ফোটোগ্রাফার দানিশ সিদ্দিকির মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য। তালেবান তাকে আটক করে পিটিয়ে মেরেছে।
বিজ্ঞাপন
ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয়নি পুলিৎজার জয়ী সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির। তালেবান তাকে আটক করে পিটিয়ে মেরেছে। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ করেছে অ্যামেরিকার একটি পত্রিকা। লেখকের দাবি, ভারত সরকারের সূত্রের কাছ থেকে দানিশের মৃতদেহের একাধিক ছবি পেয়েছেন তিনি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দানিশের মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। তার গোটা শরীর বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিৎজার জয়ী ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি আফগানিস্তান গিয়েছিলেন আফগান ফৌজের সঙ্গে তালেবানের লড়াইয়ের ছবি তুলতে। রয়টার্সের প্রধান ফোটোগ্রাফার দানিশ এর আগেও একাধিকবার আফগানিস্তান গেছেন। তালেবানের ছবি তুলেছেন। আফগান বাহিনী যখন খবর পায় যে, তালেবান বাহিনী কান্দাহারে পাকিস্তান সীমানা দখল করে নিয়েছে, তখন আফগান ফৌজের কনভয়ে দানিশ উঠে পড়েন। তাদের সঙ্গেই সীমান্তের কাছে পৌঁছে যান তিনি।
দানিশ সিদ্দিকির চোখে বিশ্ব
পুলিৎজার জয়ী ভারতীয় ফোটোগ্রাফার দানিশ সিদ্দিকি সম্প্রতি নিহত হয়েছেন তালিবানের হাতে। ফিরে দেখা তার কিছু কাজ।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
সালাম দানিশ
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রধান ফোটোগ্রাফার ছিলেন দানিশ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তার কাজের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন।
ছবি: Mumbairt/CC
তালেবানের ডেরায়
আফগানিস্তানে একাধিকবার ছবি তুলতে গেছেন দানিশ। যুদ্ধক্ষেত্রে বহু কাজ করেছেন। এবারেও আফগান বাহিনীর সঙ্গে ঘুরছিলেন তিনি।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
কান্দাহারের লড়াই
কান্দাহারের কাছে পাকিস্তান সীমান্তে তালেবানের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াই হয় আফগান সেনার। দানিশ ছবি তুলছিলেন। তখনই তালেবান আক্রমণে মৃত্যু হয় তার।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
যুদ্ধক্ষেত্র যেমন
২০১২ সালে এই ছবিটি তুলেছিলেন দানিশ। তখনও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ছিল। মার্কিন সেনা বুলডগ এভাবেই সুরক্ষিত করে রেখেছে অঞ্চলটি। পিছনে কাজ চলছে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
তালেবানের ঘরে
ছবির প্রয়োজনে সমস্তরকম ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন দানিশ। এভাবেই ঢুকে পড়তেন তালেবানের ঘরে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
করোনার ভারত
করোনাকালে দানিশের এই ছবি ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। দিল্লিতে এভাবেই পোড়ানো হচ্ছিল করোনা রোগীদের দেহ। দানিশের এই মর্মান্তিক ছবি করোনাকালে ভারতের অবস্থা সামনে নিয়ে এসেছিল।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
রোহিঙ্গা নারী
সুদূর মিয়ানমার থেকে নৌকো করে পাড়ি দিয়েছিলেন এই রোহিঙ্গা নারী। দিনের পর দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মাটি খুঁজে পেয়েছেন। কক্সবাজারের সৈকতে মাটি ধরে কাঁদছেন তিনি।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
রোহিঙ্গা শিশু
রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন দানিশ। থেকেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকতে পৌঁছে শিশুকে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছেন বাবা।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
মুম্বইয়ের রাস্তায়
মুম্বইয়ের রাস্তায় এভাবেই ঘুমোতে হয় গৃহহীনদের। হ্যামকে ঘুমোচ্ছে তিন বছরের শিশু। ২০১২ সালে তোলা দানিশের এই ছবিও সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভারতে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
শেষ সময়ের কথা
দানিশের বাবা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শেষমুহূর্তে নিজের যাওয়া বাতিল করেন তিনি। জানিয়ে দেন আফগানিস্তান যাবেন যুদ্ধের ছবি তুলতে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
যুদ্ধক্ষেত্রের প্রার্থনা
যুদ্ধের মধ্যেই অস্ত্র পাশে নিয়ে নামাজ পড়ছেন আফগান সেনা বাহিনীর এক জওয়ান।
আফগান স্পেশাল ফোর্স গ্রামে ঢুকে এভাবেই আশ্বস্ত করছেন সাধারণ মানুষকে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
ভয়ংকর লড়াই
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কান্দাহারের দখল নিতে পারেনি আফগান বাহিনী। তালেবানের শক্তির সামনে আফগান বাহিনীকে পিছু হঠতে হয়। একের পর এক সেনা জওয়ানকে মারতে থাকে তালেবান।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
শেষ ছবি
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে এই ছবিটি তুলেছিলেন দানেশ। একটি সেনা কনভয়ে ছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে কনভয়ের ছবি তুলেছিলেন।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
15 ছবি1 | 15
মার্কিন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সীমান্ত থেকে কয়েকশ মিটার দূরে আফগান বাহিনীর উপর প্রথম আক্রমণ চালায় তালেবান। আফগান বাহিনীর কনভয় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আফগান কম্যান্ডারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দানিশ। তিনজন আফগান সেনার সঙ্গে তিনি অন্য দিকে ছিটকে যান। তার শরীরে স্প্লিনটারের আঘাত লাগে। সেনা জওয়ানরা তাকে স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দানিশ এবং আফগান ফৌজের তিন সেনা যে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন, সে খবর পৌঁছে যায় তালেবানের কাছ। তালেবানের একটি দল মসজিদ আক্রমণ করে। ভিতরে ঢুকে তারা দানিশকে আটক করে। তার পরিচয় জানতে পারে। এরপর তাকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। রিপোর্টের দাবি, দানিশের মৃত্যুর পর যে ছবি পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট, হত্যা করার আগে তার মাথার কাছে একাধিক আঘাত করা হয়েছে। তারপর বুলেট দিয়ে তাকে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। কোল্যাটারাল মৃত্যুতে এ ধরনের আঘাত থাকতে পারে না।
দানিশের মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ভারত এখনো সরকারি ভাবে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে একটি ভারতীয় মিডিয়াও গত সপ্তাহে দানিশের মৃত্যু নিয়ে একই দাবি করেছিল।
মৃত্যুর পরে আফগান সরকারের সহায়তায় দানিশের মৃতদেহ দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়েছিল। রাজধানীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি দাবি তুলেছে, দানিশের মৃত্যুর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যে ভাবে তাকে মারা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের বিরোধী। কোনো সাংবাদিককে এভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করা যায় না।