গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় খুন হন সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় সদস্য নাজিমুদ্দিন সামাদ৷ গতবছর ব্লগারদের যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঠিক সেভাবেই সামাদকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যাওয়া হয়৷ উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী ‘আনসার আল ইসলাম’৷

গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহীতে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী৷ বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকগজ দূরে বাসস্টান্ডে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায় দুই দুর্বৃত্ত৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷

বাংলাদেশে সমকামীদের একমাত্র পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহাস মান্নানকে হত্যা করা হয় তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে প্রবেশ করে৷ কমপক্ষে ছয় দুর্বৃত্ত কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে৷ আর তারপর হত্যাকাণ্ড ঘটায়৷

সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট এবং মঞ্চকর্মী মাহবুব তনয় ছিলেন মান্নানের বন্ধু৷ তাঁকেও ঐ একইসময়ে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার আল-ইসলাম’ দু’টি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সমকামিতার প্রসারে ভূমিকা রাখায় তাঁদের খুন করা হয়েছে৷

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ তাই এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসকে আপনার মুখ বন্ধ করতে দেবেন না৷’’

এই বার্তাটাও পরিষ্কার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলার শিকার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে তাঁকে কোপানো হয়েছিল৷ বার্লিনে মানববন্ধনে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আল্লাহ’র জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়৷

ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক প্রবাসী বাঙালি৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও বিপক্ষে অবস্থান তাঁর৷

ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্দে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷

বাংলা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়েছে মানববন্ধনে৷

নাস্তিকতা কারো মৃত্যু বা কারাভোগের কারণ হতে পারে না, এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷ মানবন্ধনে অংশ নেয়াদের সবাই নাস্তিক নন, তবে তাঁরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের ছবির সঙ্গে এই বাক্যটি লেখা প্ল্যাকার্ডও ছিল বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে৷ চলতি বছর বাংলাদেশে খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশক৷