সাহসটা হরনামের, কিন্তু নির্মম-নিষ্ঠুর জগতের মুখোমুখি হবার সেই দুঃসাহসী অ্যাডভেঞ্চারে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট৷ দু'বছর আগে প্রকাশিত এক ইউটিউব ভিডিও দেখেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ সেই ভিডিওতে ২৩ বছরের হরনাম জানিয়েছেন, তাঁকে যারা তাঁর গোঁফদাড়ির জন্য হাস্যাস্পদ বা পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করেছে, তাদের তিনি কীভাবে ঠান্ডা করেছেন৷
এগারো মাস আগে হরনাম আরেকটি ভিডিওতে শুনিয়েছেন, তিনি কিভাবে ইন্টারনেটে ‘ট্রল'-এর সামাল দেন৷ এর এক মাস পরেই হরনামকে প্রথম দাড়িওয়ালা মডেল হিসেবে ক্যাটওয়াকে দেখা যায়৷ মজার কথা, ঠিক সে-বছরেই ইউরোভিশন সং কন্টেস্ট জেতেন অস্ট্রিয়ান ড্র্যাগ কুইন কনচিটা ভুয়র্স্ট, নারীর সাজে পুরুষ, যার গালপাট্টার মতো দাড়ি আছে৷
হরনামের নাম ছড়াতে থাকে৷ তাঁর ছবি ওঠে ব্রিটেনের রক'ন রোল ব্রাইড ম্যাগাজিনে৷ এমনকি চার মাস আগে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এও তাঁর নাম উঠেছে৷ ১১ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যেন নরকবাস করেছেন হরনাম৷ লোকজনের তাকিয়ে থাকা আর মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবনের অন্ত ঘটানোর কথা ভেবেছেন৷
১৬ বছরের হরনামের জীবনে শিখ ধর্ম এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়, নিজের শরীর সম্পর্কে আস্থা এনে দেয়৷ সারা দুনিয়ার নারী ও কিশোরীরা যে ‘বডি কনফিডেন্স' খুঁজছে, তা আজ এই দাড়ি-গোঁফওয়ালা মহিলাটির৷ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামের রোগ তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি ও তাঁর ভিতরের নারীসত্তাকে এক বিন্দু ছিনিয়ে নিতে পারেনি: এর চাইতে বড় আশা ও আনন্দের কথা আর কী হতে পারে?
এসি/ডিজি
ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতা জিতে নিয়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি৷ সেই থেকে ‘ড্র্যাগ কুইন’ কনচিটা ভুয়র্স্ট সংগীত জগতের তারকা৷ সম্প্রতি আত্মজীবনী লিখেছেন দাড়িওয়ালা ‘মেয়েটি’৷ চলছে নতুন অ্যালবামের কাজ৷ তাঁকে নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: ORF/Thomas Ramstorferবয়স ২৬৷ এই বয়সেই সাফল্যের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছেন কনচিটা ভুয়র্স্ট, অর্থাৎ টোমাস নয়ভিয়র্ট৷ হ্যাঁ, গত বছর কনচিটা ভুয়র্স্ট নামে ইউরোভিশন জিতে বিশ্বব্যাপী তারকাখ্যাতি অর্জন করলেও অস্ট্রীয় এই শিল্পীর নাম আসলে টোমাস নয়ভিয়র্ট৷ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ইউরোভিশন ২০১৪-য় বাজিমাত করেছিলেন দাড়িওয়ালা মেয়ের চরিত্র কনচিটা ভুয়র্স্ট সেজে গান গেয়ে৷
ছবি: ORF/Thomas Ramstorferশৈশব থেকেই সংগীত ভালোবাসেন টোমাস নয়ভিয়র্ট৷ সমকামী হওয়ায় অস্ট্রিয়ার মতো দেশেও অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ ফ্যাশন ডিজাইনিংও টানতো তাঁকে৷ তাই ১৪ বছর বয়সেই জন্মস্থান গ্মুন্ডেন ছেড়ে চলে যান গ্রাৎস-এ, শুরু করেন ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে পড়াশোনা৷
ছবি: Reutersসংগীত চর্চা কিন্তু কখনো থামেনি৷ এক সময় তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটা ব্যান্ড গড়লেন৷ ব্যান্ডের নাম দিলেন ‘ইয়েৎস্ট আন্ডার্স’৷ নামের অর্থ ‘এখন অন্যরকম’৷ এই ব্যান্ড ২০০৬ সালে অস্ট্রিয়ার বেশ বড় একটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল৷ তবে ব্যান্ডের নাম ‘এখন অন্যরকম’ হলেও টোমাস নয়ভিয়র্ট গড়পড়তা মানুষের চেয়ে কত অন্যরকম, আর দশটা মানুষের তুলনায় কত বেশি প্রতিভাবান তা বুঝতে আরো সময় লেগেছে৷
ছবি: Reutersফ্যাশন স্কুলের লেখাপড়া শেষ হতেই শুরু হলো ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা৷ মাথায় আসে কাল্পনিক চরিত্র কনচিটা ভুয়র্স্ট৷ তাঁর লম্বা চুল, মেয়েলি চেহারা আর সেই সঙ্গে মুখভরা দাড়ি! এভাবে ড্র্যাগ কুইন সেজে সংগীত শিল্পী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করলেন টোমাস নয়ভিয়র্ট৷ তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images২০১৪ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্টে অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেন কনচিটা ভুয়র্স্ট৷ ডেনমার্কের রাজধানী হয়ে সারা ইউরোপ কাঁপিয়ে দিলেন ‘রাইজ লাইক আ ফিনিক্স’ গানটা গেয়ে৷ জিতে গেলেন ইউরোভিশন৷ সত্যিই পুরানের ফিনিক্স পাখির মতো উত্থান, কী বলেন?
ছবি: EBUইউরোভিশন জয়ের পর থেকে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটছে কনচিটার৷ একটা কনসার্ট শেষ হলেই আসে আরেকটার ডাক৷ প্যারিসের বিখ্যাত ‘ক্রেজি হর্স ক্যাবারে’-তে (ওপরের ছবি) পারফর্ম করেছেন৷ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও ডাক পড়েছিল তাঁর৷ সেখানে অবশ্য গান শোনাননি, সবাইকে যৌন সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন৷
ছবি: Pierre&Gillesটোমাস নয়ভিয়র্টের কনচিটা ভুয়র্স্ট হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে ১২৮ পৃষ্ঠার আত্মজীবনীটা ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে৷ শিগগিরই প্রকাশ করা হবে তাঁর নতুন গান ‘ইউ আর আনস্টপেবল’৷ পাশাপাশি চলছে নতুন অ্যালবামের কাজ৷ এছাড়া কনসার্ট তো চলছেই৷ এ বছর জার্মানিতেও আসবেন কনচিটা ভুয়র্স্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache