তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপি-তে গিয়ে তারা সাফল্য পাননি। দলবদলুরা কি আবার তৃণমূলে ফিরবেন?
বিজ্ঞাপন
সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্নটা ধেয়ে এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। দলত্যাগীরা ফিরতে চাইলে কি আপনি তাদের আবার নেবেন? মমতার সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, ''ফিরে আসুক না, কে বারণ করেছে। এলে স্বাগত।'' তারপরই দলবদলুদের ঘরে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন শুরু তৃণমূলে।
তবে দলের সকলে মুখ্যমন্ত্রীর মতো অতটা উদার হতে পারছেন না। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় তার অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন। টিভি ৯ চ্যানেলে তিনি বলেছেন, গ্রামের এক বয়স্ক মানুষ তাকে বলেছিলেন, দিদিকেই তারা ভোট দেবেন। তবে দিদিকে অনুরোধ, গদ্দারদের তিনি যেন আর দলে না ফেরান। তবে তৃণমূলে মমতার কথাই শেষ কথা। অতীতে দেখা গিয়েছে, তার কট্টর বিরোধী অনেক নেতাকেই দলে নিয়েছেন মমতা।
সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট প্রয়াত সোমেন মিত্র ও মানস ভুইঞা তৃণমূলে গেছেন। মানস এখনো তৃণমূলের সাংসদ। তিনি বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছেন। ফলে এবারও দলত্যাগীদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলতে মমতার অসুবিধা হয়নি। তবে ভোটের প্রচারে এই দলত্যাগীদের তিনি 'বিশ্বাসঘাতক, গদ্দার' বলে অভিহিত করেছিলেন। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বা পিকে বলেছেন, তৃণমূল থেকে ওই নেতারা যাতে চলে যান, সেই কৌশল নিয়েই তারা এগিয়েছিলেন। কারণ, এদের বিরুদ্ধে ভোটদাতাদের রাগ ছিল। তাই তাদের টিকিট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
ভোটের আগে তৃণমূল থেকে নেতা-মন্ত্রী মিলিয়ে অনেকেই দল ছেড়েছিলেন। তার মধ্যে প্রধান নাম ছিল সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক হাজার ৭০০-র বেশি ভোটে হারিয়েছেন। রাজীব জিততে পারেননি। তেমনই জিততে পারেননি তৃণমূলের সাবেক বিধায়ক ও দলবদলু প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, সব্যসাচী দত্ত, জিতেন্দ্র তিওয়ারিরা। ঘটনা হলো, শুভেন্দু, নিশীথ প্রামাণিক ও হিরণ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ জেতেননি।
বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ''তৃণমূল থেকে যারা এসেছিলেন, তারা অত্যাচারিত, অপমানিত হয়ে এসেছিলেন। মনে হয় না, তারা কেউ ফিরে যাবেন।''
তবে তৃণমূল সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, দলবদলুরা এখন অপেক্ষা করে দেখবেন। ফিরলে তারা কী পাবেন, সেটাও যাচাই করে নেবেন। বিজেপি-তে থাকলে তাদের কতটা লাভ হবে সেটাও দেখবেন। তারপর তাদের একটা অংশ আবার তৃণমূলে ফিরলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।