রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, সমাজবিজ্ঞানে পড়তাম: রাইটস অ্যান্ড ডিউটিজ, অধিকার এবং দায়িত্ব বা কর্তব্য; একটি ছাড়া নাকি আরেকটি চলে না৷ অবিবাহিত মাকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেই নীতিই অনুসরণ করলেন৷
বিজ্ঞাপন
যে পুরুষ কোনো মহিলার সঙ্গে সাময়িক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, কিন্তু তার ফলশ্রুতির কথা চিন্তা করেননি; যিনি সন্তানের জন্মের কথা হয়ত জানতেও পারেননি; কিংবা জানতে পারলেও নির্লিপ্ত থেকেছেন, পিতাসুলভ কোনো দায়িত্ব নেননি, নিতে চাননি অথবা পারেননি৷ এমন একটি ক্ষেত্রে পিতৃত্ব কথাটি জৈবিক, জীববিজ্ঞানগত পিতৃত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে৷
এমনিতেই পিতৃত্ব কথাটি কর্তৃত্ব কথাটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ কর্তৃত্ব মানে শাসন-শৃঙ্খলা, যেমন মাতৃত্ব মানে মায়া-মমতা৷ অন্তত সাধারণ মানুষ তা-ই বোঝে৷ কে জানে কোন প্রস্তরযুগে পিতা শিকার ধরে আনতেন, মা সেই মাংস পুড়িয়ে সন্তানকে খাওয়াতেন৷ পুরুষ করবে রক্ষণাবেক্ষণ, নারী করবে সন্তানধারণ, ইত্যাদি কত লতায় পাতায় গজিয়ে ওঠা কত যুগের, কত জীবনের সংস্কার জড়িয়ে আছে নারীপুরুষের এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও মিলনে৷
হবু মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই৷ কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এই পথকে সহজ করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়েই এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW
হবু মায়ের অনুভূতি
‘মা’ – এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই৷ পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু৷
ছবি: imago/CTK Photo
স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
হবু মায়ের দিনের শুরু
‘‘সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন৷ তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না৷’’ এমনটাই বলেন জার্মান ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
সুন্দর ত্বক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষকরে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/studiovespa
গর্ভকালীন হালকা ব্যায়াম
ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
হালকা খাবার
এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ ভেষজ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ ধাত্রী হাইকে বলেন, ‘‘এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া তার সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না৷’’
পানি
একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
চুলের যত্ন
সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন রান্নাঘর থেকে দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ সাদা দই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Masson
মুক্ত বাতাস সেবন
‘‘শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়টিতে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটি খুব ভালো, তবে গায়ে জোড় দিয়ে কোনোরকম ব্যায়াম করা উচিত নয়৷ এতে হিতে বিপরিত হতে পারে৷ অন্য ব্যায়াম, অর্থাৎ যাঁরা সাঁতার জানেন তাঁদের জন্য কিছুক্ষণ পানিতে থাকা কোমর এবং পিঠে বেশ আরাম দেয়৷’’ বলেন ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/emil umdorf
দাঁত ব্রাশ
গর্ভবতী মাকে যেন সব সময় আকর্ষণীয় লাগে, সেজন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ তাই দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে ক্যামেলিয়া চা দিয়ে কুলি করতে পারেন৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে জানান ধাত্রী শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
হোম স্পা
‘‘সন্ধ্যায় বাথটবে কুসুম কুসুম গরম পানি ভর্তি করে তাতে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিন, যা ত্বককে মসৃণ করবে৷ কিছুক্ষণ টবে থাকার পর উঠে গায়ে তেল মালিশও করতে পারেন৷ চাইলে বাথটবে হবু মায়ের সঙ্গী বা কোচ হতে পারেন হবু বাবা৷’’ বলেন হাইকে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
পায়ের যত্ন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ তাই সকালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই পা খানিকটা উঁচু করে একটু একটু করে ঘোরাবেন৷ এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷
ছবি: superfood - Fotolia.com
ডাক্তারি ‘চেকআপ’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন৷ আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শারীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি ‘চেকআপ’-ও৷
ছবি: DW
13 ছবি1 | 13
পুরুষকার সম্বলিত পুরুষের চিন্তা: দেশ-রাজ্য তো জয় করলাম; কিন্তু তা বর্তাবে যে সন্তানের উপর, সে আমার নিজের তো? এই বুনিয়াদি অবিশ্বাস থেকেই লক্ষ লক্ষ নিয়মকানুন, রীতিনীতি, নীতিমালা, আইনকানুনের জন্ম৷ যেমন বাবার জ্ঞাতসারে এবং তাঁর অনুমতি নিয়ে তবেই সন্তান প্রতিপালনের ভার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে৷ থুড়ি, প্রতিপালন না বলে অভিভাবকত্ব বলা উচিত ছিল৷ তফাৎটা বুঝলেন না? মা প্রতিপালন করবে না তো কে প্রতিপালন করবে? ওটা তো তাঁর কর্তব্য, মায়ের কর্তব্য, মা-রা চিরকাল যেটা কোনোরকম পাল্টা অধিকার ছাড়াই করে এসেছেন৷
আর অভিভাবকত্ব ব্যাপারটা হলো পুরোপুরি পুরুষালি৷ ‘ওয়ার্ড' অর্থাৎ নাবালক বা প্রতিপাল্যদের কারোকে কিছু করতে গেলে আগে এসে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে৷ কেন যাবি? কোথায় যাবি? কখন ফিরবি? আজ কেন? কাল নয় কেন? এ সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে৷ প্রতিপাল্য আবার যদি মেয়ে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে ডাক পড়বে ‘মা' নামধারী সেই প্রতিপালিকার৷ মাকে তখন শুনতে হবে: ‘এই যে তোমার মেয়ে', ‘ঐ যে তোমার সুপুত্তুর'৷ অর্থাৎ যত দোষ মায়ের, যত শাসন পিতৃদেবের৷
হঠাৎ সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারক এসে যদি বাপ-পিতেমোর আমলের ওরকম একটা... তা বাপ-পিতেমো না বলে কি নানি-দাদির আমলের কথা বলতে হবে? তা-ই সই: নানি-দাদির আমলের একটা প্রথা বদলে দিতে চান, তাহলে...