্পেন-পর্তুগাল ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচেও দেখা গেছে গোলের ছড়াছড়ি৷ পরে দু’টি ম্যাচে আরো বেশি গোল হয়েছিল৷ বেলজিয়াম-টিউনিশিয়া (৫-২) ও ইংল্যান্ড-পানামা (৬-১) ম্যাচে সাতটি করে গোল দেখা গেছে৷ ওই দু’টিই এবারের আসরের সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ৷
ছবি: Reuters/M. Childs
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি কার্ড
ম্যাচে খুব বেশি উত্তেজনা থাকলে বা লড়াইটা খুব জমজমাট হলেই সাধারণত খেলোয়াড়রা মেজাজ হারান৷ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তখন কঠোর হতে হয় রেফারিকে৷ তখন কার্ডও দেখাতে হয় বেশি৷ কিন্তু বেলজিয়াম বনাম পানামা ম্যাচটিতে সে অর্থে কোনো উত্তেজনাই ছিল না৷ তারপরও ম্যাচে মোট আটটি কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি৷ এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখানো হয়েছে সেই ম্যাচেই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস
বেশি পাসের প্রসঙ্গ এলে স্পেনের নাম আসবেই৷ এই বিশ্বকাপে যে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস হয়েছে, সেখানেও স্পেন আছে৷ কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়া৷ হ্যাঁ, স্পেন-রাশিয়া ম্যাচেই হয়েছিল সবচেয়ে বেশি পাস৷ সেই ম্যাচে দু’দলের খেলোয়াড়রা মোট ১২৩৫টি পাস দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
11 ছবি1 | 11
কয়েকটি বড় দল সমর্থকদের হতাশ করলেও যাদের ছোট দল মনে করা হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অনেকে কিন্তু এবার চমকে দিয়েছে৷ বিশেষ করে এশিয়ার জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা তো বিস্ময় জাগিয়েছে৷ এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন? দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি কমে আসছে?
অবশ্যই৷ আগেই তো বলছিলাম, এখন এশিয়া, আফ্রিকা বা ইউরোপ কারো সঙ্গে ব্যবধান অনেক বেশি না৷ সাড়ে ১৯ বা ২০৷ প্রত্যেকটি দেশই কিন্তু এখন ফুটবলের ধারাটা বদলে ফেলেছে৷ তারা অনেক বেশি ‘বৈজ্ঞানিক' ফুটবল খেলছে৷ আপনার যদি সামর্থ্য ভালো থাকে, তাহলে আপনি কিন্তু যে কোনো দলের সঙ্গে ফাইট করতে পারবেন৷ আমাদের জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছে৷ ইউরোপের দলগুলোর সঙ্গে তারা যেভাবে লড়াই করেছে তাতে কখনোই মনে হয়নি যে তারা আন্ডারডগ৷ বরং তাদের যে প্রফেশনাল ফুটবল সেটার উন্নতি হয়েছে অনেক৷
এবার এমন দু-তিনজন ফরোয়ার্ডের কথা বলুন, যাদের খেলা আপনাকে মুগ্ধ করেছে...
বেলজিয়ামের স্টাইকার হ্যাজার্ডের কথা বলতে পারেন৷ রাশিয়ার চেরিশেভ এবং গলভিন৷ বেলজিয়ামের লুকাকুর খেলা ভালো লেগেছে৷ আর এমবাপে তো অবশ্যই৷ তাঁর কথা বলতেই হবে৷
ডিফেন্সে এবার সেরা ছিলেন কারা? মধ্যমাঠে কার কার পারফরম্যান্স বিশেষভাবে আপনার নজর কেড়েছে?
মাঝমাঠে আমি একজনের কথাই বলবো, সেটা হল লুকা মদ্রিচ৷ সে বলতে গেলে একাই দলটাকে আজকে ফাইনালে তুলেছে৷ যদিও তার সঙ্গে রাকিটিচ আছে৷ তারপরও বিশেষভাবে মদ্রিচের কথা বলতেই হবে৷ আর ডিফেন্সে ইংল্যান্ডের স্টোনসের খেলা ভালো লেগেছে৷
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮-এর শিরোপা ঘরে তুলেছে ফ্রান্স৷ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
গোল্ডেন বল
রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় কে? কয়েকজনের নাম আসতে পারে৷ যেমন, বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড, ফ্রান্সের এমবাপ্পে কিংবা গ্রিসমান৷ কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন যিনি, তিনি লুকা মদ্রিচ৷ ক্রোয়েশিয়ান ‘নাম্বার টেন’ তাই এবার জিতেছেন গোল্ডেন বল৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Hertzog
গোল্ডেন বুট
ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে হেরেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে৷ এরপর তৃতীয় নির্ধারণী ম্যাচেও হেরেছে বেলজিয়ামের কাছে৷ এই দুই ম্যাচে কোনো গোল করেননি ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন৷ এমনকি সুইডেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের দিনও কোনো গোল পাননি তিনি৷ কিন্তু তার আগেই করে ফেলেছেন ছয় গোল, যা আর কেউ টপকাতে পারেননি৷ তাই তিনি জিতেছেন গোল্ডেন বুট৷
বলাই বাহুল্য এই কৃতিত্বের ভাগীদার একমাত্র ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার এমবাপ্পেই৷ ৭ ম্যাচে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন৷ একইসঙ্গে পেলের পর তিনিই একমাত্র টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
ফেয়ার প্লে
ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটি ঘরে তুলেছে স্পেন৷ রাশিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিলেও এই স্বীকৃতি সান্তনা হয়ে থাকবে টিকি-টাকাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Bogodvid
6 ছবি1 | 6
সেরা গোলরক্ষকের দৌড়ে কাকে এগিয়ে রাখবেন এবং কেন ?
ফ্রান্সের লরিসকে আমি এগিয়ে রাখবো৷ বিশেষ করে কোয়াটার ফাইনাল বা সেমিফাইনালে ও যে সেভগুলো করেছে সে কারণেই ফ্রান্স ফাইনালে উঠতে পেরেছে৷ আর ট্রাইব্রেকারের কথা বললে ক্রোয়েশিয়ার সুবাসিচের কথা বলতেই হবে৷ সে-ও দারুণ খেলেছে৷
সব মিলিয়ে রাশিয়াকে কি আয়োজক হিসেবে সফল বলবেন? কোন জায়গায় সফল? ব্যর্থতাইবা কোথায় ছিল বলে মনে করেন?
আমি তাদের সব জায়গায় সফল বলবো৷ যদিও আমি সেখানে নেই, তারপরও তাদের কোনো ব্যর্থতা আমার চোখে পড়েনি৷ আমি তাদের সফলই বলবো্৷
ভিএআর-এর অন্তর্ভূক্তি আপনি কি চোখে দেখছেন? এটা কি রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত কমাতে পেরেছে?
কিছুটা তো অবশ্যই পেরেছে৷ ভিএআর আসার কারণে কিন্তু রেফারিরা সমালোচনার উর্ধ্বে চলে গেছেন৷ যদিও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আছে৷ দেখেন, প্রথম রাউন্ডে যেভাবে ভিএআরের ব্যবহার হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে ভিএআরের ব্যবহার কিন্তু অনেকাংশেই কমে গেছে৷
অনেকে বলেছেন, ভিএআর কোনো কোনো ক্ষেত্রে খেলার গতিকে মন্থর করেছে৷ আপনি কি তাঁদের সঙ্গে একমত?
আমার মনে হয় না৷ কারণ, একটি সঠিক সিদ্ধান্ত একটা দলকে যেভাবে এগিয়ে দিতে পারে, আবার একটা ভুল সিদ্ধান্ত একটা দলকে ডুবিয়ে দিতে পারে৷ ভিএআরের কারণে কিন্তু রেফারির কোনো কনফিউশন হলে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছেন৷ এখন সেটা কারো বিরুদ্ধে গেলে তারা তো লস করবেই৷
এবার তো অনেক বেশি পেনাল্টি হয়েছে? এমন হলো কেন?
ভিএআরের কারণেই হয়েছে৷ আবার ভিএআরের বাইরেও হয়েছে৷ দেখেন, আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে মাসচেরানো যেভাবে একজন প্লেয়ারকে ডি-বক্সের মধ্যে ফেলে দিলো, সেটা মনে হচ্ছিলো প্যানাল্টি হবে৷ কিন্তু রেফারি সেটা দেননি৷ আবার ব্রাজিলের বিপক্ষে একজন হেড করতে গেলে তার হাতে বল লাগে৷ প্রকাশ্যে দেখা গেছে৷ কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেননি৷ কারণ তিনি বলেছেন, এটা সে ইচ্ছে করে লাগায়নি৷ আসলে মাঠে রেফারি কী ভাবছেন সেটার উপরই অনেক কিছু নির্ভর করে৷
২০২৬ বিশ্বকাপে অংশ নেবে ৪৮টি দল৷ এত বেশি দল কি বিশ্বকাপের আকর্ষণ বাড়াবে, নাকি আয়োজনটাকে বেশি দীর্ঘ এবং একঘেঁয়ে করে ফেলবে?
আমার মনে হয় একঘেঁয়ে করে ফেলবে৷ কারণ, ৩২টি দল অংশ নিলে কম্পিটিশনের যে লেভেলটা ছিল সেটা কমে যাবে৷ নতুন যারা আসবে, তাদের মধ্যে হয় উৎসাহটা বাড়বে৷ দেখেন ইংল্যান্ডের কাছে পানামা ৬ গোল খেলো৷ এই ধরনের ব্যবধান তখন বেড়ে যাবে৷ অনেক বেশি গোলের পার্থক্য দেখা যাবে৷ এতে আমার মনে হয়, সৌন্দর্য্য বাড়বে না, বরং নষ্ট করবে৷
দুর্দান্ত ফিনিশিং, মুহুর্মুহু আক্রমণ-পালটা আক্রমণ আর বিতর্কিত এক পেনাল্টি৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনি যা যা চান তার প্রায় সবই ঘটেছে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে৷ ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার এ ফাইনালের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল
মারিও মানসুকিচ (বাম থেকে পঞ্চম) চেয়েছিলেন বলটি বাইরে পাঠাতে৷ কিন্তু, প্রতিপক্ষের গ্রিসমানের ফ্রি কিকটি কিনা তাঁর মাথায় লেগেই ঢুকে গেল নিজের দলের গোল পোস্টে! ফাইনালের শুরুতে ক্রোয়েশিয়া দল বড় ধাক্কা খেয়েছে তাঁর এই আত্মঘাতী গোলে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি ক্রোয়েশিয়া
আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও হতাশা পেয়ে বসেনি এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়াকে৷ বরং ইভান পেরিসিচ চমৎকার এক গোল করে খেলায় সমতা ফেরান৷ আর সেটা ঘটেছে প্রথম গোলের দশ মিনিট পরেই৷
ছবি: Reuters/C. Recine
ভিএআর বিতর্ক
ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি, অর্থাৎ ভিএআর প্রযুক্তির সুবিধা আবার এগিয়ে দেয় ফ্রান্সকে৷ পেরিসিচ নিজ দলের ডি-বক্সের মধ্যে বলে হাত লাগিয়েছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করতে ভিএআর-এর সহায়তা নেন আর্জেন্টিনার রেফারি নেস্তঁর পিটানা৷ পিটানা টিভিতে রিপ্লে দেখে ফ্রান্সকে পেনাল্টি দেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া
গ্রিসমানের পেনাল্টি শটের গোল ফ্রান্সকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেয়৷ এবারের বিশ্বকাপে রীতিমতো বড় তারকা বনে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচকে পুরোপুরি বোকা বানান গ্রিসমান৷ এটা ছিল চলতি বিশ্বকাপে তাঁর চতুর্থ গোল৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
পগবাও আবার চেনালেন নিজেকে
ফাইনালে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল পা দিয়ে গোল করে সমালোচনার জবাব দিলেন পল পগবা৷ ফ্রান্সের বড় কোনো টুর্নামেন্টে এটা তাঁর তৃতীয় গোল এবং ইউরো ২০১৬ কোয়ার্টার ফাইনালের পর প্রথম গোল৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
উচ্ছ্বসিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসে প্রতিপক্ষ দল ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ এবং আয়োজক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে খেলা দেখেছেন৷ ফাইনালে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ইতিহাসের অংশ এমবাপ্পে
কিলিয়ান এমবাপ্পে (বামে) ফাইনালে দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করে ক্রোয়েশিয়ার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ করে দেন৷ ১৯ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় হচ্ছেন ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা প্রথম টিনএজার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
ক্রোয়েশিয়াকে উপহার
ফরাসি গোলরক্ষক উগো ল্যরিস (ডানে) ক্রোয়েশিয়াকে একটি গোল বলতে গেলে উপহারই দিয়েছেন৷ সতীর্থ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ব্যাক পাসে বল পেয়েছিলেন তিনি৷ মারিও মানসুকিচ ছুটে এসেছিলেন বল কেড়ে নিতে৷ তাঁকে কাটাতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন ল্যরিস৷বল নাগালে পেয়ে এক টোকাতেই ফরাসি গোলরক্ষককে বোকা বানান মানসুকিচ৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
হাওয়ায় ভাসছেন কোচ
দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ দিদিয়ে দেশঁ-কে এভাবেই শূণ্যে ছুঁড়ে দেন ফরাসি খেলোয়াড়রা৷ দেশঁ ছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী তৃতীয় ব্যক্তি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
সবই জিতলো ফ্রান্স!
ফরাসি খেলোয়াড়রা যখন বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরেন, তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো মস্কোর লুঝনিকি মাঠে৷ এবার গোটা আসরে ভালো খেলে বিশ্বকাপ জয় করেছে ফ্রান্স৷ আগামী চারবছরের জন্য তারাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন৷ ২০২২ সালে কাতারে অন্য কেউ কী পারবে ফরাসিদের বিজয় রথ থামাতে?