1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রাহকদের টাকার কী হবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ জুলাই ২০২০

দেরিতে হলেও ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়৷ দায়ী বিতরণ কোম্পানিগুলোর ২৯০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু গ্রাহকরা কি তাদের টাকা ফেরত পাবেন?

LED Glühbirne Halogen
ছবি: DW/G. Rueter

৩০ জুনের মধ্যে মার্চ, এপ্রিল, মে, এই তিন মাসের বিল জরিমানা ছাড়া জমা দেয়ার সুবিধা দিয়েছিল সরকার৷ পরবর্তীতে বিল ধরা হয়েছে একসঙ্গে, মিটারের রিডিং না নিয়েই৷ কিন্তু প্রকৃত বিলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিল আসায় কেউ কেউ বিদ্যুৎ বিল জমা দেননি৷ বিল না দিলে ৩০ জুনের পর সংযোগ বিছিন্ন করা হবে এমন ঘোষণায় অনেকে আবার অতিরিক্ত টাকাই জমা দিয়েছেন৷

গ্রাহকদের কথা
কলাবাগান এলাকার ফরিদ উদ্দিন আহমেদের তিন মাসের বিল এসেছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ৷ তিনি কয়েকদিন বিদ্যুৎ অফিসে ঘোরাঘুরি করেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি৷ অবশেষে ৩০ জুন লাইন কাটার ভয়ে টাকা জমা দেন৷ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিভাগই ভুতুড়ে বিলের কথা স্বীকার করেছে৷ কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ বিল আবার জমা দিতেও বাধ্য করেছে৷ এখন আমাদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত বিল নেয়া হলো সেটা ফেরত দেয়া হোক৷’’

বনশ্রী এলকার মাহফুজুর রহমানেরও তিন মাসে চারগুণ বেশি বিল এসেছে৷ মাসে যেখানে এক হাজার টাকার মতো বিল হয় সেখানে তিন মাসে এসেছে ১২ হাজার টাকারও বেশি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার যা আয় তাতে এক মাসে এই বিল আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়৷ তাই আমি বিল দেইনি৷ যদি লাইন কেটে দেয় আমার কিছুই করার থাকবে না৷’’

তিনি অভিযোগ জমা দিয়েছেন, আশা করছেন বিল সংশোধন করে দেয়া হবে৷ আবেদন জানিয়েছেন কিস্তিতে পরিশাধ করার সুযোগ দেয়ারও৷

কাউসার আমির আলি

This browser does not support the audio element.

কত অভিযোগ?
ঢাকাসহ সারা দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক আছে প্রায় চার কোটি৷ এর মধ্যে ঢাকার বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত এক লাখ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর কোনটিরই এখনও নিষ্পত্তি তারা করেনি৷ তবে বাস্তবে অভিযোগের সংখ্যা আরো বেশি৷ কারণ অনেকেই লিখিতভাবে জানাননি৷ বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সরাসরি প্রতিকার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ কর্মকর্তারা অভিযোগ নেননি বা অভিযোগ দিতে নিরুৎসাহিত করে নানা ব্যাখ্যা দিয়ে গ্রাহকদের ফিরিয়েও দিয়েছেন৷ যারা অনলাইনে অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগেরে কথাই বিতরণ কোম্পনিগুলো স্বীকার করছে৷

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স তাদের তদন্তে ৬২ হাজার ৯৬ জন গ্রাহকের বিলে অসঙ্গতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে৷ এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোডের্র (আরইবি) ৩৪ হাজার ৬১১ জন গ্রাহক, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দার্ন ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) দুই হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৫৫৬ জন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)  দুই হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা৷

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
এখন পর্যন্ত ডিপিডিসি অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নেটিশ দিয়েছে৷ ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৪ জনকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে৷ ডেসকো দুই জন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে এবং একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে৷ ওজোপাডিকো ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়ার মধ্যে ২৯০ জনকে আনা হয়েছে৷

গ্রাহকরা কী পাচ্ছেন
ভুতুড়ে বিলের জন্য বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে গ্রাহকদের কাছে  দু:খ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে আস্থা হারিয়েছি, আশা করছি তা শিগগিরই পুনরুদ্ধার করতে পারবো৷ ভবিষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সংকট সমাধানে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়ে বিল করবে৷ বিষয়গুলো নিয়ে আরো তদন্ত হচ্ছে৷ আরো যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

শামসুল আলম

This browser does not support the audio element.

বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের নিয়ম অনুযায়ী সমস্যা সামাধানের জন্য বলা হয়েছে৷ ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলি জানান, অতিরিক্তি বিল যা হয়েছে তা পরবর্তী বিলের সাথে সমন্বয় করে দেয়া হবে৷ ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত সর্বনিম্ন ‘ফ্লাট রেট’ করে দেয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী আমরা বিলের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে পারি না৷ তবে সমন্বয় করে দিলে পরের মাসে এর বেনিফিট গ্রাহকরা পাবেন৷’’

একই সঙ্গে গ্রাহকদের চাপ হলে তিন মাসের বিল কিস্তিতে দেয়ারও সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷ সেই সঙ্গে জরিমানা ছাড়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সুযোগ জুলাই পর্যন্ত আরো এক মাস বাড়ানো হয়েছে৷ এই সুবিধা মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসের জন্য৷ জুন মাসের বিল সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে৷

গ্রাহকদের সঙ্গে তামাশা?
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা প্রকৌশলী শামসুল আলম এই পুরো প্রক্রিয়াকে গ্রাহকদের সাথে তামাশা বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি মনে করেন, এই ভুতুড়ে বিলের বিচার করবে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), মন্ত্রণালয় নয়৷ তার মতে, গ্রাহকদের যারা পকেট কেটেছে মন্ত্রণালয় এখন তাদের রক্ষায় মাঠে নেমেছে৷ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখন তা সমন্বয় করার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে টাকা যা নেয়ার তা নিয়ে নিয়েছে৷ যাদের প্রত্যাহার বা বদলি করা হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত কহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি৷ বলেন, ‘‘যা করা হচ্ছে তা আই ওয়াশ৷ মন্ত্রণালয় এখন যা করছে তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়৷ টাকা ফেরত দিতে হবে৷ আর বিইআইরসিতে শুনানির মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে৷ আদালতে যেরকম হয় সেরকম৷’’

টাস্কফোর্স বিলের যে অসঙ্গতি বের করেছে বাস্তবে অসঙ্গতি এর চেয়ে বহুগুণ বেশি বলে মনে করেন তিনি৷ তারা একটা নমুনা প্রকাশ করেছেন মাত্র৷ যারা দায়ী সেই বিতরণ কোম্পানিগুলোই কিভাবে এর নিষ্পত্তি করবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শামসুল আলম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ