1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহুরে জীবন

২ নভেম্বর ২০১২

২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস করবে শহরে৷ শহরবাসীদের জীবনযাত্রার ধরণ গ্রামবাসীদের চেয়ে অনেক কম স্বাস্থ্যকর৷ তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা, ফলে মানসিক বিষাদ ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে৷

ছবি: AP

শহুরে মানুষ খায় বেশি, নড়াচড়া করে কম৷ সেই সঙ্গে থাকে ধূমপান প্রভৃতি উপসর্গ৷ এছাড়া থাকে গাড়ির ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ৷ সব মিলিয়ে হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, এ'সব বিপদ থেকে যাচ্ছে৷ ক্রমেই তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ডিপ্রেশন, স্কিটসোফ্রেনিয়া, ফোবিয়া ইত্যাদি মানসিক অসুখ৷ শহরবাসের এই মনস্তত্ত্বগত দিকটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিও-আর্বানিজম' বা নব্য-নাগরিক ব্যাধি৷

শহরবাস যত কষ্টেরই হোক না কেন, গাঁয়ের মানুষ জীবিকার সন্ধানে চিরকালই শহরে যায় এবং আজও যাচ্ছে৷ ৬০ বছর আগে বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কম বাস করত শহরে৷ আজ সেই অনুপাত ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে৷ এবং তার একটি ফল যে মানসিক রোগ ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, মানহাইমের মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আন্ড্রেয়াস মায়ার-লিন্ডেনবের্গ সেটা খুব ভালো করেই জানেন:

‘‘শুধু ডিপ্রেশন বা মানসিক বিষাদের কারণেই ইউরোপে প্রতিবছর প্রায় ১২ কোটি ইউরো ক্ষতি হয়৷ এবং সব ক'টি মানসিক রোগ একত্রে ধরলে এই ক্ষতির পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা সদ্যসৃষ্ট ইউরোপীয় স্থায়িত্ব প্রণালী ইএসএম'কেও ছাড়িয়ে যায়৷ এ'ধরণের রোগ যে কত বেশি ঘটে এবং কতটা গুরুতর, তা বহু ক্ষেত্রেই ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয় না৷''

২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস করবে শহরেছবি: AP

লন্ডনের কিছু অংশে ষাটের দশক থেকেই স্কিটসোফ্রেনিয়া বা ভগ্নমনস্কতা বেড়ে চলেছে৷ জার্মানিতে এ'শতাব্দীর প্রথম দশ বছরে মানসিক অসুস্থতার দরুন শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে না আসার ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে৷ উত্তর অ্যামেরিকায় শ্রমিক-কর্মচারীরা যখন কামাই করেন, তখন ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে তার কারণ হয় ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ৷ বার্লিনের প্রখ্যাত শ্যারিটে হাসপাতালের মনঃচিকিৎসা এবং স্নায়বিক চিকিৎসা বিভাগের পরিচালক আন্ড্রেয়াস হাইনৎস বলেন:

‘‘শহরে এমনও ঘটতে পারে যে, মানুষ তার প্রতিবেশীকে চেনে না, প্রতিবেশীর সাহায্য পায় না, কোনো ছোট শহর কিংবা গ্রামে সে যেমনটা পেতো৷ কাজেই মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, নিজেকে আর সমাজের অঙ্গ বলে বোধ করে না, নিরাপত্তার অভাব বোধ করে৷''

জন্তু-জানোয়ার নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের একা রাখলে তাদের মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটে; তারা মানসিক চাপের মুহূর্তে মাত্রাধিক প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ আন্ড্রেয়াস মায়ার-লিন্ডেনবের্গ ও তাঁর সহকারীরা এবার মানুষকে নিয়ে একই পরীক্ষা করে দেখেছেন, ব্রেনের এমআরটি করে৷ তাঁরা দু'দল মানুষকে নিয়ে পরীক্ষা চালান: একদল, যারা শহরে মানুষ হয়েছেন এবং অপরদল, যারা শৈশবে গ্রামে থাকতেন ও প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর বাস উঠিয়ে শহরে এসেছেন৷

যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের কিছু সহজ আঁকজোক করতে দেওয়া হয়, কিন্তু যুগপৎ তাদের একটানা নেগেটিভ সোশাল ফিডব্যাক বা সামাজিকভাবে নেতিবাচক সমালোচনা শোনানো হয়: যেমন, তারা বড় ধীরে অঙ্ক করছে, কিংবা ভুল অঙ্ক করছে, কিংবা তাদের আগে যে টেবিলে বসেছিল, সে তাদের চাইতে অনেক ভালো ছিল৷ এই সব নেতিবাচক সমালোচনার ফল:

‘‘মস্তিষ্কের একটা অংশ আছে, যা সামাজিক স্ট্রেস বা কষ্টকর পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে শহুরে মানুষদের ক্ষেত্রে৷ মস্তিষ্কের এই অংশটির নাম আমিগডালা৷ বিপদ কি শঙ্কার গন্ধ পেলেই তা সক্রিয় হয়৷ আমিগডালা থেকেই আগ্রাসনের কিংবা আগ্রাসী হয়ে ওঠার নির্দেশ আসতে পারে৷ ফোবিয়া বা বাতিকগ্রস্ত ভয়ভীতির ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের এই অংশটির একটি ভূমিকা থাকে৷ আমরা দেখেছি, গাঁ থেকে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে আমিগডালা সেরকম সক্রিয় নয়৷ কিন্তু ছোট শহর, এবং বিশেষ করে বড় শহর থেকে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে সক্রিয়৷''

এমনকি শহরের মানুষরা মানসিক চাপে পড়লে তাদের মস্তিষ্কের যে অংশগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, তার সঙ্গে স্কিটসোফ্রেনিয়া বা ভগ্নমনস্কতায় আক্রান্ত হতে পারেন, এমন মানুষদের মস্তিষ্কের মিল আছে – বললেন আন্ড্রেয়াস মায়ার-লিন্ডেনবের্গ৷

মায়ার-লিন্ডেনবের্গের যুক্তি হলো, সারা বিশ্বে মেগাসিটি বা অতিকায় শহরগুলির সংখ্যা বেড়ে চলেছে, অথচ কেউই জানে না, শহরবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপযোগী শহর বানানোর পন্থা কি৷ তাহলে হয়ত ভবিষ্যতের শহরগুলোকে অন্যরকমভাবে বানানো সম্ভব হবে৷

প্রতিবেদন: লিডিয়া হেলার/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ