দল দিয়ে ইসলামের বিচার করা যাবে না: মাওলানা গাজী আতাউর রহমান
৬ জানুয়ারি ২০২৩
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিবের মতে, সত্যিকারের ইসলামি দল হলে একদল অন্য দলের প্রাণনাশের চেষ্টা করত না৷ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি তাই ‘রাজনৈতিক চরমপন্থী' দল৷
আলোচক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুছবি: DW
বিজ্ঞাপন
ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশো-তে আলোচক হিসেবে ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু৷
নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের বলেন, ‘‘লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবে৷ আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে লাভ নেই৷ জনগণ চাইলে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব৷''
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মতবাদ, মতাদর্শ, ধর্মীয় স্টিগমা থেকে বেরিয়ে অধিকারভিত্তিক রাজনীতির কথা বলছেন তারা৷ তার কথায়, বাংলাদেশের মানুষ একধরনের মধ্যপন্থাকে পছন্দ করে৷ তাই তারা কট্টরপন্থা চান না৷
মুসলিম অধ্যুষিত দেশ এবং ইউরোপের দেশগুলোকে বিশ্লেষণ করে অধিকারভিত্তিক রাজনীতির কথা বলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু৷ মালয়েশিয়া, মিশর, তুরস্ক, টিউনিশিয়ার উদাহরণ দেন তিনি৷
তার কথায়, ‘‘মতাদর্শের থেকে উন্নয়ন, বিচার ও মানুষের অধিকারে ফোকাস করা উচিত৷''
এই প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিবের মত, সত্যিকারের ইসলামি দল হলে একদল অন্য দলের প্রাণনাশের চেষ্টা করত না৷ তাই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি মধ্যপন্থী নয়৷
মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের বলেন, ‘‘দল দিয়ে ইসলামের বিচার করা যাবে না৷ দলের জন্য ইসলাম দায়ী না৷ সংগঠন দায় নিতে পারে৷'' আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিকদের আশরাফ আতরাফ চিন্তা করা যাবে না৷ ইসলাম রাষ্ট্রের সব নাগরিকের অধিকারের সমান৷
মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের দাবি, ‘‘বাংলাদেশে তারা কোনো পক্ষে নেই৷ তাই কোনো পক্ষ তাদের উত্তেজিত করতে চায় না৷ তাদের রাজনীতির দর্শন হলো সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা৷''
নির্বাচনের আগে ধর্মীয় দলগুলোর গুরুত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন , ‘‘ভোট এলে হিজাব তসবি পরে পোস্টার ছাপানো হয়৷ মসজিদ মাদ্রাসায় দানের পরিমাণও বাড়ে৷ ইসলামিক দল যারা করেন, তারাও মন্দির-প্যাগোডায় যান৷ ধর্মটা ভোটে মানুষের ফেভার নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়৷ ইসলামিক দলগুলোও ভাবে কোন দলের কাছে গেলে বেশি আসন পাওয়া যায়৷ কারণ রাজনীতির মূল জায়গা ক্ষমতা৷ দোষটা নীতিহীনতার, ক্ষমতাপ্রাপ্তির লোভ৷ ইসলামের কোনো দায় নেই৷ ইসলামকে জুড়ে দেয়া হয়েছে৷ ''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ধর্ম বিষয়টা সংবেদনশীল৷ সংখ্যালঘু না হলে তাদের সমস্যা বোঝা সম্ভব নয়৷''
অন্যদিকে মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের মত, ‘‘ধর্মীয়ভাবে আলাদা পরিচয় হলেও সবাই আমাদের জাতির অংশ৷ ধর্মীয় ক্ষুদ্র অংশকে বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত৷’’
আরকেসি/এফএস
দুনিয়ার কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে৷ এদের মধ্যে বিজেপি, জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: DW/O. S. Janoti
জার্মানি
ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন বা খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ জার্মানির সবচয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বেশিরভাগ সময় এই দলটি জার্মানির ক্ষমতায় রয়েছে৷ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্যাথলিক মতাদর্শের দলটি বর্তমান বিশ্বে নিজেদের উদারনীতির জন্য পরিচিত৷ দলটি মধ্য-ডানপন্থি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. Rietschel
অস্ট্রিয়া
এই দেশে ডানপন্থি আন্দোলনের নেতা ভিয়েনার মেয়র কার্ল লুগারের নেতৃত্বে ১৮৯৩ সালে গঠিত হয় ক্রিস্টিয়ান সোশ্যাল পার্টি(সিএসপি), বর্তমান নাম অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি (ওভিপি)৷ খ্রিস্টান ধর্মভিত্তিক রক্ষণশীল এই দলটি বর্তমানে ক্ষমতায়, যাদের নীতি অভিবাসনবিরোধী৷
ছবি: Herbert Neubauer/APA/picture alliance
নেদারল্যান্ডস
দেশটির ধর্মভিত্তিক দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক আপিল (সিডিএ)৷ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিএ’র এর মূল আদর্শ: খ্রিস্টান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানাডা
কুইবেক রাজ্যে ২০০০ সালে রোমান ক্যাথলিকদের সহযোগিতায় গঠিত হয় ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি৷ পার্টির মূলনীতিতে বলা হয়েছে,‘‘অর্থোডক্স খ্রিষ্টীয় মতবাদ ও কুইবেক জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ই হবে দলের প্রধান লক্ষ্য৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/C. Roussakis
অন্যান্য দেশে ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি
ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, আলবেনিয়া, হাঙ্গেরি, ইটালি, সুইজারল্যান্ড, লেবানন, নরওয়ে, সিরিয়া, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সার্বিয়া, রোমানিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, বলিভিয়া, হাইতি এসব দেশেও খ্রিস্টান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি রয়েছে৷
ছবি: Alessandra Tarantino/AFP
তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি
‘একে’ পার্টি নামে পরিচিত রক্ষণশীল এই দলের নেতা রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ ২০০৩ সাল থেকে এর্দোয়ানের দল দেশ পরিচালনা করছে৷ ২০০১ সালে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য এবং ইসলামি পরিচয় দিয়ে মুসলমান ভোটারদের সমর্থন পেলেও দলটি নিজেদের ইসলামভিত্তিক দল বলতে নারাজ৷ এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, বিরোধী দমনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Murat Cetinmuhurdar/AP/picture alliance
ভারত, বিজেপি
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘ পরে জনতা পার্টি নামে দল গঠন করে৷ ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টিতে মিশে যায় জনসংঘ৷ ১৯৮০ সালে সাবেক জনসংঘ সদস্যরা বেরিয়ে এসে ভারতীয় জনতা পার্টি গঠন করে৷ ১৯৯৬ সালে কট্টরপন্থি দলটি বৃহত্তম দলে পরিণত হয়৷ বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা, গুজরাট দাঙ্গায় উস্কানিসহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে দলটির বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Kumar
ভারত, শিব সেনা
১৯৬৬ সালে কার্টুনিস্ট বাল ঠাকরে এই হিন্দুত্ববাদী এই রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন৷ তাদের আধিপত্য মূলত মুম্বই কেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দলটির৷ শিব সেনা দলের প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বর্তমানে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
নেপাল
আশি শতাংশেরও বেশি হিন্দু অধ্যূষিত দেশ নেপাল৷ সনাতন ধর্ম সমিতি, নেপালি জনতা পার্টি (বিজেপির নেপালি সংস্করণ) প্রধানতম ধর্মীয় দল,যা হিন্দুদের আম্ব্রেলা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
পাকিস্তান
জামাত ই ইসলামী পাকিস্তানের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল৷ পাকিস্তানকে একটি ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে, শরিয়া আইন দিয়ে দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে ১৯৪১ সালে দলটির প্রতিষ্ঠা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (আগের নাম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ)৷ ১৯৭৭ সালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷ ২০০১ সালে বিএনপি’র সাথে জোট গঠন করে পার্লামেন্টে স্থান করে নেয় জামায়াত৷ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এই দলের শীর্ষ অনেক নেতা৷ এছাড়া বিভিন্ন সময় নাশকতার অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে৷