সরকার-সংশ্লিষ্টরাও এখন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন৷ এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারের দায়ও স্বীকার করা হচ্ছে৷ এটা কি ধর্ষণ ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে সরকারের দীর্ঘস্থায়ী কঠোর অবস্থানের লক্ষণ?
ছবি: Sazzad Hossain/DW
বিজ্ঞাপন
সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সরকার দায় এড়াতে পারে না৷ মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই দেয়া হবে না৷ তবে তিনি সবার প্রতি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করার দরকার নেই৷ সরকারই ব্যবস্থা নিচ্ছে৷’’
সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেল থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ধর্ষণ ও নারীর যৌন নিপীড়নের প্রায় সব ঘটনাতেই প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আসছে৷ প্রকাশ পাচ্ছে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের নামও৷ তাদের বহিস্কার করা হচ্ছে, আবার অনুপ্রবেশকারীও বলা হচ্ছে৷ সরকারের দায় আছে বললেও দলের দায়ের বিষয়ে কিছু বলেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক৷
ওবায়দুল কাদের আসলে এলাকার লোকজনকে শান্ত করার একটি কৌশল নিয়েছেন: খুশি কবির
This browser does not support the audio element.
এ প্রসঙ্গে নারী নেত্রী খুশি কবির বলেন, ‘‘এতদিন ওবায়দুল কাদের সাহেব কোনো কথা বলেননি৷ কিন্তু এবার যখন তার এলাকা নোয়াখালীতে এক নারীকে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটলো তখন তিনি কথা বলছেন৷ আসলে তিনি তার এলাকার লোকজনকে শান্ত করার কৌশল নিয়েছেন৷ এর আগে দেশে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি? তখন তো তিনি কথা বলেননি৷ আসলে এটা দায় এড়ানোর একটি কৌশল৷’’
‘‘তারা বলেন আগের সরকারের আমলেও এরকম হয়েছে৷ আমরা তো বলিনি যে হয়নি৷ তাই বলে এই সরকারের আমলে ওই অপরাধগুলো বৈধ হয়ে গেল?,’’ প্রশ্ন এই নারী নেত্রীর৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীরা এক দিনে হয়নি৷ তারা দলীয় ক্ষমতার জোরে এবং পুলিশের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে৷ পুলিশ নির্যাতিতদের পক্ষে কাজ করে না, কাজ করে ক্ষমতাবনদের পক্ষে৷ ফলে অনেক নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা জানাই যায় না৷বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কারণে যেগুলো জানা যায়, সেগুলো নিয়েই একটু তৎপরতা দেখা যায় বলে তারা মনে করেন৷
কোভিড মহামারির সঙ্গে বাংলাদেশে ধর্ষণের মহামারি শুরু হয়ে গেছে: ড. মিজানুর রহমান
This browser does not support the audio element.
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপব ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘কোভিড মহামারির সঙ্গে বাংলাদেশে ধর্ষণের মহামারি শুরু হয়ে গেছে৷ আর এই মহামারি ঠেকাতে সরকারের কোনো অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা আমরা দেখছি না৷ এখানে প্রধানমন্ত্রী না বললে কিছু হয় না৷ তাই ওবায়দুল কাদের সাহেব যা-ই বলুন না কেন আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে পারছি না৷’’
ড. মিজান বলেন, ‘‘এত কথা বলে লাভ কী? রাজনৈতিক দলগুলো কি পরিশুদ্ধ হওয়াার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?’’
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আরো বলেন,যারা বিবৃতি দিয়ে বলেন ধর্ষক বা অপরাধীরা অনুপ্রবেশকারী, তারা কিন্তু শিকার করে নিচ্ছেন যে রাজনৈতিক পরিচয়েই তারা অপরাধ করেছেন৷ এখন তার দায় অন্যদলের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন৷
তাই তিনি মনে করেন, ‘‘এখন যে নতুন ধরনের বিবৃতি দিয়ে শাস্তির কথা বলা হচ্ছে, সরকারে দায়ের কথা বলা হচ্ছে, এটাও দায় এড়ানোর কৌশল৷ আসলে কাজে না দেখানো পর্যন্ত তাদের কথায় আস্থা রাখা যায় না৷’’
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি
একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচারের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে৷ এইসময় বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
হাতাহাতি
ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের মুখোমুখি ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীরা৷ ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মঙ্গলবার ১২টার দিকে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা৷ এরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেন প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, লেখক, কবি, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও নারী অধিকারকর্মীরা৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
পুলিশের ব্যারিকেড
বেলা সোয়া ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় থেকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ঘুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়৷ এ সময় পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের হাতাহাতি হয়৷ পরে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
মঙ্গলবারের বিক্ষোভ থেকে ধর্ষক ও নিপীড়কদের শাস্তির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পদত্যাগও দাবি করা হয়৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
স্লোগান
‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষণ পোষে, সেই রাষ্ট্র চাই না’, ‘আমার বোনকে ধর্ষণ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নিপীড়ক যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’- ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শাহবাগ ও তার আশেপাশের এলাকা৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
সঙ্গীকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে
ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য মাহমুদা দীপা বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন৷ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গীরা৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
সোমবার থেকে বিক্ষোভ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও রবিবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ ঢাকায় এমন এক বিক্ষোভে অংশ নেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর৷ এই সময় তিনি বলেন, ‘‘এই গণধর্ষণের ঘটনা দেশের আইনি ব্যবস্থার মুখোশ খুলে দিচ্ছে৷ আজকে এই আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের সব বিভাগে দুর্বৃত্তায়ন করেছে৷’’
ছবি: Sazzad Hossain/DW
মশাল মিছিল
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী মশাল মিছিল বের করে ছাত্র ফেডারেশন৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
অবস্থান কর্মসূচি
ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোমবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ মঙ্গলবারও তাদের দেখা গেছে৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
উত্তরায় অবরোধ
উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় মঙ্গলবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
হাতে হাত
উত্তরায় গণজমায়েতে হাতে হাত রেখে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন অনেকে।
ছবি: Sazzad Hossain/DW
যানজট
আন্দোলনের কারণে উত্তরায় যানজট দেখা দেয়৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
একাত্মতা প্রকাশ
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাবারক হোসেন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ গিয়েছিলেন৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
শিশুসহ অংশগ্রহণ
এক শিক্ষার্থী শিশুসহ ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন৷