‘অ্যাশ ওয়েডনেসডে' উপলক্ষ্যে বুধবার জার্মানির রাজনৈতিক দলের নেতারা দল ও দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন৷ সিডিইউ নেত্রী দলীয় স্বার্থের বদলে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবার ডাক দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কিছু অংশে কার্নিভাল মরসুম শেষ হলো বুধবার৷ এবার প্রতীকী উপবাসের পালা৷ ঐতিহ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলি এদিন খোলামেলা পরিবেশে নেতাদের ভাষণের ব্যবস্থা করেছিল৷ তাঁরাও মন খুলে একে অপরকে খোঁচা দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন৷ বলা বাহুল্য, এ বছর সরকার গড়ার কঠিন প্রচেষ্টার মাঝে দিনটি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে৷ প্রস্তাবিত মহাজোটের শরিক দলগুলি অবশ্য একে অপরকে তেমন আক্রমণ করেনি৷ অন্যদিকে বিরোধী দলগুলি বড় দলগুলিকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করতে ছাড়েনি৷
গত কয়েক মাসের অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিডিইউ নেত্রী আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে লাগাতার নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি, তার বদলে জার্মানির মানুষ এবার স্থিতিশীল সরকার চায়৷'' তাঁর মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব দলকে আত্মসমালোচনা করতে হবে৷ তাছাড়া দলের বদলে দেশের স্বার্থের কথা বেশি করে ভাবতে হবে৷ এসপিডি দলকে ছাড় দেবার প্রশ্নে দলের মধ্যে সমালোচনাও উড়িয়ে দেন তিনি৷ ম্যার্কেল বলেন, কোয়োলিশন চুক্তির মধ্যে সিডিইউ দলের নীতিগুলির যথেষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে৷ যেমন নতুন করে সরকারি ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ এসপিডি দলের কোনো নেতা অর্থমন্ত্রী হলেও তাঁকে সেই নীতি মেনে চলতে হবে৷ তাঁর আচরণের প্রতি কড়া নজর রাখা হবে৷
কোণঠাসা এসপিডি দলের মনোনীত শীর্ষ নেত্রী আন্দ্রেয়া নালেস সরাসরি ম্যার্কেলের আধিপত্য খর্ব করার কথা বলেন৷ তাঁর মতে, ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করতে এসপিডি দলের প্রয়োজন৷ এই অবস্থায় নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে পারলে এসপিডি দল আবার প্রথম স্থান পেতে পারে৷ তবে তার জন্য দলের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনের উপর জোর দেন তিনি৷ উল্লেখ্য, আগামী এপ্রিল মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন৷
বাভেরিয়ায় সিএসইউ দল গত নির্বাচনে বেশ কিছুটা সমর্থন হারানোর পর আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে চাইছে৷ রাজ্যের আগামী মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারসহ দলের নেতারা জ্বালাময়ী ভাষণে নিজেদের রক্ষণশীল চরিত্র তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন৷ বিশেষ করে এএফডি দলের বাড়বাড়ন্ত কমিয়ে তাদের সমর্থকদের আবার দলে টানতে চান তাঁরা৷
বিরোধী এফডিপি, এএফডি, সবুজ ও বাম দলের নেতারা সরকার গড়ার বর্তমান প্রচেষ্টার নানা দিকের সমালোচনা করেন৷ বিশেষ করে দেশের নেত্রী হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কড়া সমালোচনা করেন অনেকে৷ এএফডি নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার ১২ বছর পর ম্যার্কেল জমানার সমাপ্তির ডাক দেন৷
জার্মানির বর্তমান মন্ত্রিসভা
জার্মানিতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর নেতৃত্বে ২০১৮ সালে নতুন মহাজোট সরকারের ১৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে৷ এই নিয়ে ম্যার্কেল নিজে চতুর্থবার চ্যান্সেলর হলেন৷ তিন শরিক দলের নতুন-পুরানো অনেক মুখ সেখানে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
চতুর্থ বারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল (৬৩)৷ একাধিক সংকট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পেরেছেন তিনি৷ তবে তাঁর অবস্থান আগের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ কোয়ালিশন চুক্তি অনুযায়ী কার্যকালের মাঝামাঝি সময়ে পর্যালোচনার অবকাশ রয়েছে৷ সম্ভবত তখনই ম্যার্কেল-এর ভবিষ্যৎ স্পষ্ট হয়ে যাবে৷
ছবি: AFP/Getty Images
হর্স্ট সেহোফার
বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের শীর্ষ নেতা হর্স্ট সেহোফার-ও (৬৩) নিজের দলে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা আগেই হয়েছিল৷ নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি৷ অভিবাসনের প্রশ্নে দলের কড়া অবস্থানের প্রতিফলন বজায় রেখেছেন সেহোফার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Geber
ওলাফ শলৎস
শহর-রাজ্য হামবুর্গের মুখ্যমন্ত্রী ও এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শলৎস (৫৯) নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রী এবং ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷ শান্ত স্বভাবের ধীর-স্থির এই মানুষটিকে ঘিরে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল দেখা যাচ্ছে৷ বিগত সরকারের বাজেট-ঘাটতি দূর করার সাফল্য ধরে রেখে তাঁকে বেশ কিছু কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
হাইকো মাস
এসপিডি দলের নেতা হাইকো মাস (৫১) বিগত সরকারে আইন ও বিচারমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ নতুন সরকারে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন৷ এসপিডি দলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণ এই নেতার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার কদর রয়েছে৷ পূর্বসূরি সিগমার গাব্রিয়েল জনপ্রিয়তার যে মাত্রা ছুঁয়েছিলেন, হাইকো মাস সেই অসাধ্য সাধন করতে পারবেন কিনা, সে দিকে সবার নজর থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Thys
পেটার আল্টমায়ার
সিডিইউ দলের মধ্যে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন নেতা পেটার আল্টমায়ার (৫৯) অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন৷ বিগত সরকারে তিনি চ্যান্সেলরের দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন৷ সিডিইউ দলের মন্ত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Borrs/NDR
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
মহাজোট সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেই থেকে গেছেন সিডিইউ দলের নেত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন (৫৯)৷ ম্যার্কেলের উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর নাম বারবার উঠে এলেও এখনো সেই ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না৷ ইংরাজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী এই নেত্রী আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Kappeler
ইয়েন্স স্পান
তরুণ নেতা ও ম্যার্কেল-এর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ইয়েন্স স্পান (৩৭) নতুন সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন৷ মন্ত্রিসভায় তাঁকে অন্তর্গত করার জন্য প্রবল চাপ ছিল৷ মাত্র ২২ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷ ২০১৫ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
গ্যার্ড ম্যুলার
নতুন সরকারেও উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সিএসইউ দলের গ্যার্ড ম্যুলার (৬৩)৷ নিজের বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী এই মন্ত্রী উন্নয়ন সাহায্যের ক্ষেত্রে বিশ্বমঞ্চেও যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ বিশেষ করে আফ্রিকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনা প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
কাটারিনা বার্লে
এসপিডি নেত্রী কাটারিনা বার্লে (৪৯) বিগত সরকারে পরিবার, বয়স্ক, নারী ও তরুণ প্রজন্মের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন৷ নতুন সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন৷ ব্রিটিশ বাবার সুবাদে তাঁর সে দেশের নাগরিকত্বও রয়েছে৷ ফলে প্রস্তাবিত সরকার তিনিই একমাত্র বিদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ফ্রানৎসিস্কা গিফাই
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে এসপিডি দলের জনপ্রিয় নেত্রী ফ্রানৎসিস্কা গিফাই (৩৯) এক ধাক্কায় বার্লিনের সমস্যায় জর্জরিত নয়ক্যোলন এলাকার মেয়র থেকে পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হয়েছেন৷ কড়া হাতে তিনি অরাজকতা দূর করে এলাকার উন্নয়নের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
আন্দ্রেয়াস শয়ার
সিএসইউ দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর এবার নতুন মন্ত্রিসভায় পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আন্দ্রেয়াস শয়ার (৪৪)৷ ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/S. Babbar
হুব্যার্টুস হাইল
দু-দুবার এসপিডি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর এবার নতুন সরকারে শ্রমমন্ত্রী হয়েছেন হুব্যার্টুস হাইল (৪৬)৷ সামাজিক সুরক্ষাসহ এসপিডি দলের মূল অঙ্গীকারগুলি রূপায়নের ক্ষেত্রে এই পদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ এই মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অঙ্ক সবচেয়ে বড়৷
ছবি: Imago/photothek/M. Gottschalk
আনিয়া কারলিচেক
নতুন সরকারে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন সিডিইউ দলের নেত্রী আনিয়া কারলিচেক (৪৬)৷ ২০১৩ সাল থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ সংসদে দলের চিফ হুইপ হিসেবে সক্রিয় থাকলেও তিনি জনমানসে তেমন পরিচিত নন৷
ছবি: imago/M. Popow
ইয়ুলিয়া ক্ল্যোকনার
সিডিইউ দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেত্রী ইয়ুলিয়া ক্ল্যোকনার (৪৫) অনেককাল ধরে রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন৷ নতুন সরকারে তিনি খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী হয়েছেন৷ রক্ষণশীল ও মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তা হিসেবে তিনি পরোক্ষভাবে ম্যার্কেলের উদার শরণার্থী নীতির সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G.Fischer
স্ভেনিয়া শুলৎসে
নতুন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে শেষ মুহূর্তে এসপিডি দলের তালিকায় স্থান পেয়েছেন স্ভেনিয়া শুলৎসে (৪৯)৷ ফেডারেল সরকারে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ায় বিজ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবন মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Vennenbernd
ডোরোটে বেয়ার
বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের তরুণ নেত্রী ডোরোটে বেয়ার (৩৯) চ্যান্সেলর দফতরের অধীনে ডিজিটাল প্রযুক্তির দায়িত্ব পেয়েছেন৷ রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি জার্মানিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ সিএসইউ দলের একমাত্র নারী মন্ত্রী হিসেবে তিনি বাড়তি গুরুত্ব পাবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. von Jutrczenka
হেলগে ব্রাউন
সিডিইউ দলে পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃ্ত্বে হেলগে ব্রাউন (৪৫) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছেন৷ নতুন সরকারে চ্যান্সেলর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে তাঁকে বেছে নিয়েছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷