দানিয়ুবে ভেসে উঠছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান জাহাজ
২১ আগস্ট ২০২২
সার্বিয়ার প্রাহোভোর কাছে দানিয়ুব নদীতে ভেসে উঠছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান যুদ্ধজাহাজ৷ প্রবল খরায় পানির স্তর কমে যাওয়ায় একসময়ে ডুবে যাওয়া একাধিক যুদ্ধজাহাজের অংশ চোখে পড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দানিয়ুব৷ এটি ইউরোপের খরস্রোতা নদীগুলোর একটি এটি৷ ১০০ বছরের মধ্যে এ নদীর জলস্তর চলতি বছর অন্যতম সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে৷ খরার ফলে জলস্তর নেমে সার্বিয়ার বন্দর নগরী প্রাহোভোর কাছে দানিয়ুবের বুকে বিস্ফোরক-বোঝাই কয়েক ডজন জার্মান যুদ্ধজাহাজের দেখা মিলেছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেগুলো ডুবে গিয়েছিল৷
১৯৪৪ সালে দানিয়ুবে ভেসে যাওয়া নাৎসি জার্মানিরশত শত জাহাজগুলির মধ্যে এগুলিও ছিল৷ সোভিয়েত বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার পর তারা কৃষ্ণসাগর থেকে পিছু হটে৷ এখনও পানির স্তর কম থাকলে এই জাহাজের অংশগুলির কারণে নৌযান চলাচলে বাধা পড়ে৷
পূর্ব সার্বিয়ার প্রাহোভোর কাছে দানিয়ুবের একটি অংশে ২০টিরও বেশি জাহাজের অংশ দেখা গিয়েছে৷ এর মধ্যে অনেকগুলিতে বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক মজুত রয়েছে ফলে নৌযান চলাচলে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
জার্মান জাহাজ নিয়ে একটি বই লিখেছেন প্রাহোভোর চুয়াত্তর বছর বয়সি ভেলিমির ট্রাজিলোভিক৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানির এই জাহাজগুলি পরিবেশে বড়সড় বিপর্যয় তৈরি করে গিয়েছে যা প্রাহোভোর মানুষের জন্য একটি হুমকি৷''
জার্মানি, ইটালি এবং ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য অংশে মাসের পর মাস খরা এবং রেকর্ড পরিমাণে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে নদীর জল শুকিয়ে নাব্যতা কমেছে৷ ফলে যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ সার্বিয়া কর্তৃপক্ষ দানিয়ুবের নৌযান চলাচল সচল রাখতে পলি খনন করার পদ্ধতি নিয়েছেন৷
কয়েকটি জাহাজ প্রাহোভোতে দানিয়ুবের এই প্রসারিত অংশকে ১৮০ মিটার থেকে ১০০ মিটারে (৩৩০ ফুট) সংকুচিত করেছে৷ নদীর তীরে ছড়িয়ে থাকা, কিছু জাহাজে এখনও বুরুজ, কমান্ড ব্রিজ, ভাঙা মাস্তুল ইত্যাদি জিনিস রয়েছে৷ তবে বেশিরভাগ জাহাজই বালিতে ডুবে রয়েছে৷
মার্চ মাসে সার্বিয়ান সরকার এই জাহাজগুলি উদ্ধার করে গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক অপসারণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করেছিল, যার খরচ আনুমানিক দুই কোটি ৯০ লাখ ইউরো৷ এদিকে খরার কারণে নদীর জলস্তর শুকিয়ে যে জাহাজগুলি চোখে পড়ছে, সেগুলি নিয়ে শঙ্কাও বাড়ছে৷
আরকেসি/এফএস (রয়টার্স)
একদিকে খরা, অন্যদিকে বন্যা: জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্ত পৃথিবী
মৌসুম পরিবর্তনে বিশ্বের কোনো স্থান পুড়ে যাচ্ছে খরায়, জ্বলে যাচ্ছে দাবানলে৷ আবার কোনো অঞ্চল ভাসছে বন্যার জলে, মানুষ মরছে অতিবৃষ্টি ও ভূমিধসে৷ এমনকি এক দেশেরই দুই প্রান্তে দু’রকম চরম আবহাওয়ার দেখা দিচ্ছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mariel Müller/DW
সিডনিতে দেড় বছরে চতুর্থ বন্যা
জুলাই-এর শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে বন্যা দেখা দিয়েছে৷ গত ১৮ মাসের মধ্যে চতুর্থ বারের মতো বন্যার কবলে পড়লো রাজ্যটি৷ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গ্রেটার সিডনি৷ মাত্র চারদিনে আট মাসের সমান বৃষ্টিতে সড়কগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে৷ কয়েক হাজার মানুষকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে৷ বারবার বন্যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: DEAN LEWINS/AAP/IMAGO
পাকিস্তানের অস্বাভাবিক বৃষ্টি
মধ্যজুন পর্যন্ত ঝড়ে পাকিস্তানে ৭০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন৷ ধ্বংস হয়ে গেছে বিপুল বাড়িঘর, সেতু আর বিদ্যুৎকেন্দ্র৷ দেশটির জলবায়ু সংক্রান্ত মন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে গড় হারে চেয়ে সেখানে ৮৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে দেশটিকে সামনে আরো বেশি বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে বৃষ্টির অভাবে যেন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে ইটালি৷ পাঁচটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার, যা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে৷ জলের এতটাই সংকট দেখা দিয়েছে যে পানি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বেশ কিছু শহর ও জেলা৷ দেশটির দীর্ঘতম নদী পো বিধৌত অঞ্চলে গত ৭০ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ খরা দেখা যায়নি৷ এই কৃষি অঞ্চলে ফসল উৎপাদনও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে৷
ছবি: Luca Bruno/AP/picture alliance
অ্যামেরিকায় আগাম দাবানল
মৌসুম শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্র দাবানলে পুড়তে শুরু করেছে৷ জুলাইর শুরুতেই উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অঞ্চলে আগুন লাগে৷ রাতারাতি তা দ্বিগুণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে৷ রাজ্যের আরো কিছু জায়গাতে দাবানল চলছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খরা পর্যবেক্ষণ সংস্থার হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়ার ৮৬ শতাংশ খরায় ভুগছে৷
ছবি: Noah Berger/AP Photo/picture alliance
চীনে তাপদাহ
গত কয়েকযুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তাপদাহে ত্রাহি অবস্থা চীনে৷ জুন ও জুলাইতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যায়৷ পূর্বাঞ্চলে হেনান প্রদেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদায় বাড়ায় বিদ্যুতের উপর চাপ রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে চলেছে দক্ষিণাঞ্চলে৷ সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড বৃষ্টি আর বন্যায় আক্রান্ত৷ সরকার বলছে, জলবায়ুর এই পরিবর্তন দেশটির সমাজ ও অর্থনীতিকে আক্রান্ত করছে৷
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
ব্রাজিলে ভূমিধস
প্রবল বৃষ্টির পর ভূমিধস এবং বন্যায় মে মাসে ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্নাম্বুকো রাজ্যে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়৷ অন্তত ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই দুর্যোগে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে৷ জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি পার্নাম্বুকোর রাজধানী রেসিফের আশেপাশের নিচু মেট্রো অঞ্চলকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে৷
ছবি: Lucio Tavora/Xinhua/picture alliance
সাউথ আফ্রিকায় অতিবৃষ্টি
এপ্রিলে সাউথ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারি বৃষ্টিতেও বন্যা আর ভূমিধস হয়৷ এতে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে ১২ হাজার বাড়িঘর৷ অন্তত ৪০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যেতে হয়েছে৷ ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের হিসাবে, সাউথ আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে দ্বিগুন আর ঘনত্ব আট শতাংশ৷
ছবি: ROGAN WARD/REUTERS
পূর্ব আফ্রিকায় দীর্ঘায়িত খরা
গত কয়েক যুগের মধ্যে ভয়াবহ খরায় পুড়ছে পূর্ব আফ্রিকাও৷ শুরুটা হয়েছে গত বছরে যা চলছে এখনও৷ চার মৌসুম পরেও সেখানে বৃষ্টির দেখা নেই৷ এই অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ চরম অনাহারে রয়েছেন৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতীয় মহাসাগরের স্রোতের সঙ্গে সম্পর্কিত বসন্তকালীন বৃষ্টি এই অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই সমুদ্রে ঝরে পড়ছে, যার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে না ভূমিতে৷