আগামী পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে সেই নির্বাচনের পর দশম সংসদ গঠন করে তা ভেঙে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ হাসিনার এই মন্তব্য ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে৷ উনি (খালেদা জিয়া) পারবেন না৷'' তবে বিরোধী দলের সঙ্গে চলমান আলোচনার বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, ‘‘...নির্বাচনের পর আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি সমঝোতায় আসতে পারি, প্রয়োজনে আমরা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দেব৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় হাসিনার এই বক্তব্যের আলোকে জানানো হয়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সুযোগ নেই৷ তিনি জানান, নির্বাচনের পর আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতা হলে প্রয়োজনে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দেয়া হতে পারে৷ একটাই শর্ত, বিরোধী দলকে, হরতাল-অবরোধ, মানুষ খুন করা বন্ধ করতে হবে৷ জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে৷''
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
বলাবাহুল্য, হাসিনার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ ইমন হাসান লিখেছেন, ‘‘একটা নির্বাচন করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়৷ আর এই টাকাটা কারো বাবার না, টাকাটা জনগণের৷ তাই নিজেদের টাকা খরচ করে নির্বাচন একবার না ১০ বার করুক তাতে জনগণের কিছু আসে যায় না...৷''
রায়হান হক নামক আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী শেখ হাসিনার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: একটাই শর্ত:- ১) বিরোধী দলকে হরতাল-অবরোধ, ২) মানুষ খুন করা বন্ধ, ৩) জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে৷ শর্ত তিনটা৷ বিএনপির শর্ত একটা - প্রধানমন্ত্রীর সরে দাঁড়ানো৷ সহজ কোনটা? বলেনতো? আমাদের সাথে৷''
ডয়চে ভেলের আরেক পাঠক মামুনুর রশীদ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন ‘‘হাসিনা ভুল কিছুতো বলেন নাই৷ এখন এই মুহূর্তে নির্বাচন বাতিল করা কি সম্ভব? ইলেকশনের ভোট নেওয়াটা বাদে সব কাজ শেষ৷ সুতরাং, এখন দশম না একাদশ নির্বাচন নিয়ে আলাপ করা উচিত৷''
একই বিষয়ে সোহাগ ব্যাপারি লিখেছেন, ‘‘দেশের সম্পদ রক্ষার্থে, তালেবানের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবটাই মেনে নেয়া উচিত৷''
এদিকে, বাংলা ব্লগেও নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন নিবন্ধ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে আব্দুর রহমান মিল্টন লিখেছেন, ‘‘এবার কষ্ট করে কোনো ভোটারকে নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে হবে না৷ কারণ সবাই এমনিতেই এমপি হয়ে যাচ্ছে৷ যারা এবার নতুন ভোটার তাদের এবার ভোট দেওয়ার ইচ্ছায় গুঁড়ে বালি৷ এক্কেবারে ফাঁকা মাঠে গোল৷ আহারে কি আনন্দ আকাশে বাতাসে৷''
একই ব্লগ সাইটে রাসেল মাহমুদ মাসুমের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘‘ইনস্ট্যান্ট নির্বাচন ও আমাদের সুবিধা৷'' এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘একবিংশ শতকে বিংশ শতকের রাজনীতি চলবে না৷ আমরা ‘আনুষ্ঠানিক গণতন্ত্র' চালু করলাম৷ সবাই আমাদের অনুসরণ করুক এবং তাই সবাইকে জানিয়ে দিন ‘ভোটার ক্লেশ নিবারণী পদ্ধতি' হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক উপায়৷''