1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বাণিজ্যবাংলাদেশ

দিন যায়, ঋণ ও ঋণ খেলাপি বাড়ে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ মে ২০২৩

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক বছরে বেড়েছে ১৮ হাজার কেটি টাকারও বেশি। আএমএফের শর্ত এবং ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েছে।

Flash-Galerie Bengalische Banknoten
ছবি: DW

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে পরিকল্পনা করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত না দেয়া এবং ওই টাকা সরিয়ে ফেলা যেন অলিখিত এক নিয়ম হয়ে গেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকের লোকজন এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যুক্ত। এই টাকা তারা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলে। তাদের শাস্তির আওতায় না আনায় ঋণ খেলাপিরা অপ্রতিরোধ্য।

গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব তৈরি করেছে  তাতে চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা৷ ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে তা ১৬ শতাংশ বা ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি।

আর সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ শতাংশ বা ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

এর বড় একটি অংশ আর কখনোই ফেরত পাওয়া যাবে না: নুরুল

This browser does not support the audio element.

তবে এই খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা ঋণ যুক্ত করা হয়নি। জানুয়ারি শেষে এর পরিমাণ ৪৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি হয়ে যাওয়া আদায় অযোগ্য ঋণকে তিন বছর পর অবলোপন (রাইট) করতে পারে ব্যাংক, যা খেলাপির তালিকায় না রেখে পৃথক হিসাব রাখা হয়।

পুনঃতফসিল করা ঋণের হিসাবও খেলাপি ঋণের তালিকায় থাকে না। তাই ব্যাংক চাইলেই নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। আইএমএফের হিসাবে বাংলাদেশে প্রকৃত খেলাপি ঋনের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা। তাই খেলাপি ঋণের বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তথ্য প্রকৃত চিত্র নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেক ব্যাংক ঋণ আদায় করতে না পেরে তারল্য সংকটে ভুগছে।

যমুনা ব্যংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমিন বলেন, " উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমেও অনেক খেলাপি ঋণ হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। রিশিডিউল করা ঋণ হিসাবে রাখা হয়না। আরো অনেক কৌশল আছে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর । তাই বাস্তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এর বড় একটি অংশ আর কখনোই ফেরত পাওয়া যাবে না।”

২০১৯ সালে শীর্ষ ৩০০ খেলাপির তালিকা সংসদে প্রকাশ করা হয়।  সংসদে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছিলেন, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা সংসদে প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোভিড মহামারি ও পরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময়েও বিশেষ ছাড় দিয়েছিল। ঋণের ২.৫ থেকে চার শতাংশ ব্যাংকে জমা দিয়ে নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। আগে এই হার চিলো ১০ শতাংশ। তারপরও খেলাপি ঋণ না কমে বেড়েছে।

বছরের পর বছর খেলাপি ঋণের কালচার চলছে: হেলাল

This browser does not support the audio element.

মো. নুরুল আমিন বলেন, " আসলে এখানে প্রকৃত খেলাপি অনেক কম। ইচ্ছাকৃত খেলাপিই বেশি। আর মোট খেলাপি ঋণের  ৮০ শতাংশের জন্য অল্প কিছু প্রভাবশালী লোক দায়ী। এরা স্বেচ্ছায় খেলাপি। আসলে বছরের পর বছর এদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশে ব্যবসার একটি  ‘ঋণ খেলাপি মডেল' দাঁড়িয়ে গেছে। এটা হলো ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া এবং ফেরত না দেয়া। এই টাকা দেশের বাইরে বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়। এর সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রভাশালী ও ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত লোকজন আছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, " তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেনা। বাণিজ্যিক ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক কেউ না। সরকারও নেয় না। ”

সিরডাপের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, " ঋণ দেয়ার সময় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হবে তাদের সক্ষমতা যাচাই করা। তাহলে এখন প্রশ্ন- এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যদি খেলাপি হয় তাহলে ব্যাংক কীভাবে ঋণ দিলো? কী দেখে দিলো? আর এটা নতুন নয়, বছরের পর বছর খেলাপি ঋণের কালচার চলছে। তাহলে বোঝাই যায় এটা ব্যাংকের টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার একটি কৌশল। আর এর পিছনে আছে রাজনৈতিক ক্ষমতা। যে দলটি ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতার আশীর্বাদপুষ্টরা। বর্তমান সরকার ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। তাদের দায় নিতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এভাবে ঋণ খেলাপির নামে ব্যাংকের টাকা নিয়ে যাওয়া যায় না।”

তিনি বলেন, " গত এক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে তা অ্যালার্মিং। এতে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়তে পারে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ