1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দামের চাকায় পিষ্ট বাংলাদেশের মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ নভেম্বর ২০২২

সরকার ভোজ্য তেল আর চিনির দাম বাড়ানোর পর এখন সব কিছুর দাম ফের বাড়ছে৷ সেইসঙ্গে বাড়ছে মানুষের কষ্ট৷ এর সঙ্গে কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছেন না সাধারণ মানুষ৷

Bangladesch | Supermarkt in Hatirpool-Dhaka
ছবি: Abdullah Momin

কম কিনে, কম খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ কেউ কেউ মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন৷ সরু চাল থেকে নেমে এসেছেন মোটা চালে৷

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশনের(টিসিবি) হিসাবই বলছে চিনি, তেল, চাল, ডাল, আটা, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে৷

এক সপ্তাহে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা, আটার দাম বেড়েছে তিন টাকা, মসুর ডাল বেড়েছে পাঁচ টাকা আর সয়াবিন তেল বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা, চিনি বেড়েছে ১৩টাকা৷ সরকার ঘোষণা দিয়ে তেল  ও চিনির দাম বাড়ানোর পর বাজারে এই দুইটি পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে৷

অভিযোগ ব্যবসায়ীরা আরো দাম বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে পণ্য মজুত করে রাখছে। সরকার ওএমএসের আটার দামও কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়েছে৷

টিসিবির হিসাবে,  ২০২১ সালে সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ১৫৩ টাকা আর এখন লিটার ১৯০ টাকা আর ২০২০ সালে ছিল ১১৪ টাকা৷ চিনি গত বছর কেজি ছিল ৭৮ আর এখন ১০৮ টাকা৷ ২০২০ সালে ছিল ৬৮ টাকা৷

''প্যাকেটজাত চিনির, সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে''

This browser does not support the audio element.

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি) গত অক্টোবরে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাজারে অনেক পণ্যের দাম শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ বেড়েছে৷ ঢাকায় চারজনের একটি পরিবারের অক্টোবর মাসের খাবারের হিসাব তুলে ধরে সিপিডি জানায়, মাছ ও কোনো প্রকার মাংস না খেলে ওই পরিবারকে মাসে খাবার কিনতে খরচ করতে হয় গড়ে নয় হাজার ৫৯ টাকা৷ এর সঙ্গে মাছ ও মাংস যুক্ত হলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷গত এক মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷

টিসিবির দামে বাস্তবে কোনো পণ্য নেই

টিসিবির যে পণ্য তালিকা ও দাম আছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তাদের তালিকাভুক্ত ১০৭টি ভোগ্য পণ্যের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের দামই নতুন  করে বেড়েছে৷ আর এই বৃদ্ধির হার পাঁচ থেকে ২০ ভাগ৷

অন্যদিকে বাস্তবে টিসিবি যে দাম লিখে রাখে সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া যায় না৷ দাম তার চেয়ে বেশি৷ যেমন টিসিবি বলছে গরুর মাংসের কেজি ৬৬০ টাকা কিন্তু ৭০০ টাকার নিচে ঢাকায় কোথাও গরুর মাংস নেই৷ টিসিবির দামের সঙ্গে বাজারে কোথাও মিল পাওয়া যাচ্ছেনা৷

কলবাগানের দোকানদার মিন্টু মিয়া জানান, বাজারে এখন সরু চালের কেজি ৮৫ টাকা, প্যাকেট আটা কেজি ৭৫ টাকা, মসুর ডাল কেজি ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা কেজি৷ কিন্তু টিসিবি বলছে সরু চাল কেজি ৭২ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, মসুর ডাল ১৪৫ টাকা , পেঁয়াজ ৪৫  এবং রসুন ১৩০ টাকা৷ প্রতিটি পণ্যের দাম সিবির লেখা দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি৷

মিন্টু মিয়া জানান," এখন প্যাকেটজাত চিনি বাজারে নেই৷ আর সয়াবিন তেলও চাহিদা মত পাওয়া যায়না৷ এই দুইটি পণ্যের দাম নাকি আরো বাড়বে৷”

প্রত্যেক জিনিসের দামই নিয়মিত বাড়ছে: ক্যাব সহ-সভাপতি

This browser does not support the audio element.

"গরুর মাংস খাই না তিন মাস”

পরিস্থিতি সামলাতে সাধারণ মানুষ এখন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার কমিয়েছে।তারা মাছ, মাংস খাওয়া বাদ দিচ্ছে৷ নাজমুল হক তপন নামের একজন বেসরকারি কর্মী বলেন," আমাদের পরিবারে গত তিন মাস ধরে  গরুর মাংস খাওয়া হয় না৷ মুরগির মাংসও বলতে গেলে খাইনা৷ যা আয় তা দিয়ে গরুর মাংস কেনা সম্ভব নয়৷  মাছ খাই৷ তবে যেসব মাছের দাম কম যেমন তেলাপিয়া এগুলোই খাচ্ছি৷ বাজারে এখন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে৷ যে সব সবজির দাম কম সেগুলো কিনি৷ ফুলকপির দাম বেশি তাই কিনি না৷ আমার বাচ্চাদের কারণে সরু চাল এখনো কিনছি৷ কিন্তু আর মনে হয় পারব না৷ শেষ পর্যন্ত মোটা চালই খেতে হবে৷” 

তিনি বলেন, "গত দুই-তিন মানে ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম ৪০-৫০ ভাগ বেড়েছে৷ কীভাবে যে টিকে থাকব জানিনা৷”

"গত ৩ মাস মাংস খাওয়া হয় না''

This browser does not support the audio element.

মানুষ অসহায়

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন," সরকার যে ভোজ্য তেল এবং চিনির দাম বাড়াল তার প্রতিক্রিয়া পড়েছে বাজারে৷ ওই পণ্যের দাম বাড়ায় অন্য পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে৷ ব্যবসায়ীরা মনে করে তারা বাড়ালে আমরা কেন বাড়াব না৷ এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে  প্রত্যেক জিনিসের দামই নিয়মিতভাবে বাড়ছে৷”

তার কথায়," সাধারণ মানুষ এখন অসহায়৷ তারা কম কিনে, কম খেয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে৷ যারা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন তাদের বিক্রি কমে গিয়েছে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ