হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে চলছে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াড৷ সেখানে অংশ নেওয়াদের তালিকা বলছে, এই খেলায় এশিয়ার কাছে শীর্ষস্থানটি হারিয়েছে ইউরোপ৷
বিজ্ঞাপন
১০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া অলিম্পিয়াড চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ সেখানে যাদের খেলার দিকে নজর রাখতে হবে, তারা হলেন ডিং লিরেন, দোম্মারাজু গুকেশ, রাজেশবাবু প্রজ্ঞানানন্দ, অর্জুন ইরিগাইসি, নোডিরবেক আব্দুসাত্তারভ৷ তারা এসেছেন চীন, ভারত আর উজবেকিস্তান থেকে৷
এশীয় এই দাবাড়ুদের সঙ্গে লড়ার একমাত্র সামর্থ্য আছে যুক্তরাষ্ট্র দলের৷ সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নরওয়ের মাগনুস কার্লসেন আছে প্রতিযোগিতায়৷ তবে তার দলের বাকি দাবাড়ুদের অবস্থা ভালো নয়৷
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করায় দাবার একসময়কার সুপারপাওয়ার রাশিয়াকে অলিম্পিয়াডে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ভারতেরসোনালিপ্রজন্ম
দাবায় ভারতকে নতুন রাশিয়া মনে করা হচ্ছে৷ গত বসন্তে ভারতের ১৭ বছর বয়সি দোম্মারাজু গুকেশ ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট জেতেন৷ এর মানে হচ্ছে, এ বছরের শেষ দিকে তিনি বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চীনের ডিং লিরেনের বিরুদ্ধে খেলবেন৷
শুধু গুকেশ নয়, ভারতে রাজেশবাবু প্রজ্ঞানানন্দ, অর্জুন ইরিগাইসির মতো দাবাড়ুরাও বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে উপরের দিকে আছেন৷
দেশটির নারীরাও এই খেলায় এগিয়ে আসছেন৷
২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন ভারতের বিশ্বনাথন আনন্দ৷ তার কারণেই আজ ভারতে দাবার এমন সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷
আনন্দের সাফল্যের কারণে ভারতে দাবা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ ক্রমে সারা দেশে দাবার স্কুল গড়ে উঠতে থাকে৷ এসব স্কুল ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা ভারতীয়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলে ডিডাব্লিউকে জানান আনন্দ৷
এসব স্কুলে কিছু শিশুকে পেশাদারদের মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ যেমন দোম্মারাজু গুকেশকে তার নয় বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা থেকে সরিয়ে এনে দাবায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ তাকে বিশ্বের সব শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতায় পাঠানো হচ্ছে৷
বিভিন্ন সরকারি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তরুণ দাবাড়ুদের চাকরি দিয়ে তাদেরকে পুরোপুরি খেলায় মনোযোগ দিতে দিচ্ছে৷
উজবেকিস্তানআরআন্ডারডগনয়
দাবায় পুরুষ বিভাগের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চীনের ডিং লিরেন৷ নারী বিভাগের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও চীনের৷ তার নাম জু ওয়েনজুন৷
এশিয়ার আরেক দেশ উজবেকিস্তানের দাবাড়ুরাও পুরুষদের ব়্যাংকিংয়ে এগিয়ে আসছে৷ ‘‘আমরা আর আন্ডারডগ নই, বরং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন,'' বলেন গ্র্যান্ডমাস্টার রুস্তম কাসিমজানভ৷ তিনি কয়েক বছর ধরে উজবেক দাবারুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন৷ ২০২২ সালের দাবা অলিম্পিয়াডে নোডিরবেক আব্দুসাত্তারভের নেতৃত্বে উজবেক দল ভারতকে পেছনে ফেলে সোনা জিতেছিল৷
উজবেক সরকার দাবার উন্নয়নে কয়েক বছর ধরে অনেক অর্থ ব্যয় করছে বলে জানান কাসিমজানভ৷
দাবাকে জাতীয় খেলা হিসেবে নির্বাচিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷
যে সাতটি খেলা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
দাবা থেকে শুরু করে স্টারক্রাফট, এখানে থাকছে সাতটি কৌশলের খেলা যা ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো৷ যারা ব্রেনের ব্যায়ামে আগ্রহী, তারা এগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
দাবা: খেলার রাজা
দাবা খেলার নামটা মূলত এসেছে ফার্সি শব্দ ‘শাহ’ থেকে, যার অর্থ রাজা৷ দাবার বোর্ড তৈরি হয়েছে ভারতে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে৷ দু’জন খেলায়াড় একে অপরের বিপরীতে এই খেলায় অংশ নিতে পারেন৷ খেলায় জিততে হলে প্রতিপক্ষের রাজাকে এমনভাবে ‘চেক’ দিতে হয়, যাতে তার পালানোর কোনো উপায় না থাকে৷ এই ‘চেক’ দেয়াকে বলা হয় ‘কিস্তি মাত’৷
ছবি: MEHR
গো: এশিয়ায় তৈরি
‘গো’ খেলাটি সৃষ্টি হয়েছে চীনে৷ তবে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া এবং জাপান৷ কালো এবং সাদা পাথর দিয়ে একটি বোর্ডের উপর খেলাটি খেলতে হয় যেখানে ১৯টি অনুভূমিক এবং ১৯টি উল্লম্ব রেখা টানা থাকে৷ বোর্ডের অধিকাংশ অংশ যে দখলে রাখতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: Imago/Xinhua
শোগি: জাপানের দাবা
দাবার জাপানি সংস্করণ শোগিতে বোর্ডটি নয়টি মাঠে ভাগ করা থাকে৷ তবে ছোট বা বড় বোর্ডও পাওয়া যায়৷ দাবার সঙ্গে এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গুটিগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই৷ অর্থাৎ উভয়েই সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে উদ্দেশ্য একই, রাজাকে ‘চেক’ দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Sasahara
চেকারস: লাফান এবং চুরি করুন
চেকারবোর্ড দেখতে দাবার বোর্ডের মতো৷ তবে খেলার নিয়ম পুরোপুরি ভিন্ন৷ এখানে একটি গুটি আড়াআড়িভাবে একঘর পর্যন্ত সরানো যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রতিপক্ষের একটি গুটিকে ডিঙাতে পারে৷ আর ডিঙানো গুটিটি যে ডিঙিয়েছে তার হয়ে যাবে৷ এভাবে প্রতিপক্ষের সবগুটি নিতে পারলে জয় আসবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Bouys
টিক-টেক-টো: সার্কেল অথবা স্কয়ার?
খেলাটার বাংলা নাম ‘কাটা-কুটি’৷ দীর্ঘ ভ্রমণের পথে দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসা এই খেলাই সম্ভবত সেরা৷ এর জন্য আপনার শুধু একটি পেন্সিল এবং এক টুকরো কাগজ দরকার৷ কাগজের উপরে আঁকা নয়টি ঘরের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড় ক্রস বা সার্কেল আঁকেন৷ যে খেলোয়াড়টি আগে একইরকম সংকেত দিয়ে অনুভূমিক, উল্লম্ব কিংবা আড়াআড়িভাবে তিনটি ঘর ভরতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: imago/J. Tack
সিভিলাইজেশন: বোর্ড থেকে স্ক্রিনে
শুরুতে বোর্ড গেম হিসেবে চালু হওয়া ‘সিভিলাইজেশন’-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ খেলার ধারণা জটিল ছিল: একটি সিভিলাইজেশনকে সেই লৌহযুগের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টিকে থাকতে হবে৷ সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে এটি খেলতে পারে৷ আর একেকটি গেমের দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ১৯৯১ সালে ‘সিভিলাইজেশন’ কম্পিউটার গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
ছবি: 2007 Free Software Foundation, Inc.
স্টারক্রাফট: অবসরের খেলা
কারো কারো কাছে এটা হয়ত নিখাদ বিনোদন, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্টারক্রাফট’ হচ্ছে অবসর সময়ের জন্য উপযোগী জাতীয় খেলা৷ ‘রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি’ খেলাটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে৷ আর তখন থেকেই এটি অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম হিসেবে বাজার দখল করে আছে৷