1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজনীতি একাডেমিক পরিবেশের ক্ষতি করছে’

২ আগস্ট ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ‘হাতাহাতি'-র ঘটনা নজিরবিহীন উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মন্তব্য করেছেন যে, দলীয় রাজনীতির কারণে একাডেমিক পরিবেশের অবনতি ঘটেছে৷

Bangladesch Dhaka - Studenten und Lehrer geraten aneinander während eines Treffens des Dhaka University Senat
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলের সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ইতিহাস বিভাগের বিশিষ্ট এই অধ্যাপক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সামাল দেবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের সঙ্গে হাতাহাতি করতে পারেন না৷

একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারেন না৷ উভয় দিক থেকেই বিষয়টি নিন্দনীয়৷ বলেন, এটিই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশের কতটা অবনতি ঘটেছে৷ ‘‘এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, গত কয়েক বছরে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি৷ দলীয় ভোটার নিয়োগ হয়েছে৷'' বলছিলেন ড. হোসেন৷

গেল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয়৷ সেনেটে কোনো শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় এ নির্বাচনের বিরোধিতা করে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী সেখানে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান৷ মল চত্বরের পাশে মূল ফটক বন্ধ থাকায় তা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন তারা৷ এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে৷ মূল ধারার গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অনেকগুলো ছবিও প্রকাশিত হয়৷

‘দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দলে তাদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করতে এ কাজটি করেছেন’

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ বলেন, গত ২৭ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন, ডাকসু নির্বাচন বন্ধ৷ অথচ ডাকসুতে নির্বাচিত পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি থাকার কথা সেনেটের এই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে৷ তাই এই নির্বাচনের উপযোগিতা নিয়ে প্রতিবাদ যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ এ কারণে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ওপর চড়াও হয়েছেন৷

‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাখতে ডাকসুর বিকল্প নেই৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক৷ অথচ দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দলে তাদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করতে এ কাজটি করেছেন৷'' এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ‘ভয়ানক' বলে মনে করেন তিনি৷

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন  মনে করেন, সেনেটে বর্তমান উপাচার্য প্যানেলের নির্বাচন নজিরবিহীনভাবে একটি বেআইনি কাজ৷ ‘‘নিবন্ধিত স্নাতকদের নির্বাচন করা হয়নি৷ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়নি৷ কেন করা হয়নি তার ব্যাখ্যা উপাচার্য দেননি, চানওনি৷''

অসম্পূর্ণ সেনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের মূল চেতনার পরিপন্থি বলে মত তাঁর৷

বর্তমান উপাচার্য শুরু থেকেই ‘বেআইনি' কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘সাড়ে চার বছর সাময়িক নিয়োগে তিনি কাজ করে গেছেন৷ তারপর ২০১৩ সালে একটি লোকদেখানো নির্বাচন করলেন৷ ১০৫ জনের সেনেটে  সদস্য ছিলেন মাত্র ২৫ জন৷ এবারো তিনি একই কাজ করলেন৷''

‘গত কয়েক বছরে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, দলীয় ভোটার নিয়োগ হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবার আগেই এই প্যানেল নির্বাচনেরও সমালোচনা করেন তিনি৷ বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ আগস্ট৷

নিবন্ধিত স্নাতক প্রতিনিধি নির্ধারণ না করে সেনেটে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের মধ্যেই৷ শনিবারের এই সভা আটকাতে হাইকোর্টে রিট আবেদনও করা হয়েছিল৷ স্থগিতাদেশও দিয়েছিলেন আদালত৷ কিন্তু পরে আপিল বিভাগ সভা অনুষ্ঠিত হবার পক্ষে আদেশ দেন৷

আর কোনো প্যানেল না থাকায় বর্তমান উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন ও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন মো. আব্দুল আজিজের তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত হয়৷

এ সব বিষয়ে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আরেক মেয়াদে তিনি যেন নির্বাচিত না হতে পারেন সেজন্য ষড়যন্ত্র চলছে৷ ‘‘একটা চক্রান্ত হচ্ছে তা তো স্পষ্ট৷ তারা তো আদালতে গেছেন৷ একটা অংশ বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে৷ আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে৷ এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি৷''

গত ২৭ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ আছে৷ হঠাৎ শনিবার কেন ছাত্রছাত্রীরা সেনেট ভবনের সামনে প্রতিবাদ শুরু করল তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান আরেফিন সিদ্দিক৷ ‘‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের প্রায়ই আলোচনা হয়৷ কিন্তু হঠাৎ করে প্যানেল নির্বাচনের দিন তাদের কেন ডাকা হলো, কেন পাঠানো হলো, তা তদন্ত কমিটি দেখবে৷''

Arefin Siddiq - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

‘বহিরাগত' শিক্ষার্থীরাই ঘটনায় জড়িত বলে তিনি দাবি করেন৷ ‘‘ কিছু বহিরাগত স্টুডেন্ট সেখানে আগে থেকেই ছিল৷ তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে৷'' বলছিলেন উপাচার্য৷ তবে বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই চট করে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না বলেও জানান৷ 

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন অবশ্য উপাচার্যের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন৷ তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থীই সেদিন বহিরাগত ছিলেন না৷ ‘‘বানোয়াট কথা৷ ওখানে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ ৩০ থেকে ৪০ জন ছিল৷'' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বহিরাগত ছিলেন কোন কোন শিক্ষক৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে আন্দোলন করছি না৷ আর সেদিনই আন্দোলন করেছি বিষয়টি তাও নয়৷ আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন করছি৷ সেদিনের বিষয়টি চোখে পড়েছে সবার৷''

ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তাতে দলীয় শিক্ষকদেরই রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তুহিন বলেন, সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি বা দলীয় নন এমন শিক্ষকদের রাখা হয়নি৷ এই কমিটি কোনো শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিলে তা মানা হবে না বলেও জানান তিনি৷

আপনার কোনো মন্তব্য আছে? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ