পার্থ-অর্পিতা গ্রেপ্তার। অনুব্রত ও তার সঙ্গীদের জেরা চলছে। জেরা করা হচ্ছে সস্ত্রীক অভিষেককে। এই পটভূমিকায় দিল্লিতে মমতা-মোদী বৈঠক।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটের সময় তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠক হওয়ার কথা। সাড়ে ছয়টায় মমতা যাবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই প্রথমবার তার সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। সময় বের করতে পারলে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলেও যাবেন। রোববার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক। এর আগেও দিল্লি এসে অনেকবারই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা অতীতে বহুবার অভিযোগ করেছেন, মোদী-মমতার রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে। ব্রিগেডের জনসভা থেকে সিপিএম সারদা নিয়ে মোদী-মমতা সমঝোতার অভিযোগ করেছে।
এবারের পরিস্থিতি
কিন্তু অন্যবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি আলাদা। পার্থ-অর্পিতার একের পর এক সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি। বুধবারও তারা শান্তিনিকেতনে গিয়েছিল এরকমই কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালাতে। অর্পিতার বাড়ি থেকে ৫০ কোটি টাকা ও প্রচুর গয়না উদ্ধার হয়েছে। পার্থকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড় চলছে।
এসএসসি কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী গ্রেপ্তার, বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসএসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার। তার দাবি, পার্থই টাকা রাখতে বলেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুক্রবার সকাল থেকে জেরা
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা পৌঁছে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। পার্থ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে শুরু হয় জেরা ও তল্লাশি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা
গ্রেপ্তার করার আগে ২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা করে ইডির অফিসাররা। শুধু পার্থের বাড়ি নয়, মোট ২০টি জায়গা তল্লাশি চালান ইডি-র কর্মকর্তারা। প্রায় ৯০ জন ইডি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকেন। উপরের ছবিতে কলকাতার নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার
তল্লাশির সময় অভিনেত্রী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। টাকা অর্পিতার শোয়ার ঘরের আলমারিতে চটের বস্তায় রাখা ছিল। অর্পিতা ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্থই তার কাছে টাকা রেখেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাতভর টাকার হিসাব
ইডি-র অফিসাররা ব্যাংক থেকে দশটি টাকা গোনার মেশিন ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। সারারাত ধরে টাকা গোনা হয়। দেখা যায়, ২২ কোটি টাকা আছে। তাছাড়া ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না ও প্রচুর ডলার পাওয়া যায়। বেশ কিছু নথিপত্রও নিয়ে গেছে ইডি। অর্পিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপরের ছবিতে অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীসের টাকা
আদালতে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতা এসএসসি-তে বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। তিনি অন্যতম চক্রান্তকারী। তার বাড়িই ছিল নিয়োগের আখড়া। সেই নথিপত্র ইডি পেয়েছে। মন্ত্রীর নামের সরকারি খামও পাওয়া গেছে। অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে, টাকাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। তিনি এনিয়ে কিছুই জানেন না। ইডি এখন অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা নিয়েও আলাদা মামলা করতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই অর্পিতা?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাছাড়া তিনি নেল আর্ট করতেন। পার্থর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ফোনে অর্পিতা সারাদিন কথা বলতেন বলে অভিযোগ। তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত। এই পুজোর সঙ্গে পার্থও য়ুক্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন অর্পিতার মা
মেয়ের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার মা মিনতি বলেন, ‘‘বাবা-মা যা চাইবে ছেলেমেয়ে কি সেটাই করবে? সেরকম হলে তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম। ওর কথা খবরে শুনেছি। তবে অর্পিতা এই কাজ করেছে কি না, সেই সত্যাসত্যও বিচার করা হবে।’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থ হাসপাতালে
গ্রেপ্তার করার পর পার্থকে নিজেদের হেফাজতে রাখে ইডি। তারপর আদালতে পার্থ জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তখন আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। এসএসকেএম হাসাপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ইডি অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির দাবি মেনে
ইডি পরে কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, পার্থকে কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু বিচারপতি বলেন, কল্যাণীর এইমসের উপর তার ভরসা নেই। পরে তিনি নির্দেশ দেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তিনিকেতনে পার্থর বাড়ি?
শান্তিনেকতনে ছয়টি বাড়ি পার্থর বলে অভিযোগ উঠেছে। তারমধ্যে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বলেছেন, একটি বাড়িতে পার্থর আসা-যাওয়া ছিল। একটি সাত বিঘের জমিও পার্থর বলে অভিযোগ। তবে সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, তারা খোঁজ না করে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন এসএসসি কেলেঙ্কারি হয়। পরীক্ষা দিয়ে যারা উঁচু স্থান পেয়েছে, তাদের চাকরি না দিয়ে, পয়সা দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম বরিষ্ঠ মন্ত্রী। মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামেশাই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে রাজ্যের নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থকে গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূলের বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ হলে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে এসএসসি চাকুরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন। বিকাশরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া হলো, ''পার্থ হচ্ছেন দাবার ঘুঁটি, ইডির উচিত হরিশ চ্যাটার্জি রোডে তল্লাশি করা। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে।'' তার দাবি, ''ইডি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ধরবে, সেদিন পুরো দুর্নীতি সামনে আসবে।'' সিপিএম কর্মীরা এখন বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Abp Photo/Sudipta Bhowmick
বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসএসসি নিয়ে বিক্ষোভ-মঞ্চে যান। তিনি টুইট করে পার্থ ও অর্পিতা নিয়ে সোচ্চার হন। দিলীপ ঘোষও তাই। কংগ্রেসও এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
শুধু পার্থই নয়, বুধবার অনুব্রত মন্ডলের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি হয়েছে। অনুব্রতকেও সিবিআই জেরা করেছে, আবার করতে পারে বলে সূত্র জানাচ্ছে। অনুব্রতকে কয়লাকাণ্ড ও গরুপাচারের অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা প্রশ্ন করেছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে।
অভিষেক ও তার স্ত্রীকেও নিয়মিত জেরা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মূলত কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়েই তাদের জেরা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্বকে অনুরোধ করে এসেছিলেন যে, এখন মোদী-মমতা বৈঠক হলে ভুল বার্তা যাবে। তাই প্রধানমন্ত্রী যেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না করেন। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধ রাখা হয়নি।
পার্থ-কাণ্ডে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পথে বিরোধীরা
প্রতিদিনই কলকাতার রাস্তা দেখছে একের পর এক মিছিল। বুধবার তিনটি মিছিল করেছিল বামেরা। বৃহস্পতিবার ছিল বিজেপির মিছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপির মিছিল
বৃহস্পতিবার মিছিল করে বিজেপি। বিরাট মিছিল কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যায়। হাজার হাজার বিজেপি কর্মী যোগ দিয়েছিলেন মিছিলে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গেরিলা মিছিল
বুধবার শহরের তিন প্রান্ত থেকে মিছিল করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পৌঁছায় বাম রাজনৈতিক দলগুলির মিছিল। একটি মিছিল আসে হাওড়া থেকে, একটি পার্ক সার্কাস এবং একটি শিয়ালদহ থেকে।
ছবি: Payel Samanta/DW
মিছিলের মুখ
শাসকদল এবং পার্থের বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়ে পথে নেমেছিলেন বামপন্থি নেতৃত্ব।
ছবি: Sukhomoy Sen/NurPhoto/picture alliance
অধীরের নিন্দা
পার্থ-কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। কলকাতার রাস্তায় তারাও মিছিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মিছিলে পার্থ-অর্পিতা
পার্থ-অর্পিতাদের মুখোশ পরে মিছিলে যোগ দেন বিজেপি কর্মীরা। তাদের গায়ে লেখা 'চোর'।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যোগ দিয়েছেন মিছিলে। মিছিল শেষে বক্তৃতাও করেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শহরে জ্যামজট
মিছিলের জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউয়ের মতো ব্যস্ত রাস্তাতেও গাড়ি আটকে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে নিত্য যাত্রীদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের তৎপরতা
অন্যবারের মতো মিছিল আটকায়নি পুলিশ। তবে শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা খোলার ব্যবস্থা করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মিছিলে স্লোগান
মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও স্লোগান ওঠে। তার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মন্ত্রী নন পার্থ
বৃহস্পতিবারই পার্থকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে দল থেকেও তাকে সাসপেন্ড করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
11 ছবি1 | 11
মমতার চেষ্টা
পার্থ-অর্পিতার বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি ও সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পত্তির খোঁজ পাওয়ার পর তৃণমূল থেকে পার্থকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার মন্ত্রীপদও গেছে।
কিন্তু তারপরেও সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছেন, যা সামনে এসেছে, তা কিছুই নয়। কালীঘাটের বাড়িতে তল্লাশি না হলে আসল জায়গা বাদ থেকে যাবে। কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে।