গত ১০ নভেম্বর বাংলালিংকের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে জেমস ও মাইলস ব্যান্ডের মানাম আহমেদ ও হামিন আহমেদ পৃথক দুটি মামলা করেন৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলার নির্ধারিত দিনে এজলাসে হাজির হন মানাম আহমেদ ও হামিন আহমেদ৷
অন্তবর্তীকালীন জামিনে থাকা বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস, প্রধান কমপ্লায়েন্স অফিসার এম নুরুল আলম, প্রধান কর্পোরেট রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান ও হেড অব ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস অনীক ধর আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন চান৷
তাদের আইনজীবী বাহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাদীপক্ষের সঙ্গে মামলা নিয়ে আপোষের কথাবার্তা চলছে৷ জেমস ও মাইলস ৫ কোটি করে মোট ১০ কোটি টাকা চেয়েছেন৷
বাংলাদেশে শিল্পীরা সঙ্গীত জীবনের শেষ দিকে এসে পড়ছেন আর্থিক সঙ্কটে৷ তাদেরকে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হয় শুভাকাঙ্খী অথবা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে৷ কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন সঙ্গীত শিল্পীরা? পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islamসঙ্গীতা বলেন, সাউন্ডটেক বলেন, এদের অ্যালবাম বিক্রির উপর কোনো ভাগ আমরা কোনোদিনও পাইনি৷ এককালীন একটা লামসাম দিয়ে দিতো৷ শিল্পীদের কোটি টাকা সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে৷ কারা খাচ্ছে আমি জানি না৷ আমাদের আয়ের কিছুই নাই এখন৷ ইউটিউবে আমার হাজার হাজার গান আছে, কোনেকিছুই জানি না কারা আপলোড করছে৷ রয়্যালটির টাকা মেরেকেটে না খেলে কি আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হয়?
ছবি: bdnews24.comআমাদের দেশে কোন কপিরাইট সোসাইটি নাই, শিল্পীদের কোনো ঐক্য নাই৷ ৪৮ বছরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি নাই যে কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিয়েলিটি শো হয়, বিভিন্ন এফ এম চ্যানেলে আমাদের গান বাজে সেখান থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারের ভাগটা কী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন নীতিমালা নাই৷ যতদিন পর্যন্ত শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন কোন সমাধান হবে না৷
ছবি: bdnews24প্রত্যেকটা শিল্পী শেষ বয়সে এসে কষ্ট পায় এবং চিকিৎসার জন্য যখন অর্থ দরকার হয় তখন দুস্থ শিল্পী হয়ে যায়৷ সব শিল্পীরা মিলে তাকে সাহায্য করতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক, করুণ একটা ব্যাপার, আমাদের শিল্পীদের খুবই কষ্টের একটি জায়গা৷ আমাদের সৃষ্ট গানের কিছুই আমরা পাই না৷ কোম্পানিগুলোতে যারা আছে তারা হয়তো কিছু আয় করছে৷ আমাদের পাশের দেশে ভারতে শিল্পীরা রয়্যালটি পায়, সেজন্য তাদের এতো অভাব থাকে না৷
ছবি: Sazzad Hossainআমাদের শিল্পীরা মরলে পরে শহীদ মিনারে নিয়া ফুলের মালা দেয়৷ থাকলে দেখে না, কেউ নাই৷ এটা এখন প্রমাণিত৷ আমাদের শিল্পীদের এখন আয় নাই৷ মোবাইল, ইউটিউবের জন্য এক একজন আসে (গান রেকর্ড) করে দুই-তিন হাজার টাকা দেয়৷ ক্যামেরা করে তারা রেখে দেয়, তারপর ইউটিউবে চালায়৷ আমাদের লোকশিল্পীরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে৷ যন্ত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে বাজিয়ে একটা গানের জন্য মাত্র দুই হাজার টাকা পায়৷
ছবি: DW/S. Kumar Deyঅনুদান নয় বরং অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর নির্দেশ প্রয়োজন৷ অন্তত একটি মামলার আদালতের রায় প্রয়োজন৷ অবৈধ ভাবে অনুমতিহীন গান বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা প্রয়োজন৷ তাহলেই অপরাধীরা শিল্পীদের টাকা লুট করা বন্ধ করবে৷ দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে শিল্পীদের ৭০% রয়েলিটি নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই একজন শিল্পী সুস্থ ও সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে৷
ছবি: Pritom Ahmedসিএনজি ওয়ালাদের সংগঠন আছে বলেই যখন ইচ্ছা তখন সিএনজি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ বাস মালিকদের সংগঠন আছে, তারা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করে দিচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন নাই, আমরা পারছি না৷ আমাদের এভাবেই চলতে হবে৷ প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ে, সচিবের বাড়ে, মন্ত্রীর বাড়ে, এমপির বাড়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়ে, কিন্তু শিল্পীদের পেমেন্ট বাড়ানো হয় না৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা রেট দিয়ে গেছেন সেটাই এখানো চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossainএকজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিও’র সঙ্গে চুক্তি করেন তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে’র জন্য তার সম্মানি চাইতে পারতেন৷ যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটি স্টুডিও’র সঙ্গে শিল্পী নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷
ছবি: financeasia.com শুনানি শেষে আদালত আসামিদের স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করে আপোষসহ সার্বিক বিষয়ের সিদ্ধান্তের জন্য মামলার পরবর্তী দিন আগামী ৫ জানুয়ারি ঠিক করা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস পাল৷
গত ৩০ নভেম্বর আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে সোমবার পর্যন্ত জামিন দিয়েছিলেন৷ জামিনের মেয়াদ শেষে তারা সোমবার আদালতে এসে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন৷
তাপস পাল বলেন, ‘‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, জেমস এবং মাইলসের পক্ষ থেকে মামলাটি আপোষের জন্য ৫ কোটি করে ১০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ এ নিয়ে দুইপক্ষ বৈঠকেও বসবেন, তাদের আপোষের কথাবার্তা চলছে৷”
মানাম আহমেদ ও হামিন আহমেদের লেখা ও সুর করা ‘নীলা’ ও ‘ফিরিয়ে দাও' গান দুটি অনুমতি ছাড়াই বাংলালিংক ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে বলে মামলার আরজিতে বলা হয় ৷ এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ অন্যদিকে জেমসের গাওয়া ‘দুখিনী দুঃখ করো না', ‘জিকির', ‘লুটপাট', ‘সুম্মিতা', ও যার যার ধর্ম গান সম্পর্কেও প্রায় একই অভিযোগ করেন তিনি৷
মামলার আসামি প্রধান ডিজিটাল কর্মকর্তা সঞ্জয় ভাগাশিয়া বিদেশে চলে যাওয়ায় বাদীপক্ষ মামলা থেকে তাকে বাদ দিয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)