২০১৭ সালে অনেক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীর উইগুর সম্প্রদায়ের স্ত্রী-রা হারিয়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে ৪০ জনের মতো মু্ক্তি পেয়েছেন৷ কিন্তু এই মুক্তি পেতে দাম দিতে হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বার্তা সংস্থা এএফপি'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওই নারীদের স্বামীরা দাবি করেছেন, ইসলামে হারাম, এমন কাজ তাঁদের করতে হয়েছে৷ চীনা সমাজে ‘খাপ খাইয়ে নেবার জন্য' তাঁদের এসব কাজ করতে হচ্ছে৷
ইসলামী উগ্রবাদ দমনের নামে চীনের জিনজিয়ান প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় দশ লাখ উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ চীনা কর্তৃপক্ষ বরাবরই একে ‘কারিগরি শিক্ষা প্রদান কেন্দ্র' বলে দাবি করে আসছে৷
হারিয়ে যাওয়া নারীরাও এসব ক্যাম্পে ছিলেন৷ মু্ক্তি পাবার পর কারো কারো স্বামীর সঙ্গে দেখা হয়েছে৷
তুরস্কে কেমন আছে উইগুর মুসলিমরা
বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জাতি চীনের উইগুর মুসলিমরা৷ এই সম্প্রদায়ের অনেকেই বসবাস করছেন তুরস্কে৷ সেখানেও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
উইগুরদের পরিচয়
উইগুররা মূলত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত একটি মুসলিম সম্প্রদায়৷ চীনের স্বিকৃত ৫৫টি সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি তাঁরা৷ চীন ছাড়াও কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক ও সৌদি আরবেও এই জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/H. H. Young
চীনা নিপীড়ন
চীনে উইগুরদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা-নিষেধ আরোপ রয়েছে৷ উইগুরসহ দেশটির ১০ লাখের বেশি মুসলমানদের আলাদা নজরদারিতে রেখেছে সরকার৷ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতিকে বন্দীদশার সাথে তুলনা করেছে৷ তবে ইসলামি জঙ্গীবাদ ঠেকাতে এমন উদ্যোগ বলে দাবি চীনের৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
উইগুরদের তুর্কি যোগাযোগ
তুর্কি ভাষাভাষি উইগুরদের তুরস্কের সংস্কৃতির সাথে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে৷ চীনের জিনজিয়াংয়ে তাঁদের করুণ পরিস্থিতি নিয়ে একমাত্র এই দেশটিই নিয়মিত উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ ১৯৬০-এর দশক থেকে উইগুরদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ও তুরস্ক৷ ‘ইস্ট তুর্কেস্থান ন্যাশনাল সেন্টার’ নামের একটি সংস্থার হিসাবে দেশটিতে বর্তমানে ৩৫,০০০ উইগুর বসবাস করছে৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
তুরস্কেও বিপাকে উইগুররা
তিন-চার বছর আগ পর্যন্ত তুরস্কে বসবাসে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি উইগুরদের৷ কিন্তু বেইজিংয়ের সাথে আংকারার সুসম্পর্কের জের ধরে সেই ধারার পরিবর্তন হয়েছে৷ নির্বাসিত উইগুরদের সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি অফ ইস্ট তুর্কেস্তান’-র প্রধান সাইদ তুমতুর্ক জানান, তাদের কিছু সদস্য সিরিয়ার বাসার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদি লড়াইয়ে অংশ নেয়ায় চীন তুরস্কের উপর চাপ দিয়েছে৷ এতে উইগুরদের বিরুদ্ধে তুরস্কের মনোভাবও পাল্টে গেছে৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা
২০১৫ সালে স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে বাধ্য হয়ে তুরস্কে পাড়ি জমান নূরমুহাম্মদ৷ পরিবারের অন্যরা পেলেও বসবাস আর কাজ করার অনুমতি পাননি তিনি৷ এমন অবস্থায় তুরস্ক সরকার তাঁকে বের করে দেয়ার শঙ্কায় রয়েছে নূরমুহাম্মদ৷ জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
চীনে বন্দী সন্তান
২০১৬ সালে দাদা-দাদির সাথে দেখা করতে চীনের জিনজিয়াংয়ে যান নূরমুহাম্মদের সন্তান পাকজাত৷ পৌছানোর পর বিমানবন্দর থেকেই চীন সরকার তাকে বন্দী করে বলে খবর পেয়েছেন তাঁরা৷ ‘‘আমার সন্তানকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন সে ১৬ বছরের এক শিশু৷ তার ছোট ভাই-বোনরা অনবরত প্রশ্ন করে, বড় ভাইয়ের সাথে তারা কবে একসাথ হবে?’’ রয়টার্সকে জানান পাকজাতের মা গুলজিন মাহমুত৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
পাসপোর্ট জটিলতা
তুরস্কে চীনা দূতাবাস সেখানে বসবাসরতদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তা আর নবায়ন করছে না৷ একটি কাগজ দেয়া হয়, যার মাধ্যমে তাঁরা চীনে ফেরার সুযোগ পান৷ অন্যদিকে ২০১৭ সালে এক উজবেক নাগরিক ইস্তানবুলে নাইট ক্লাবে হামলা চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যার পর তুরস্ক সরকারও কিছুটা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে৷ সেখানে কাজের অনুমতি না পাওয়ায় দেশটিতে বসবাসরত উইগুররা তাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
আশার আলো
চীনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রায়ই তুরস্কে প্রতিবাদে অংশ নেন উইগুর জনগোষ্ঠী৷ তাঁদের অধিকার আদায়ে তুরস্কই এখনও একমাত্র ভরসা৷ গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু উইগুরদের বিরুদ্ধে চীনের দুর্ব্যবহারের সমালোচনা করেন ও ধর্মপালনের স্বাধিনতা দেয়ার আহ্বান জানান, যা উইগুরদের নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
8 ছবি1 | 8
‘‘তিনি আমাকে বলেছেন যে, তাঁকে শুয়োরের মাংস খেতে এবং মদ পান করতে বাধ্য করা হয়েছে, এমনকি এখনো করতে হচ্ছে,'' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীর স্বামী বলেন এএফপি'কে৷ তিনি তাঁর স্ত্রীকে দেখতে জিনজিয়ান প্রদেশে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, এই নারীদের মুক্তি দিলেও তাঁদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে কর্তৃপক্ষ৷
‘‘কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাঁর আচরণ দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে যে, তিনি আর কোনো প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত নন,'' বলেন ঐ নারীর স্বামী৷
সম্প্রতি উইগুর জনগোষ্ঠীর ওপর চীন সরকারের খবরদারির বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চরম সমালোচনা হলে, গত দু'মাস ধরে এই নারীদের আস্তে আস্তে ছাড়তে শুরু করে তারা৷