জার্মানিতে সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের সরকার ভেঙে গেল৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ও ‘ডিজেলগেট' কেলেঙ্কারির কারণে চাপে পড়ে আগাম নির্বাচন ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের বিধানসভার এক অখ্যাত সদস্য আচমকা দলবদল করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো রাজ্য সরকার৷ সেইসঙ্গে ‘ডিজেলগেট' কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ায় বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্টেফান ভাইল৷ পদত্যাগের ডাকের মুখে তড়িঘড়ি করে আগাম নির্বাচন ডাকলেন তিনি৷ আগামী জানুয়ারি মাসেই রাজ্য সরকারের মেয়াদ শেষ হতো৷ জার্মান নির্বাচনের ঠিক আগে এমন এক ঘটনার প্রেক্ষিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আচরণ ও অধিকার নিয়ে জোরালো তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য স্তরে সাধারণত জোট সরকার গঠিত হয়৷ বাভেরিয়া ছাড়া অন্য কোনো রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সহজে সরকার গড়ার ঘটনা বিরল৷ লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল সবুজ দলের সঙ্গে সরকার গড়েছিল৷ তবে রাজ্য বিধানসভায় মাত্র এক জন বাড়তি সদস্যের বলে সেই সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখেছিল৷ এবার জোটসঙ্গী সবুজ দলের এক সদস্য আচমকা দলত্যাগ করে বিরোধী সিডিইউ দলে যোগ দেওয়ায় সরকার সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো৷
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে গাড়ি নির্মাতা ফলক্সভাগেন কোম্পানির সদর দপ্তর৷ সেই সংস্থার পরিচালনার প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ আজকের ‘ডিজেলগেট' কেলেঙ্কারির অশনি সংকেত এই কোম্পানির আচরণেই পাওয়া গিয়েছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফলক্সভাগেন কোম্পানির ডিজেল গাড়ির সফটওয়্যারে কারচুপির প্রমাণ ধরা পড়ে৷ তা সত্ত্বেও ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এক ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী ফলক্সভাগেনের চাপে এ বিষয়ে নরম সুরে কথা বলেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বিরোধী সিডিইউ দল তাঁর পদত্যাগের ডাক দিয়েছে৷
এই অবস্থায় আগামী ১৫ই অক্টোবর আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্টেফান ভাইল৷ অর্থাৎ ২৪শে সেপ্টেম্বর জার্মান সংসদ নির্বাচনের ঠিক পরেই জার্মানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের এই নির্বাচন রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিতে পারে৷ চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবার সরকার গড়তে পারলে এবং তাঁর দল লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের নির্বাচনে জয়লাভ করলে সংসদের উচ্চ কক্ষে ম্যার্কেল-এর ইউনিয়ন শিবিরের ক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে৷ উল্লেখ্য, জনমত সমীক্ষায় ফেডারেল ও লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে এগিয়ে রয়েছে সিডিইউ দল৷
সবুজ দলের যে সদস্যের দলবদলের কারণে লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো, সেই এলকে টভেস্টেন-এর আচরণ নিয়েও তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ এক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নিজের আসন নিয়ে তিনি আদৌ অন্য এক দলে যোগ দিতে পারেন কিনা, সেই প্রশ্ন উঠে আসছে৷ এমন আচরণে আইনি ত্রুটি না থাকলেও নৈতিকতার বিষয়টি উঠে আসছে৷
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷