1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিদির ধমকে ভাইয়ের বিদ্রোহে ইতি

১৪ মার্চ ২০২৪

টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রীর ভাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেয়ে বিদ্রোহে ইতি টেনেছেন তিনি।

প্রার্থীদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন মমতাছবি: Subrata Goswami/DW

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন ওরফে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হঠাৎই গতকাল দলীয় প্রার্থী সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করেন।

ভাইয়ের ক্ষোভ

হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস এবারও প্রার্থী করেছে বর্তমান সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন প্রার্থী হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বুধবার কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

বাবুন রাজ্য স্তরে রাজনীতির খুব বড় মুখ না হলেও তৃণমূলের শাখা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির সক্রিয় কর্তা তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব ও ফুটবলের সংগঠক হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

প্রসূন ও বাবুনের বিরোধ সামনে চলে এসেছে রাজনীতিকে ঘিরে। বাবুন বলেন, "২০১৯ সাল থেকে চেয়েছিলাম উনি যেন হাওড়ায় প্রার্থী না হন। অন্য যে কেউ হতে পারেন। জনসংযোগ নেই যে সাংসদের, তার প্রার্থী হওয়া পার্টির পক্ষে ভালো নয়। আমরা সব সময় দলের জন্য কাজ করি বলে এটা বুঝি।"

হাওড়ায় এবার তিনি টিকিট পাবেন, এমনটাই কি ধারণা হয়েছিল বাবুনের? প্রস্তুতি হিসেবে তিনি দু বছর আগেই হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোটার হিসেবে নিজের নাম তুলেছিলেন। সেখানে নিজের তৎপরতাও বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী করে প্রসূনকেই।

শতাব্দীপ্রাচীন মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এই ক্লাবের একজন সম্মানীয় প্রাক্তনী।

মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক বৈঠকে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়। বাবুনের অভিযোগ, সেখানে প্রসূন তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

জল্পনা শোনা যায়, বাবুন বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। চলতি সপ্তাহে তিনি এই উদ্দেশ্যে দিল্লিও যান। বুধবার রটে যায়, একজন 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' বিজেপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। যদিও তেমন কিছু ঘটেনি। বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই।

এরপর বাবুন ঘোষণা করেন, তিনি অন্য দলে যাবেন না। নির্দল প্রার্থী হয়ে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোটে লড়বেন।

দিদির ধমক

বুধবার উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বাবুনের গতিবিধিতে তিনি খুবই রুষ্ট হন। দুপুরে শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, বাবুনের সঙ্গে সমস্ত পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করছেন।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, "অনেকে বড় হয়ে গেলে লোভ বেড়ে যায়। ওর অনেক কাজকর্ম আমার দীর্ঘদিন ধরেই অপছন্দ ছিল। ওকে আর আমার ভাই বলে পরিচয় দেবেন না। প্রতি বার ভোটের মুখে ও এগুলো করে।"

তার বক্তব্য, "আমরা পরিবারতন্ত্র নয়, মানুষতন্ত্র করি। আমাদের পরিবারের অনেকেই ওর উপর ক্ষুব্ধ। এতো লোভী মানুষকে আমি পছন্দ করি না।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, অতীতেও বাবুন অন্যায় কাজ করেছে।  যখন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটার পর একটা ক্লাব নিয়ন্ত্রণের বা রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে দখলদারির অভিযোগ উঠেছিল খেলার দুনিয়াতে, তখন আপনি কেন চুপ করেছিলেন? কেন তখন রাজধর্ম পালন করতে পারেননি?"

দিদির কড়া মন্তব্য শুনে সুর একেবারে নরম হয়ে যায় ভাইয়ের। ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদল করেন বাবুন।

বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, "আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই। আমি বিজেপিতে যোগদান করতে পারি বলে গুজব রটেছে। এর কোনো সত্যতা নেই। দিদি যতদিন আছে, ততদিন আমি দিদির সঙ্গেই থাকব।"

প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বাবুনের দাবি, "আমার লোভ হয়নি অভিমান হয়েছিল অনেক পরিশ্রম করে দলে জায়গা তৈরি করেছি। এতে কারো হাত ছিল না। বিজেপিতে যোগ দেয়া দূরের কথা আমি নির্দল প্রার্থী হয়েও দাঁড়াব না।"

বাবুনের বিদ্রোহের পিছনে বিজেপি রয়েছে বলেও দাবি করেন মমতা। তার বক্তব্য, "এর পিছনে বিজেপি আছে। ঘর ভাঙানোর খেলা খেলছে।"

বাবুন প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "বিজেপি ওই পরিবারের কাউকে নেবে না। দুদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে উনি কী করেছেন, তা আমার জানা আছে। বেশি কথা বললে সেসব প্রকাশ্যে আনব।"

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ভয়ংকর নিম্নগামী একটা জায়গায় চলে যাচ্ছে: অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

হতাশার প্রকাশ

তৃণমূলে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দলের অনেকেই এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন। যুবনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় হতাশা প্রকাশ করেও দলের সঙ্গে থাকার কথা বলেছেন। টিকিট না পাওয়ার হতাশা গোপন করেননি সাবেক সাংসদ শান্তনু সেন।

বহরমপুরে ইউসুফ পাঠান প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর আগেই ক্রিকেট তারকার পরাজয় ঘোষণা করে দিয়েছেন! ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং টিকিট না পাওয়ায় কার্যত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন দলের সঙ্গে। তার উপর এবার মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারেই বিদ্রোহের সুর শোনা গেল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "বিজেপি যখন কেন্দ্র থেকে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে টার্গেট করে কথা বলছে, সেই তকমা হয়তো মুখ্যমন্ত্রী ঘোচাতে চাইছেন। ডিএমকে বা সমাজবাদী পার্টির মতো পরিবারতন্ত্র যে তৃণমূল করে না, মুখ্যমন্ত্রী সেই বার্তাও দিতে চাইছেন। এটা হয়তো পূর্বপরিকল্পিত।"

তবে এ ধরনের ক্ষোভ,বিক্ষোভ নিয়ে লাগাতার চর্চায় নির্বাচনের আগে মূল বিষয়গুলি চাপা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক শুভময় মৈত্র।

তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ভয়ংকর নিম্নগামী একটা জায়গায় চলে যাচ্ছে। এই লোকসভা ভোটের আগে এখনো ভাড়া করা প্লেনে চাপিয়ে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে এক্সচেঞ্জটা না শুরু হলেও, যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা সোপ অপেরা বা পাড়ার আড্ডার বিষয়! গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা কমে গিয়েছে। নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গাটাতেও সময় কমে যাচ্ছে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ