1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দলীয় অযোগ্য উপাচার্যদের হযবরল কাণ্ড

গোলাম মোর্তোজা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

একটি সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে তার মতাদর্শের পক্ষের লোকজনদের ক্ষমতায়ন করবেন,সেটা স্বাভাবিক৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কিছু ঘটবে, তেমনটা ভাবতে ভালো লাগলেও বাস্তবতা তা নয়৷

Bangladesch Studenten protestieren in Dhaka
উপাচার্যদের তৈরি হযবরল পরিস্থিতির কারণে নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে ছবি: bdnews24.com/S. Hossain

সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার এই দীর্ঘ সময়ে,তাদের পক্ষের শিক্ষকরা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন৷ আগের সরকারগুলোও তাদের পক্ষের-পছন্দের শিক্ষকদেরই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন৷ এই বাস্তবতায় এখন নতুন করে প্রশ্ন সামনে আসছে— কেন যে ‘দলীয় শিক্ষকদের উপাচার্য করা হয়েছে?'

কারণ কয়েকটি৷

আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুক্তচিন্তা-মতপ্রকাশ ও রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে৷ ধারণাটা ছিল এমন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরাসরি রাজনীতি নয়, মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করবেন৷ রাজনৈতিক দলের ভুল-ত্রুটি সংশোধনে ভূমিকা রাখবেন৷ উন্নততর চিন্তায় রাজনীতিকদের সমৃদ্ধ করবেন৷ স্বাধীন বাংলাদেশে সূচনা অনেকটা এমনই হওয়ার প্রত্যাশা ছিল৷ কিন্তু বাস্তবতা এমন ছিল না৷

সামরিক সরকারগুলো এমন শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল,যারা তাদের প্রতি অনুগত৷ কিন্তু সামরিক দুঃশাসনের কালেও শিক্ষকসুলক নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন উপাচার্যের সন্ধান মিলেছে৷ শিক্ষার্থীদের উপর সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী পদত্যাগ করেছিলেন৷ তারপর বিএনপি সরকারের সময়ও দলীয় বিবেচনায়ই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে৷

এখনকার দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যরা যা করছেন বা তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, পূর্বের উপাচার্য এমনটা করেননি বা তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠেনি কেন? 

কারণ, পূর্বে উপাচার্য দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় ছিল,তিনি প্রকৃত শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ কিনা৷ আওয়ামী লীগ -বিএনপি দুই দলের শিক্ষকদের মধ্যেই প্রকৃত শিক্ষক-শিক্ষাবিদ ছিলেন৷

উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু দলীয় পরিচয় বিবেচিত হতো না৷ বিএনপি সরকার এএসএম ফায়েজকে, আওয়ামী লীগ একে আজাদ চৌধুরী বা আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে শুধু দলীয় পরিচয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়নি৷তাঁরা শিক্ষক ও প্রশাসক হিসেবে যোগ্য বিবেচনাতেই নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির করে তাঁদের উপাচার্য হতে হয়নি৷ ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ নেতাদের কাছেও তাঁরা ক্ষমতা বৃদ্ধির তদ্বির করেননি৷ তাঁরা নিজ দলের মতাদর্শ বাস্তবায়ন বা পারপাস সার্ভ করেছেন বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে৷ শিক্ষকসুলভ মানসিকতা বিকিয়ে দালালসুলভ মানসিকতা ধারণ করেননি৷

এখনকার টাকা ভাগাভাগি বা নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত উপাচার্যদের ভেতরে শিক্ষকসূলভ নীতি-নৈতিকতা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত৷ তাদের আচরণ দলের কর্মী বা নিম্নশ্রেণির নেতার মতো৷তারা উপাচার্য হওয়ার জন্যে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন৷ রাজনৈতিক দলও সেই সুযোগে সবচেয়ে অযোগ্য ‘জ্বী হুজুর' প্রবণতার শিক্ষককে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে৷ এসব উপাচার্যকে রাজনৈতিক নেতারা যা বলেন তা তো করেনই, আগ বাড়িয়েও দৃষ্টিকটু পর্যায়ের অনেককিছু করেন৷

এমন অবস্থা তৈরি হওয়ারও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে৷ তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একটি লেখা থেকে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক বছরে এত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যে,অনেক শিক্ষক টানা কয়েক মাস ক্লাস নেওয়ার সুযোগ পান না৷ সিনিয়র শিক্ষকদেরও প্রতিদিন একটির বেশি ক্লাস নিতে হয় না৷ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে৷

অধিক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারত, যদি শিক্ষার অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো৷ ক্লাস নেওয়ার বাইরে শিক্ষকদের গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার সুযোগ ছিল৷ বাস্তবতা হলো, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেধা-যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি৷ মূলত ‘ভোট' বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শিক্ষক রাজনীতির নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার জন্যে৷ সেই বিজয় অর্জিত হয়েছে৷ তার বিনিময়ে শিক্ষা- শিক্ষকদের পরাজিত হতে হয়েছে৷ এসব শিক্ষক নামক ‘ভোট' নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের তদ্বির প্রাধান্য পেয়েছে৷ 

গোলাম মোর্তোজা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্বছবি: Golam Mortoza

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে ভয়াবহ দুর্নীতি-অনৈতিক অভিযোগ দৃশ্যমান হয়েছে৷ শিক্ষক নিয়োগে ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার টেলিফোন সংলাপ প্রকাশিত হয়েছে৷ নারীকেন্দ্রিক অনৈতিক অভিযোগে অভিযুকত হয়েছেন দলীয় শিক্ষক-উপাচার্য৷ শিক্ষকের সহায়তায় রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা অর্থের বিনিময়ে কর্মচারি নিয়োগে ভূমিকা রেখেছেন, প্রকাশ্য হয়েছে সেই অভিযোগ৷

প্রাথমিক, মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক সব পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, হচ্ছে মূলত অর্থের বিনিময়ে৷ একদিকে দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য-অদক্ষ-অনৈতিক-দুর্নীতিসম্পৃক্ত শিক্ষক-উপাচার্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সয়লাব, অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ! আজকে শিক্ষাব্যবস্থার যে করুণচিত্র দৃশ্যমান হয়েছে, আগামীতে তা আরো প্রকট হবে সে বিষয়ে  কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়৷

একটি কথা বলে শেষ করি৷ প্রশাসনে দল, শিক্ষায়ও দল দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দিলে সমস্যা ছিল না, যদি দলীয় শিক্ষকদের ভেতর থেকে যোগ্যকে বেছে নেওয়া হতো৷ বেছে নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে অযোগ্যকে৷ অযোগ্যরা উপাচার্যের মতো এত বড় বা গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব ধারণ করতে পারছেন না৷ ফলে হযবরল পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছেন৷ পরিণতিতে নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে৷ 

 প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ