ইউরোপে শরণার্থী হিসেবে আসা কমপক্ষে ১০ হাজার শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাদের অনেককে দাসত্ব ও যৌনকর্মে বাধ্য করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ সংস্থা ইউরোপোল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Palacios
বিজ্ঞাপন
সংস্থার ‘চিফ অফ স্টাফ' ব্রায়ান ডোনাল্ড ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য অবজারভার'-কে বলেন, ‘‘এটা বলা অযৌক্তিক হবে না যে আমরা ১০ হাজারের বেশি শিশুকে খুঁজছি৷'' আসল সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷ অবশ্য হারিয়ে যাওয়া শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত ইতিমধ্যে তাদের পরিবারের সঙ্গে আবারও মিলিত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন ডোনাল্ড৷ তবে তারা কোথায় আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই৷
এদিকে, ইউরোপোল-এর একজন মুখপাত্র আরেক ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান'-কে জানিয়েছেন, ইউরোপে শরণার্থীদের আগমনকে ঘিরে লাভবান হতে চাওয়া ‘অনেক' অপরাধীকে হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকে আটক করা হয়েছে৷ ঐ একই মুখপাত্র জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, শরণার্থী চোরাচালান থেকে লাভবান হওয়া অপরাধী গোষ্ঠীগুলো যে তাদের পদ্ধতি পরিবর্তন করে শিশু দাসত্ব ও যৌনকর্ম বিষয়ক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে সেই তথ্য ইউরোপোলের কাছে রয়েছে৷
ইউরোপোল-এর হিসাবে, ২০১৫ সালে ইউরোপে যে ১০ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী এসেছে তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ শিশু হতে পারে৷
জার্মানির অবস্থা
২০১৫ সালে জার্মানিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার শিশু শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জার্মান সংগঠন ‘ফেডারেল এসোসিয়েশন ফর আনএকমপেনিড মাইনর রিফিউজিস' বা বিইউএমএফ৷ মূলত আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়া থেকে তারা এসেছে৷
বিইউএমএফ-এর কর্মকর্তা নিলস এশপেনহোর্স্ট জানান, আগত শিশুদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ শিশু হারিয়ে যেয়ে থাকতে পারে৷ পুলিশ এখন ‘হারিয়ে যাওয়া সাইকেল' যেভাবে খোঁজে সেভাবে হারিয়ে যাওয়া শরণার্থী শিশুদের খুঁজবে বলে ডয়চে ভেলের কাছে মন্তব্য করেন এশপেনহোর্স্ট৷
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷