দলের মধ্যেও কোণঠাসা ম্যার্কেল
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সময়টা ভালো যাচ্ছে না৷ জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে চতুর্থবার শপথ নিতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷ অবশেষে মহাজোট সরকার গঠন করা সম্ভব বলেও বার বার তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার সরাসরি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন৷ অন্য শরিক এসপিডি দল ইউনিয়ন শিবিরের ‘অরাজকতা' তুলে ধরে জোট ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে৷ ফলে জোট সরকারের অস্তিত্ব নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে৷ মাত্র এক বছরের মধ্যে এই সরকারের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেল কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন, সে বিষয়েও জল্পনাকল্পনা চলছে৷ সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকটের ফলে তাঁর কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷
জোট সরকারের মধ্যে এমন দুরবস্থা সত্ত্বেও সিডিইউ দলের নেত্রী হিসেবে ম্যার্কেল এতকাল অন্তত প্রকাশ্যে কোনো বিরোধিতার মুখে পড়েননি৷ মঙ্গলবার সেই অঘটনও ঘটলো৷ সিডিইউ ও সিএসইউ সংসদীয় জোটের নেতা হিসেবে বিদায় নিতে হলো ফল্কার কাউডারকে৷ গত ১৩ বছর ধরে ম্যার্কেলের ছায়াসঙ্গী হিসেবে তিনি আস্থা অর্জন করেছিলেন৷ ম্যার্কেলের নানা সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল৷ নির্বাচনের আগে ম্যার্কেল সংসদ সদস্যদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, দলের নেতা ও চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি আবার কাউডারকে সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে পেতে চান৷ কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাঁর সেই ইচ্ছা সরাসরি অমান্য করে অখ্যাত এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে সেই পদে বেছে নিলেন৷ এই ঘটনাকে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ এমনকি এর ফলে ম্যার্কেলের পতনের প্রক্রিয়া শুরু হলো বলেও মনে করছেন অনেকে৷
মঙ্গলবারের ঘটনার পরেও ম্যার্কেল নিজে সংকটের সময় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আচরণ থেকে বিচ্যুত হননি৷ তিনি বলেন, গণতন্ত্রে হারজিত আছেই৷ সংসদীয় দলের নবনির্বাচিত নেতা রাল্ফ ব্রিংকহাউসের সঙ্গেও সহযোগিতার আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
সিডিইউ ও সরকারি জোটের মধ্যে অন্তত প্রকাশ্যে এমন সুর শোনা না গেলেও বিরোধী দলগুলি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, এভাবে কর্তৃত্ব হারানোর ফলে ক্ষমতায় ম্যার্কেলের দিন শেষ হতে চলেছে৷ উদারপন্থি এফডিপি দলের শীর্ষ নেতা ম্যার্কেলকে এই অবস্থায় আস্থা ভোটের পরামর্শ দিয়েছেন৷ সবুজ দলের শীর্ষ নেতা অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন যে, ম্যার্কেল এই ধাক্কা সামলে নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন৷
২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পর থেকেই ম্যার্কেল চাপের মুখে রয়েছেন৷ বিশেষ করে এএফডি দলের অভাবনীয় উত্থানের ফলে রক্ষণশীল দলগুলি তাদের সমর্থন হারিয়ে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ বাভেরিয়ার সিএসইউ দল এই ঘটনার জন্য ম্যার্কেলের উদার শরণার্থী নীতিকে দায়ী করে আসছে৷ মঙ্গলবারের ভোটাভুটির সময় সম্ভবত তাদের সেই বিরোধিতা কাউডারের পতন তরান্বিত করেছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)