দাবানলের বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া৷ ফলে অস্ট্রেলিয়া ওপেনের জন্য প্র্যাকটিস পর্যন্ত হল না৷
বিজ্ঞাপন
বছরের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ টেনিস টুর্নামেন্ট৷ কিন্তু তার আগে প্রয়োজনীয় প্র্যাকটিসের সুযোগ পেলেন না নাদালরা৷ দাবানলের দূষিত বিষাক্ত ধোঁয়া এখন অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ মঙ্গলবার সকালে বাতাসে দূষণ বেশি ছিল বলে প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিতে হয়৷ সংগঠকদের আশা, পরিস্থিতি পরের দিকে ভালো হবে৷ তখন মূল পর্বে ওঠার জন্য ম্যাচ শুরু করা যাবে৷ আর প্রতিযোগিতা শুরু করতেও কোনও অসুবিধা হবে না৷ নাদাল, ফেডেরার, সেরেনা উইলিয়ামসরা বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা জেতার জন্য প্রাণপাত করতে পারবেন৷
অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল: প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ দীর্ঘদিন ধরে ছড়াতে থাকা দাবানল নেভাতে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তাদের এ আন্দোলন৷
ছবি: Reuters/P. Braven
নিয়ন্ত্রণে আসছে না দাবানল
আগুন ছড়িয়েছিল সেপ্টেম্বরে৷ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে জ্বলতে থাকা এ আগুন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না৷ বৃষ্টিও নেভাতে পারেনি এ আগুন৷ বরং বিশাল এলাকা জুড়ে তা ছড়াচ্ছে৷ আরো দুই মাস এ আগুন জ্বলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Rycroft
বিক্ষোভ
শুক্রবারের বিক্ষোভ আয়োজন করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ সকাল থেকেই বিভিন্ন শহরে একযোগে রাস্তায় নেমে আসেন তারা৷ বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষও ধীরে ধীরে যোগ দেন এতে৷ একসময় বন্ধ হয়ে যায় সিডনি, ক্য়ানবেরা, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, হোবার্টের মতো বড় শহরগুলোর প্রধান সড়কগুলো৷
ছবি: Reuters/P. Braven
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ আন্দোলন ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে৷ শুক্রবারের বিক্ষোভ সরাসরি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়৷ সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানাতে জনমত গড়ে তুলতে ফেসবুক, টুইটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Reuters/P. Braven
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
স্কট মরিসন দাবানল ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন অভিযোগ করে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ রাজপথে নামা আন্দোলনকারীদের স্লোগান ছিল ‘স্কোমো (স্কট মরিসন), হ্যাজ টু গো’৷ ব্যানার-ফেস্টুনে শোভা পাচ্ছিল ‘দেয়ার ইজ নো ক্লাইমেট বি’, ‘সেভ আস ফ্রম হেল’ ইত্যাদি স্লোগান৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে #স্য়াকস্কোমো হ্যাশট্যাগ৷
ছবি: Getty Images/T. Nearmy
প্রাণহানি
এরই মধ্যে দাবানলে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে৷ দাবানলে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও সরীসৃপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ কোটি প্রাণী মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আগুনে পোড়া ক্ষত নিয়ে অনেক প্রাণী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে৷
ছবি: AFP/S. Khan
উট হত্যা
পাঁচ দিন ধরে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০ হাজার উট হত্যা করছে অস্ট্রেলিয়া৷ চলমান দাবানলের কারণে নিজেদের আবাসস্থল ছেড়ে আদিবাসীদের শহরে চলে আসছে উটের দল৷ এ অবস্থা ঠেকাতে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত৷ হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে বুনো উট৷ প্রথম দিনে প্রায় দেড় হাজার উট মারা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Getty Images/E. Shaw
6 ছবি1 | 6
সংগঠকরা যাই বলুন না কেন, মঙ্গলবারের ঘটনা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ আগামী ২০ জানুয়ারি মূল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা৷
মেলবোর্নের বাতাসে এ দিন দূষণের পরিমাপ ছিল ছিল ২১৩৷ বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ ২০০ ছাড়ালেই তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়৷ দিল্লি বা ভারতের অনেক শহরের লোক হামেশাই এর থেকে বেশি বায়ুদূষণের মধ্যে থাকেন৷ মঙ্গলবার সকালেও দিল্লি ও তার আশপাশের অনেক জায়গায় বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল দুশোর অনেক ওপরে৷ কিন্তু দিল্লি দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করলে ভুল হবে৷ বায়ুদূষণ বেড়ে গেলে, তা অস্বাস্থ্যকর জায়গায় পৌঁছে গেলে তাকে মারাত্মক বলে মনে করা হয় অধিকাংশ দেশে৷
অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা এখন ভয়াবহ৷ দাবানলসেখানে বিপর্যয় ঘটিয়ে দিয়েছে৷ ৫০ কোটি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে৷ কয়েক মাস ধরে অপ্রত্যাশিত গরম ও দাবানলের ফলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ ২৮ জন মারা গিয়েছেন৷ প্রচুর বাড়ি পুড়েছে৷ আর জঙ্গাল ও বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে ক্ষতিটা অকল্পনীয় হয়েছে৷ এখন দাবানল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও মারাত্মক বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া৷
সংগঠকরা বলছেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই৷ তাঁরা বাড়তি ব্যবস্থা নিচ্ছেন, ফলে খেলোয়াড়দের কোনও অসুবিধা হবে না৷ প্রতিযোগিতা শুরুর ক্ষেত্রে দেরি হবে না৷ হয়ত তাঁদের কথা সত্যি হবে৷ তবে একটা টেনিস প্রতিযোগিতা না হলেও খুব ক্ষতি হবে না, তার থেকে অনেক বড় বিষয় হল, অস্ট্রেলিয়ার লোকেদের কী হবে, পরিবেশের কী হবে, জীববৈচিত্র্যের কী হবে? এই উষ্ণায়ণের সময়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে?
টেনিসের কোর্ট কাঁপানো সুন্দরীরা
টেনিসের কোর্ট মাতিয়ে বেড়ানো প্রমিলা তারকাদের প্রতি ক্রীড়ানুরাগীদের আগ্রহের কমতি নেই৷ কেউ কেউ খেলা দিয়েই মাতিয়েছেন বিশ্ব, কেউ কেউ গ্ল্যামার দিয়ে৷ তেমন কয়েকজনকে নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture alliance/Eibner-Pressefoto
বিলি জিন কিং
১৯৪৩ সালে জন্ম নেয়া এই মার্কিন কিংবদন্তী টেনিস তারকা ক্যারিয়ারে ১২৯টি শিরোপা জিতেছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে ১২টি একক গ্র্যান্ডস্লাম৷ ক্যারিয়ারে প্রায় সাড়ে ঊনিশ লাখ ডলার প্রাইজমানি জিতেছেন তিনি৷ উইম্বলডনেই তাঁর আধিপত্য বেশি ছিল৷
ছবি: Getty Images/M.Dodge
মার্গারেট কোর্ট
একই সময়ের আরেক তারকা মার্গারেট কোর্ট৷ এই অস্ট্রেলিয়ান সুন্দরী জিতেছেন ২৪টি একক গ্র্যান্ডস্লাম৷ মোট শিরোপা ১৯২টি৷ তাঁর আধিপত্য ছিল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে৷
ছবি: Imago/ZumaPress/Keystone
ক্রিস এভার্ট
ফ্লোরিডায় জন্ম নেয়া এই তারকা বিলি জিন-মার্গারেটদের এক দশক পরে কোর্টে এলেও খেলেছেন তাঁদের সঙ্গে৷ তাঁকে বলা হতো বেসলাইনের মেশিন৷ দু’হাতে এমন সব ব্যাকহ্যান্ড শট নিতেন যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল৷ সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশের শুরু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দাপুটে নারী খেলোয়াড়৷ জিতেছেন ১৮টি গ্র্যান্ডস্লামের এককসহ ১৫৭টি শিরোপা৷ প্রাইজমানি হিসেবে জিতেছেন প্রায় নব্বই লাখ ডলার৷
ছবি: Getty Images
মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা
কালের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের জন্ম প্রাগে, ১৯৫৬ সালে৷ ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ১৩টি উইম্বলডনের নয়টিই তাঁর জেতা৷ এর মধ্যে ’৮২ থেকে ’৮৭ পর্যন্ত টানা জিতে ইতিহাস রচনা করেছেন৷ এছাড়া ১৮টি এককসহ, দ্বৈত ও মিশ্র মিলিয়ে ৫৯টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতে রেকর্ড গড়েছেন৷ মোট শিরোপা ১৬৭টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Scheidemann
মনিকা সেলেস
১৯৭৩ সালে যুগোশ্লাভিয়া শাসনাধীন সার্বিয়ায় জন্ম এই হার্টথ্রব তারকার৷ ১৯৮৯-তে ক্যারিয়ার শুরু করে পরের বছরই জেতেন ফ্রেঞ্চ ওপেন৷ ১৯৯১ সালে তিনটি ও ১৯৯২-তে সবক’টি গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন৷ ১৯৯৩ সালেও তিনি কেবল অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন৷ ঠিক তখনই এক দর্শক জার্মানির হামবুর্গে তাঁর ওপর ছুরি চালিয়ে দেন৷ এই দুঃখজনক ঘটনার দু’বছর পর কোর্টে ফিরলেও আর আগের মনিকাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ নয়তো পরিসংখ্যান অন্যরকমই হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ard/Ndr
স্টেফি গ্রাফ
নব্বইয়ের সে সময় মনিকা-স্টেফি’র দ্বৈরথ ছিল দেখার মতো৷ তবে এই সুন্দরীর প্রেমে পড়েননি এমন টেনিসপ্রেমী কমই পাওয়া যাবে৷ সব সারফেসে সমান দক্ষতা দেখিয়ে তিনি জিতেছেন ২২টি গ্র্যান্ডস্লামের একক শিরোপা৷ ১৯৮৮ সালে তিনি চার গ্র্যান্ডস্লামের বাইরে অলিম্পিক স্বর্ণ জিতে ইতিহাস রচনা করেন৷ পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম নেয়া এই কিংবদন্তী ১০৭টি শিরোপাসহ জিতেছেন প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখ ডলার প্রাইজমানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভেনাস উইলিয়ামস
মাত্র সাতটি গ্র্যান্ডস্লাম জেতা মার্কিন খেলোয়াড় ভেনাস অনেকের মতে এ পর্যন্ত ইতিহাসের সেরা দশ নারী টেনিস খেলোয়াড়ের একজন৷ কিন্তু বোন সেরেনা উইলিয়ামস যেখানে খেলছেন, সেখানে অসাধারণ হয়েও কাজ হয় না৷ তার ওপর ইনজুরিও বাধা হয়েছে তাঁর জন্য৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সেরেনা উইলিয়ামস
২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম একক জেতা সেরেনা সম্ভবত টেনিস কোর্টে সবচেয়ে শক্তিশালী নারী৷ এ পর্যন্ত ৭২টি শিরোপা জিতেছেন৷ দুই বোনের দাপটে বহুদিন টেনিস কোর্টে যেন অন্য কারও নামই নেয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ben Curtis
জাস্টিন হেনিন
সাত গ্র্যান্ডস্লাম জেতা জাস্টিন হেনিনকে বলা হয় মোস্ট অ্যাথলেটিক টেনিস তারকা৷ এই বেলজিয়ান ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৫০টি শিরোপা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Kington
মারিয়া শারাপোভা
ভালো খেলোয়াড় হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এই রুশ স্বর্ণকেশী৷ কিছুটা হয়তো পেরেছেন পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লাম জিতে৷ কিন্তু তাঁর সৌন্দর্য যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে৷ তাই দর্শক হৃদয় আকুল করা এই নারী সব সময়ই ছিলেন ও আছেন আলোচনায়৷ এছাড়া ইভোনে গুলাগং, মার্টিনা হিঙ্গিস, কিম ক্লাইস্টার্স, মেরি পিয়ার্স ও আরাংজা সানচেজ ভিকারিওসহ আরো কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের মনে রাখবে টেনিস কোর্ট৷