দলে বিদায়ী ভাষণে গণতন্ত্রের বিপদের কথা বললেন বাইডেন
২০ আগস্ট ২০২৪
ডেমোক্র্যাটদের ন্যাশনাল কনভেনশন(ডিএনসি)তে বলতে ওঠার পরই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চোখে জল। বললেন, গণতন্ত্রের সামনে বিপদের কথা।
বিজ্ঞাপন
বাইডেন যখন বলতে ওঠেন, তখন ডিএনসি-তে যোগ দেয়া দলের সমর্থকরা বলতে থাকেন, 'থ্যাংক ইউ বাইডেন'। তাদের হাতে ধরা ছিল পোস্টার। তাতে লেখা 'লাভ ইউ বাইডেন'। কয়েক মিনিট ধরে চলে এই দলের কর্মীদের এই স্লোগান। আবেগতাড়িত বাইডেনের চোখে জল চলে এলো। এরপর দলের কর্মীদের কাছে তার বিদায়-ভাষণ শুরু করলেন বাইডেন।
মাসখানেক আগেই বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তিনি চান, কমলা হ্যারিস প্রার্থী হোন। তারপর দলের এই সম্মেলন হচ্ছে। এই সম্মেলনের গুরুত্ব হলো, দল যে একজন প্রার্থীকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে, তা দেখানো। সেজন্যই এই সম্মেলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই বিদায়-ভাষণ দিতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বাইডেন।
বাইডেন যা বললেন
বাইডেন দেশের গণতন্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের সামনে বিপদ স্পষ্ট। ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন অতি দক্ষিণপন্থিরা উৎসাহিত হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাইডেন বলেছেন, ''ট্রাম্প তো পুটিনের সামনে ঝুঁকে পড়েন। আমি কখনো তা করিনি। কমলা হ্যারিসও করবেন নাা।'' তার অভিযোগ, ''ট্রাম্প দেশের জন্য প্রাণ দেয়া সেনার অপমান করেছেন।''
বাইডেন বলেন, ''অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। যখন জিতবে, তখনই শুধু বলবে, দেশকে ভালোবাস, এটা হয় না।''
বাইডেন জানিয়েছেন, ''অ্যামেরিকায় ঘৃণারও কোনো স্থান নেই।''
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসলে কতটা ক্ষমতা?
ওভাল কার্যালয়ে যিনি বসেন, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন- সাধারণ মানুষের ধারণা এমনই৷ আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ কারণ, সরকারের অন্যান্য বিভাগেরও বলার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ken Cedeno/abaca/picture alliance
মার্কিন সংবিধান যা বলছে
একজন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান৷ কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগ তার দায়িত্বে থাকে, যার কর্মীসংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি৷ তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন প্রয়োগ করা তার দায়িত্ব৷
ছবি: bildagentur-online/picture alliance
ভারসাম্য রক্ষা
নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে৷ এরা একে অপরের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে৷ প্রেসিডেন্ট চাইলে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ তবে সেগুলো নিশ্চিত করতে সিনেটের অনুমোদন লাগবে৷ সিনেটের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নিয়োগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Evelyn Hockstein/File Photo/REUTERS
কংগ্রেসকে জানাতে হয়
দেশ কেমন চলছে তা পর্যায়ক্রমে কংগ্রেস জানানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেন্টের৷ বাৎসরিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তব্যে এটা করেন তিনি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
চাইলেই ‘না’ বলতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি বিল অনুমোদন না করে কংগ্রেসে ফেরত পাঠাতে পারেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি চান, তাহলে বিলটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াও কার্যকর করতে পারেন৷ এখন অবধি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়া এক হাজার পাঁচশ ত্রিশটি বিলের মধ্যে মাত্র ১১২টি কার্যকর করেছে সিনেট৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP/Getty Images
ক্ষমতার ধূসর দিক
সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি পুরোপুরি বোঝাতে পারে না৷ ‘পকেট ভেটো’ নামের একটি চর্চা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেটির প্রয়োগ কোনো বিলের ক্ষেত্রে করা হলে কংগ্রেসের কিছু করার থাকে না৷ সহস্রাধিকবার এই পন্থার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা৷
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
নির্দেশনা আইন হিসেবে কাজ করে
সরকারি কর্মীদের কোনো কাজ নির্দিষ্ট পরিধি অবধি করার নির্দেশনা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ ‘নির্বাহী নির্দেশগুলো’ আইনের মতোই৷ এগুলোর প্রয়োগে অন্য কোনো অনুমতির দরকার হয় না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেস চাইলে পাল্টা আইনের অনুমোদন দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন৷
ছবি: Ronen Tivony/ZUMA Press/IMAGO
কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর উপায়
প্রেসিডেন্ট চাইলে অন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে৷ কিন্তু সেগুলো সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ‘নির্বাহী সমঝোতার’ মাধ্যমে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কংগ্রেস আপত্তি না তোলা অবধি এ ধরনের সমঝোতা কার্যকর থাকে৷
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
মার্কিন সেনা কোথায় যাবে নির্ধারণের ক্ষমতা
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অবশ্য সশস্ত্র সংঘাতে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: HORST FAAS/AP/picture alliance
চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ
যদি একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো অপরাধ করেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা ঘটেছিল৷ তবে তারা কেউই অভিযুক্ত হননি৷ প্রেসিডেন্টের উপর চাপ প্রয়োগে কংগ্রেসের নানাবিধ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
তার সাফল্যের কথাও তুলে ধরেছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, ''দেশের উন্নতির পথে একটা অসাধারণ চার বছর সময় আমরা কাটিয়েছি। অ্যামেরিকার অর্থনীতি এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি। মানুষের রোজগার বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হয়েছে।''
বাইডেন তার প্রশাসনের প্রশংসা করে বলেছেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলির রূপায়ণ হয়েছে। তার দাবি, ট্রাম্পের আমলে কোনো কাজই হয়নি।
তার দীর্ঘ ভাষণের শেষে বাইডেন বলেছেন, ''অ্যামেরিকা, আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি।'' তার মতে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো, অ্যামেরিকার আত্মাকে রক্ষা করার লড়াই। সেই লড়াইয়ে তিনি কমলা হ্যারিসের পাশে আছেন।
বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে
ডেমোক্র্যাটদের এই সম্মেলন যেখানে হচ্ছে, তার কাছে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দেখান। তারা একটি প্রতিরোধ ভেঙে ঢুকে পড়েন। পুলিশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করে।
বাইডেন বলেছেন, ''বিক্ষোভকারীদের কথায় একটা যুক্তি আছে। দুই পক্ষেই প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে।''
ধন্যবাদ জানালেন হ্যারিস
কমলা হ্যারিস এর আগে বলেন, তিনি বাইডেনের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবেন।
কমলা বলেন, ''আমি আমাদের অসাধারণ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রচার শুরু করতে চেয়েছিলাম। তার ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও সারা জীবন ধরে দেশসেবার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।''