দেশে ৩০টি কোম্পানি ৯০ ভাগ ওষুধ উৎপাদন করে৷ এদের মার্কেট দেশব্যাপী এবং ওষুধ খুবই মানসম্পন্ন ওষুধ৷ তাছাড়া একই কাঁচামাল থেকে ওষুধ তৈরি হচ্ছে৷ ফলে গ্রামে বা শহরে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'-এর কোনো সুযোগ নেই৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এই দৃঢ় বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন৷
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কতগুলো ওষুধ কোম্পানি আছে? আর এর সবগুলো কি বৈধ?
রুহুল আমিন: বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৩৬টি ‘ফাংশনাল' ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে মোট প্রতিষ্ঠান আছে ৮৫২টি৷ এর মধ্যে কিছু ‘নন ফাংশনাল'৷ কিছু কোম্পানির প্রোডাকশন ও মার্কেটিং হেল্ডআপ আছে, কিছু কোম্পানি আছে সাসপেন্ড অবস্থায়৷ সব মিলিয়ে ফাংশনাল আছে ৭৩৬টি৷ অর্থাৎ এগুলোর লাইসেন্স আছে৷ আর যেগুলোর লাইসেন্স আছে সেগুলো বৈধ কোম্পানি৷ মূলত যেগুলোর ফংশন আছে সেগুলোই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে৷ যেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তো নন ফাংশসাল৷ কাজেই তাদের কাজ করার কোনো সুযোগই নেই৷
ভেজাল ওষুধে মৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা
নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু সহ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ বাংলাদেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.Remmers
বাংলাদেশে ৭৬ শিশুর মৃত্যু
নব্বইয়ের দশকে ‘ফ্ল্যামোডল’ নামক এক প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ৭৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়৷ ঐ ঘটনায় অ্যাডফ্লেম কোম্পানির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালে৷ এতে তিনজনকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়৷ পরের বছর বিসিআই ফার্মা নামে আরেক কোম্পানির পরিচালকসহ (ছবি) ছয় জনকে একই অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ফ্ল্যামোডল সিরাপে ডাইইথাইলিন গ্লাইকল পাওয়া গিয়েছিল, যা শিল্প কারখানায় রাসায়নিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
২৮ শিশুর মৃত্যু, কিন্তু সবাই খালাস
রিড ফার্মা নামে এক ওষুধ প্রস্তুতকারীর তৈরি ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে ২৮ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ এনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২০০৯ সালে আদালতে মামলা করেছিল৷ কিন্তু তদন্তে গাফিলতির কথা বলে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ঐ কোম্পানির মালিকসহ পাঁচজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত৷ ২০০৯ সালে তোলা উপরের ছবিতে শারমীনকে দেখা যাচ্ছে৷ সেও ভেজাল ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল৷ পরে সুস্থ হয়৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ম্যালেরিয়ার ওষুধ নকল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০১০ সালে বিশ্বের ৬ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যান৷ এ সব মৃত্যুর জন্য নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী বলে মনে করা হয়৷ ২০১০ সালে ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ম্যালেরিয়ার ওষুধ নকল ছিল বলে জানানো হয়৷ ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ পরীক্ষা করে এ সব তথ্য পান গবেষকরা৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু
২০০৭-২০০৮ সালে চীন থেকে যাওয়া নকল হেপারিনের (যে ওষুধ রক্ত জমাট প্রতিহত করে) কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/chromorange/R. Roeder
নাইজেরিয়ায় শিশুর মৃত্যু
২০০৯ সালে ‘মাই পিকিন’ নামে একটি ভেজাল সিরাপ সেবনের কারণে ৮৪ জন শিশুর প্রাণ গিয়েছিল৷ সিরাপের মধ্যে ডাইইথাইলিন গ্লাইকল পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: DW/M. Kindzeka
হৃদরোগের ওষুধে ভেজাল
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সরকারি ‘পাঞ্জাব ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওলজি’ থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হৃদেরাগের ওষুধ খেয়ে ২০১২ সালে একশ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ পরে পরীক্ষা করে ওষুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গিয়েছিল৷ ছবিতে পাকিস্তানের একটি সরকারি হাসপাতালের সামনে রোগীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Merten
পানামায় কাশির সিরাপে বিষ
২০০৬ সালে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা না জেনে কাশির ওষুধে ডাইইথাইলিন গ্লাইকল মিশিয়েছিলেন৷ সেই ওষুধ খেয়ে ৩৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সেই সময় দাবি করা হয়েছিল৷ কয়েকটি চীনা কোম্পানি গ্লিসারিনের নামে এই বিষ পানামায় রপ্তানি করেছিল৷ ছবিতে পানামার এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C.Jasso
7 ছবি1 | 7
বাংলাদেশে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বড় কোনো ফ্যাক্টরি কি শিল্পের পর্যায়ে যেতে পেরেছে?
বাংলাদেশের প্রথম যে ১০টি সেক্টর আছে, তার মধ্যে ওষুধ শিল্প একটি৷ এই ওষুধ শিল্প দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত সফল একটি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচিত৷ অতত্রব ওষুধ শিল্প বড় কোনো শিল্প কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন করার আর কোনো সুযোগ নেই৷ এটা অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প হিসেবে সারাদেশেই বিবেচিত৷
কতগুলো কোম্পানির ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হয়?
এই মুহূর্তে ৫৪ বা ৫৫টি কোম্পানির ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে৷
ওষুধের মান রক্ষায় আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেন?
অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেই আমরা নেই৷ আপনারা জানেন যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ‘রেগুলেটর' হিসেবে কাজ করে৷ যে কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধ উৎপাদন করতে গেলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়৷ কাউকে লাইসেন্স নিতে হলে – সেটা এলোপ্যাথি হোক, হোমিওপ্যাথি হোক বা হারবাল হোক – বেশ কিছু শর্ত আছে যা তাকে পূরণ করতে হয়৷ একমাত্র তারপরই সে লাইসেন্স পেয়ে থাকে৷ শুধু তাই না, প্রতিটি ‘প্রোডাক্ট' বাজারে দিতে গেলে তাকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷
Director Drug Administration Ruhul Amin - MP3-Stereo
সেই শর্ত পূরণ করলে তবেই ঐ প্রোডাক্টটির রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলো গুড মেনুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস যথাযথভাবে অনুসরণ করে কিনা, সেটা দেখা হয়৷ তাছাড়া ডাব্লিউএইচও-র গাইডলাইনে বলা আছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গুড মেনুফ্যাকচারিং প্রাকটিস মেনে চলতে বাধ্য৷ এটা আইনেও বলা আছে৷ এগুলো আমরা নিয়মিত ‘মনিটরিং' করি৷ ওষুধের কারখানা, ওষুধের মার্কেট, ওষুধের ডিপো থেকে আমরা দৈবচয়ন ভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ করি৷ তারপর সেগুলো আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করে আমরা দেখি, মান ঠিক আছে কিনা৷ যদি কোনো প্রোডাক্টের মান নীচে থাকে, তাহলে আমরা ঐ প্রোডাক্টের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করি৷ পাশাপাশি সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করি৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনগতভাবে বাধ্য মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করতে৷
ওষুধ শিল্পের প্রধান সমস্যা কী?
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দ্রুত বিকাশমান ও বিস্তৃত একটি শিল্প৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সব ধরনের হাইডোস ওষুধ উৎপাদনে সক্ষম৷ সব ধরনের ‘সফিস্টিকেটেড' ওষুধ এখন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে৷ তবে এই শিল্পের কাঁচামাল অনেকটা আমদানি নির্ভর৷ সিংহভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আনতে হয়৷ এর জন্য যে অন্য প্রচেষ্টা চলছে না তা নয়, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শিল্প পার্ক হচ্ছে৷ এটা প্রতিষ্ঠিত হলে কাঁচামালের সমস্যারও নিরসন হয়ে যাবে৷ আর সেটা করা গেলে এই শিল্পের বড় অন্তরায় দূর করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি৷
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পরামর্শ
সবাইকেই কোনো না কোনো সময় ওষুধ খেতে হয়৷ কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই ওষুধের অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে৷ এতে ভীত না হয়ে রোগীরা যেন সতর্ক হতে পারেন, সেরকম কিছু পরামর্শ পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আয়রন ট্যাবলেট যন্ত্রণাদায়ক
আয়রন ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু এতে আবার পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দেয় বা পেটব্যথা হয় বা খারাপ লাগে অনেকেরই৷ তাই ‘‘খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট না খেয়ে সকালের নাস্তার সাথে সেবন করুন৷’’ এই পরামর্শ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের কম্পাউন্ডার, মানে ফার্মেসি কর্মী৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়
এমন অনেক নতুন রোগী আছেন, যাঁদের ‘ব্লাড সুগার’ বা ডায়াবেটিস কমানোর ওষুধ খাওয়ার পর রাতে ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়৷ আসলে অনেক ওষুধের মধ্যেই মূত্রবর্ধক প্রভাব থাকে৷ যাঁদের এ সমস্যা হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ – রাতের ওষুধটি একটু আগেই খেয়ে নিন৷ তবে সব রোগী সমান নন৷ তাই রোগী আর অন্য আরো কোনো ওষুধ খান কিনা, সেটাও জানা দরকার৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com
ট্যাবলেট সেবনের পর ডায়রিয়া
ওষুধ খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হয় অনেকের৷ ওষুধের মধ্যএ থাকা ‘ল্যাকটোজ’-এর কারণেই সাধারণত এমনটা হয়৷ অর্থাৎ তাঁদের ল্যাকটোজের অ্যালার্জি রয়েছে৷ এক্ষেত্রে ডাক্তার বা ফার্মেসি কর্মীদের সাথে আলোচনা করে ট্যাবলেটের বদলে ক্যাপসুল বা তরল ওষুধ দেয়া যেতে পারে৷ অবশ্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনেও এরকম হতে পারে৷ এ অবস্থা তিন দিনের বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
ওষুধ সেবনে চোখ জ্বালা
কিছু ওষুধ সেবনে চোখ জ্বালা করে, চোখটা শুকিয়ে যায় বা পানি গড়ায়৷ বিশেষ করে যাঁরা ‘কন্ট্যাক্ট লেন্স’ ব্যবহার করেন৷ যে কোনো ফার্মেসিই চোখের জন্য ড্রপ পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে সেগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভয় নেই
ওষুধ খাওয়ার ফলে যাঁদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাঁরা ভয় না পেয়ে বরং তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে সরাসরি কথা বলুন৷ এছাড়া ফার্মেসি কর্মীদের সাথেও কথা বলতে পারেন৷ ডাক্তারের তুলনায় তাঁদের সময় কিছুটা বেশি থাকায় তাঁরা রোগীকে এ ব্যপারে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবেন৷ এর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করলেও অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হতে পারে৷
ছবি: imago
খোলাখুলি কথা বলুন
অনেকেই ওষুদের প্যাকেট থেকে ওষুধ সেবন বা ব্যবহারের নিয়মাবলীতে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়েই ভয়ে পেয়ে যান৷ তবে সবারই যে একই রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে, সেরকম কোনো কথা নেই৷ কারণ প্রতিটি মানুষই আলাদা! তাই ভয় না পেয়ে এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলুন৷ মনে রাখতে হবে সুস্থ হতেই মানুষ ওষুধ খায়, অসুখে আক্রান্ত হতে নয়৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ওষুধ ককটেল
‘ওষুধ ককটেল’, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ একসাথে খেলে এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে৷ তাই নতুন কোনো ওষুধ শুরু করার আগে রোগীর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন৷ শুধু তাই নয়, ডাক্তারকে এ কথাও জানানো জরুরি যে রোগী অন্য কোনো ওষুধ সেবন করেন কিনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
কতভাগ কাঁচামাল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়?
আমার মনে হয়, ৯০ ভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আনা হয়...৷ সংখ্যাটা অবশ্য আরো বেশি হতে পারে৷
কোন দেশ থেকে কাঁচামাল আসে?
ইউরোপ থেকে আসে, চায়না থেকে আসে, ইন্ডিয়া থেকেও আসে৷
কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর ওষুধের ব্যাপারে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
আদালতের নির্দেশনা আমরা যথাযথভাবে পালন করেছি৷ খুব শিগগিরই একটা রিপোর্টও আদালতে উপাস্থাপন করা হবে৷ আমরা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তাদের কোনো ওষুধ যদি বাজারে থাকে সেটা যেন প্রত্যাহার করে নেয় তারা৷ আগেও আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম৷ আমাদের মাঠ পর্যায়ের যাঁরা কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঐ ওষুধগুলো তাঁরা যেখানেই পাবেন, সেখান থেকেই যেন প্রত্যাহার করে নেন৷
ওষুধ শিল্পে যে শ্রমিকরা কাজ করেন, তাঁদের স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা আছে কি?
না, এটা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না৷ এটা শ্রমিকদের স্বার্থ যাঁরা দেখেন, তাঁদের কাজের মধ্যে পড়ে৷ এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেন৷ আমরা ওষুধের মানের বিষয়টা দেখি৷ মানুষ যথাযথভাবে ওষুধ পাচ্ছে কিনা, সেটা দেখি আমরা৷ ওষুধ প্রশাসনের একটা রূপকল্প আছে বলা বাহুল্য৷ সেটা হলো – ‘মানসম্পন্ন ওষুধ, সুস্থ জাতি'৷ এই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি৷
যন্ত্রপাতি আমদানিতে এই শিল্প কী ধরনের সুবিধা ভোগ করে থাকে?
আমি এটা আসলে নির্দিষ্ট করে জানি না৷ ওষুধ শিল্প কোনো যন্ত্রপাতির জন্য বিশেষ সুবিধা পায় কিনা৷ এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা নিশ্চয় বলতে পারবেন বিষয়টা৷
ওষুধের সাথে যেসব খাবার খাবেন না
অ্যান্টিবায়োটিক আর দুধ যে একসাথে খাওয়া ঠিক নয়, সেকথা অনেকেই জানেন৷ তবে এবার জেনে নিন এমন আরো অনেক ওষুধ ও খাবারের কথা, যেগুলো একসাথে খেলে শরীরেরে উপকার না হয়ে ক্ষতিও হতে পারে!
ছবি: Colourbox/Odilon Dimier/6PA/MAXPPP
গ্রেপফ্রুট আর ট্যাবলেট একসাথে নয়!
ওষুধকে পুরোপুরি কাজে লাগতে গ্রেপফ্রুট বা স্বাদে টক, বড় কমলাজাতীয় ফলের ভেষজ উপাদান অন্ত্র বা পেটের এনজাইমকে দমন করে বা বাধা দেয়৷ তাই ওষুধের সাথে গ্রেপফ্রুট না খাওয়াই স্রেয়৷ অর্থাৎ চিকিৎসা চলাকালীন গ্রেপফ্রুটকে একেবারে দূরে রাখুন৷
ছবি: Fotolia
কফি বা চায়ের সাথে আয়রন ট্যাবলেট নয়!
আয়রন ট্যাবলেটের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করা৷ কিন্তু এই ট্যাবলেটের সাথে যদি চা বা কফি পান করা হয়, তাহলে তা মুত্রের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়৷ ফলে আয়রন ট্যাবলেটের উপকারিতাও কমে যায়৷ তাই রক্তস্বল্পতার কারণে যারা আয়রন ট্যাবলেট খান, তারা অবশ্যই ট্যাবলেট সেবনের দু’ঘণ্টা আগে অথবা পরে চা বা কফি পান করবেন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
রক্তের ঘনত্ব কমানোর ওষুধের সাথে সবুজ সবজি নয়!
ব্রকোলির মতো সবুজ সবজি বা সালাদে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’, যা রক্ত জমাট না বাঁধতে সাহায্য করে৷ তবে যারা রক্তের ঘনত্ব কমাতে, বিশেষ করে পা ফুলে যাওয়ার জন্য ওষুধ খান, তাদের বলছি, সেসব ওষুধের সাথে সবুজ সবজি খেলে ওষুধের উপকারিতা কমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
অ্যান্টিবায়োটিক আর দুধ একসাথে নয়!
অ্যান্টিবায়োটিকের বিশেষ কিছু উপাদান ক্যালশিয়ামের সাথে মিশে দানা বা জট হয়ে যায়৷ ফলে তা পেটের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করতে পারে না৷ তাই অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে দুধ খাওয়া উচিত নয়৷ তবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার দু’ণ্টা আগে বা পরে দুধ পানে বাধা নেই৷
ছবি: Colourbox
রেডিমেড মাংসের সাথে ডিপ্রেশনের ওষুধ নয়!
তৈরি মাংসের খাবারে, যা মূলত পশ্চিমা বিশ্বেই বেশি পাওয়া যায়, থাকে প্রচুর পরিমাণে টিরামিন৷ তাই যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এ সব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো৷ কারণ তা সুস্থ হওয়া দীর্ঘায়িত করে এবং এতে উচ্চরক্তচাপও হতে পারে৷
ছবি: imago/McPHOTO
চিপসের সাথে ‘কর্টিসোন’ নয়!
কর্টিসোন হলো এক ধরণের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিনিঃসৃত হরমোন৷ যখন কেউ কর্টিসোন সেবন করবেন, তখন কোনোভাবেই তার সঙ্গে চিপস খাবেন না, বিশেষ করে কর্টিসোন ওষুধটি যদি ত্বকের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে৷ কারণ কর্টিসোনে থাকা ন্যাট্রিউম পেট ব্যথা ও গলা ব্যথার কারণ হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Airio
সেরিয়ালের সাথে ‘প্যারাসিটামল’ খাবেন না
সেরিয়াল বা বিভিন্ন দানায় থাকা আঁশ ব্যথার ওষুধকে ভালোভাবে কাজ করতে তো দেয়ই না, বরং বাঁধার সৃষ্টি করে৷ অর্থাৎ পেট বা অন্ত্রকে দমন করে থাকে সেরিয়াল৷ তাই শষ্যদানা, আঁশ জাতীয় খাবার কোনো ব্যথার ওষুধের সাথে খাবেন না, কেমন?
ছবি: Colourbox/zemgalietis
অ্যাজমার ওষুধ আর গোলমরিচ একসাথে নয়!
যারা অ্যাজমা বা হাঁপানির ওষুধ সেবন করেন, তাদের গোলমরিচ না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷ কারণ গবেষণায় বলছে, গোলমরিচের ঝাঁঝ অ্যাজমার ওষুধের কর্মক্ষমতা কমিয়ে তার গতিও ধীর করে দেয়৷ তাই যাদের হাঁপানি আছে, তারা গোলমরিচ এড়িয়ে চলুন৷
ছবি: macroart - Fotolia.com
পরামর্শ
যে কোনো ওষুধ সেবন করার আগে ওষুধের ভালো-মন্দ দিকগুলো ডাক্তারের কাছে জেনে নিন এবংওষুধের সাথে থাকা ছোট্ট তথ্যপুস্তিকাটি ফেলে না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন৷ ওষুধ সুস্থ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন৷ আপনার খাদ্যাভ্যাস যেন আপনার চিকিৎসার পথে বাধা সৃষ্টি না করে৷ এদিকে নজর রাখলেই তাড়াতাড়ি ও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব৷
ছবি: Colourbox/Odilon Dimier/6PA/MAXPPP
9 ছবি1 | 9
গ্রামের মানুষ যে ওষুধ পাচ্ছেন সেটা মানসম্পন্ন কিনা, তা আপনারা নিশ্চিত করেন কীভাবে?
শহরে বেশি বিক্রি হওয়ার কারণ, এখানে মানুষের বসবাসের হার অনেক বেশি৷ মানে ‘ডেনসিটি' শহরে অনেক বেশি৷ এখানে একটি বিল্ডিংয়ে দু'টো গ্রামের সমান লোক বাস করেন৷ ফলে যেখানে মানুষের চাহিদা বেশি, সেখানে সেই জিনিসও বেশি পাওয়া যাবে৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ আর সেটা যে কোনো কিছু হতে পারে৷ এখন প্রশ্ন হলো – গ্রামে ওষুধ সহজপ্রাপ্ত কিনা? বাংলাদেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া – যেখানেই যাবেন ওষুধের দোকান পাবেন৷ দেখবেন গ্রামের একটি দোকানে সুন্দর করে ওষুধ সাজানো আছে৷ ওষুধ কোম্পানিগুলোই তাদের মার্কেটিংয়ের জন্য ওষুধ সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে৷
ঐ ওষুধগুলো কি মানসম্পন্ন?
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শহরে যে ওষুধ বিক্রি হয়, গ্রামেও একই ওষুধ বিক্রি হয়৷ সব জায়গায় একই ওষুধ যায়৷ কারণ শহরে যে দামে বিক্রি হয়, গ্রামেও একই দামে বিক্রি হয়৷ ওষুধের দামটা কিন্তু ওষুধের গায়েই লেখা থাকে৷ ফলে কেউ বেশি দিয়ে নিতে পারেন না৷ তাছাড়া ওষুধ একই কাঁচামাল দিয়ে তৈরি৷ ফলে এখানে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'-এর কোনো সুযোগ নেই৷ সারাদেশে একই ওষুধ যাচ্ছে৷ আমাদের দেশে ৩০টি কোম্পানি ৯০ ভাগ ওষুধ উৎপাদন করে৷ এদের মার্কেট দেশব্যাপী৷ তাই আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে এবং সেটা সারাদেশেই যাচ্ছে৷ এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস৷
চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ লেখেন, যা দেশে নিষিদ্ধ৷ সেই ওষুধগুলোর ব্যাপারে আপনারা কি পদক্ষেপ নেন?
বাংলাদেশের আইনে বলা আছে, কোনো চিকিৎসক অনিবন্ধিত ওষুধ লিখতে পারবেন না৷ কখনও কখনও বিশেষ কোনো রোগীর এই ধরনের কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়ে পড়লে এবং চিকিৎসক সেটা লিখলে, তাঁরা আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন৷ আমরা তখন একটা এনওসি দেই৷ সেটা দেখিয়ে সেটা আমদানি করতে হয়৷ তারপরই তিনি ঐ ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন৷ কিন্তু আইনগতভাবে কোনো ডাক্তার ঢালাওভাবে অনিবন্ধিত ওষুধ লিখতে পারেন না৷
নকল বা ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই তো অভিযান হচ্ছে...৷ অধিদপ্তর এক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করে?
এই অভিযানগুলো তো আমরাই চালাই৷ গত বছর আমরা ২ হাজার ১৬৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি৷ প্রত্যেকটিতে মামলা হয়েছে৷ আমাদের অফিসাররাই সেই মামলাগুলো করেছেন৷ আদালত তো বিচার করবে৷ কিন্তু কাউকে না কাউকে তো অভিযোগ দিতে হবে৷ সেই কাজটা আমরা করে থাকি৷ শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়, আমাদের অফিসাররা আলাদাভাবেও অভিযান চালাচ্ছে নকল বা ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷