1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

‘শহর-গ্রামে একই ওষুধ বিক্রি হয়'

২৮ মার্চ ২০১৭

দেশে ৩০টি কোম্পানি ৯০ ভাগ ওষুধ উৎপাদন করে৷ এদের মার্কেট দেশব্যাপী এবং ওষুধ খুবই মানসম্পন্ন ওষুধ৷ তাছাড়া একই কাঁচামাল থেকে ওষুধ তৈরি হচ্ছে৷ ফলে গ্রামে বা শহরে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'-এর কোনো সুযোগ নেই৷

রুহুল আমিন
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিনছবি: privat

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এই দৃঢ় বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কতগুলো ওষুধ কোম্পানি আছে? আর এর সবগুলো কি বৈধ?

রুহুল আমিন: বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৩৬টি ‘ফাংশনাল' ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে মোট প্রতিষ্ঠান আছে ৮৫২টি৷ এর মধ্যে কিছু ‘নন ফাংশনাল'৷ কিছু কোম্পানির প্রোডাকশন ও মার্কেটিং হেল্ডআপ আছে, কিছু কোম্পানি আছে সাসপেন্ড অবস্থায়৷ সব মিলিয়ে ফাংশনাল আছে ৭৩৬টি৷ অর্থাৎ এগুলোর লাইসেন্স আছে৷ আর যেগুলোর লাইসেন্স আছে সেগুলো বৈধ কোম্পানি৷ মূলত যেগুলোর ফংশন আছে সেগুলোই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে৷ যেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তো নন ফাংশসাল৷ কাজেই তাদের কাজ করার কোনো সুযোগই নেই৷

বাংলাদেশে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বড় কোনো ফ্যাক্টরি কি শিল্পের পর্যায়ে যেতে পেরেছে?

বাংলাদেশের প্রথম যে ১০টি সেক্টর আছে, তার মধ্যে ওষুধ শিল্প একটি৷ এই ওষুধ শিল্প দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত সফল একটি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচিত৷ অতত্রব ওষুধ শিল্প বড় কোনো শিল্প কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন করার আর কোনো সুযোগ নেই৷ এটা অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প হিসেবে সারাদেশেই বিবেচিত৷

কতগুলো কোম্পানির ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হয়?

এই মুহূর্তে ৫৪ বা ৫৫টি কোম্পানির ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে৷

ওষুধের মান রক্ষায় আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেন?

অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেই আমরা নেই৷ আপনারা জানেন যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ‘রেগুলেটর' হিসেবে কাজ করে৷ যে কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধ উৎপাদন করতে গেলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়৷ কাউকে লাইসেন্স নিতে হলে – সেটা এলোপ্যাথি হোক, হোমিওপ্যাথি হোক বা হারবাল হোক – বেশ কিছু শর্ত আছে যা তাকে পূরণ করতে হয়৷ একমাত্র তারপরই সে লাইসেন্স পেয়ে থাকে৷ শুধু তাই না, প্রতিটি ‘প্রোডাক্ট' বাজারে দিতে গেলে তাকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷

Director Drug Administration Ruhul Amin - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সেই শর্ত পূরণ করলে তবেই ঐ প্রোডাক্টটির রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলো গুড মেনুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস যথাযথভাবে অনুসরণ করে কিনা, সেটা দেখা হয়৷ তাছাড়া ডাব্লিউএইচও-র গাইডলাইনে বলা আছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গুড মেনুফ্যাকচারিং প্রাকটিস মেনে চলতে বাধ্য৷ এটা আইনেও বলা আছে৷ এগুলো আমরা নিয়মিত ‘মনিটরিং' করি৷ ওষুধের কারখানা, ওষুধের মার্কেট, ওষুধের ডিপো থেকে আমরা দৈবচয়ন ভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ করি৷ তারপর সেগুলো আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করে আমরা দেখি, মান ঠিক আছে কিনা৷ যদি কোনো প্রোডাক্টের মান নীচে থাকে, তাহলে আমরা ঐ প্রোডাক্টের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করি৷ পাশাপাশি সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করি৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনগতভাবে বাধ্য মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করতে৷

ওষুধ শিল্পের প্রধান সমস্যা কী?

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দ্রুত বিকাশমান ও বিস্তৃত একটি শিল্প৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সব ধরনের হাইডোস ওষুধ উৎপাদনে সক্ষম৷ সব ধরনের ‘সফিস্টিকেটেড' ওষুধ এখন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে৷ তবে এই শিল্পের কাঁচামাল অনেকটা আমদানি নির্ভর৷ সিংহভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আনতে হয়৷ এর জন্য যে অন্য প্রচেষ্টা চলছে না তা নয়, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শিল্প পার্ক হচ্ছে৷ এটা প্রতিষ্ঠিত হলে কাঁচামালের সমস্যারও নিরসন হয়ে যাবে৷ আর সেটা করা গেলে এই শিল্পের বড় অন্তরায় দূর করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি৷

কতভাগ কাঁচামাল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়?

আমার মনে হয়, ৯০ ভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আনা হয়...৷ সংখ্যাটা অবশ্য আরো বেশি হতে পারে৷

কোন দেশ থেকে কাঁচামাল আসে?

ইউরোপ থেকে আসে, চায়না থেকে আসে, ইন্ডিয়া থেকেও আসে৷

কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর ওষুধের ব্যাপারে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

আদালতের নির্দেশনা আমরা যথাযথভাবে পালন করেছি৷ খুব শিগগিরই একটা রিপোর্টও আদালতে উপাস্থাপন করা হবে৷ আমরা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তাদের কোনো ওষুধ যদি বাজারে থাকে সেটা যেন প্রত্যাহার করে নেয় তারা৷ আগেও আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম৷ আমাদের মাঠ পর্যায়ের যাঁরা কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঐ ওষুধগুলো তাঁরা যেখানেই পাবেন, সেখান থেকেই যেন প্রত্যাহার করে নেন৷

ওষুধ শিল্পে যে শ্রমিকরা কাজ করেন, তাঁদের স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা আছে কি?

না, এটা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না৷ এটা শ্রমিকদের স্বার্থ যাঁরা দেখেন, তাঁদের কাজের মধ্যে পড়ে৷ এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেন৷ আমরা ওষুধের মানের বিষয়টা দেখি৷ মানুষ যথাযথভাবে ওষুধ পাচ্ছে কিনা, সেটা দেখি আমরা৷ ওষুধ প্রশাসনের একটা রূপকল্প আছে বলা বাহুল্য৷ সেটা হলো – ‘মানসম্পন্ন ওষুধ, সুস্থ জাতি'৷ এই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি৷

যন্ত্রপাতি আমদানিতে এই শিল্প কী ধরনের সুবিধা ভোগ করে থাকে?

আমি এটা আসলে নির্দিষ্ট করে জানি না৷ ওষুধ শিল্প কোনো যন্ত্রপাতির জন্য বিশেষ সুবিধা পায় কিনা৷ এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা নিশ্চয় বলতে পারবেন বিষয়টা৷

গ্রামের মানুষ যে ওষুধ পাচ্ছেন সেটা মানসম্পন্ন কিনা, তা আপনারা নিশ্চিত করেন কীভাবে?

শহরে বেশি বিক্রি হওয়ার কারণ, এখানে মানুষের বসবাসের হার অনেক বেশি৷ মানে ‘ডেনসিটি' শহরে অনেক বেশি৷ এখানে একটি বিল্ডিংয়ে দু'টো গ্রামের সমান লোক বাস করেন৷ ফলে যেখানে মানুষের চাহিদা বেশি, সেখানে সেই জিনিসও বেশি পাওয়া যাবে৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ আর সেটা যে কোনো কিছু হতে পারে৷ এখন প্রশ্ন হলো – গ্রামে ওষুধ সহজপ্রাপ্ত কিনা? বাংলাদেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া – যেখানেই যাবেন ওষুধের দোকান পাবেন৷ দেখবেন গ্রামের একটি দোকানে সুন্দর করে ওষুধ সাজানো আছে৷ ওষুধ কোম্পানিগুলোই তাদের মার্কেটিংয়ের জন্য ওষুধ সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে৷

ঐ ওষুধগুলো কি মানসম্পন্ন?

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শহরে যে ওষুধ বিক্রি হয়, গ্রামেও একই ওষুধ বিক্রি হয়৷ সব জায়গায় একই ওষুধ যায়৷ কারণ শহরে যে দামে বিক্রি হয়, গ্রামেও একই দামে বিক্রি হয়৷ ওষুধের দামটা কিন্তু ওষুধের গায়েই লেখা থাকে৷ ফলে কেউ বেশি দিয়ে নিতে পারেন না৷ তাছাড়া ওষুধ একই কাঁচামাল দিয়ে তৈরি৷ ফলে এখানে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'-এর কোনো সুযোগ নেই৷ সারাদেশে একই ওষুধ যাচ্ছে৷ আমাদের দেশে ৩০টি কোম্পানি ৯০ ভাগ ওষুধ উৎপাদন করে৷ এদের মার্কেট দেশব্যাপী৷ তাই আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে এবং সেটা সারাদেশেই যাচ্ছে৷ এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস৷

চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ লেখেন, যা দেশে নিষিদ্ধ৷ সেই ওষুধগুলোর ব্যাপারে আপনারা কি পদক্ষেপ নেন? 

বাংলাদেশের আইনে বলা আছে, কোনো চিকিৎসক অনিবন্ধিত ওষুধ লিখতে পারবেন না৷ কখনও কখনও বিশেষ কোনো রোগীর এই ধরনের কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়ে পড়লে এবং চিকিৎসক সেটা লিখলে, তাঁরা আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন৷ আমরা তখন একটা এনওসি দেই৷ সেটা দেখিয়ে সেটা আমদানি করতে হয়৷ তারপরই তিনি ঐ ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন৷ কিন্তু আইনগতভাবে কোনো ডাক্তার ঢালাওভাবে অনিবন্ধিত ওষুধ লিখতে পারেন না৷

নকল বা ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই তো অভিযান হচ্ছে...৷ অধিদপ্তর এক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করে?

এই অভিযানগুলো তো আমরাই চালাই৷ গত বছর আমরা ২ হাজার ১৬৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি৷ প্রত্যেকটিতে মামলা হয়েছে৷ আমাদের অফিসাররাই সেই মামলাগুলো করেছেন৷ আদালত তো বিচার করবে৷ কিন্তু কাউকে না কাউকে তো অভিযোগ দিতে হবে৷ সেই কাজটা আমরা করে থাকি৷ শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়, আমাদের অফিসাররা আলাদাভাবেও অভিযান চালাচ্ছে নকল বা ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ