দিব্যা দেশমুখের দাবা বিশ্বকাপ জয় নিয়ে দাবাড়ুরা যা বললেন
৩০ জুলাই ২০২৫
দাবা বিশ্বকাপ জেতার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের চতুর্থ গ্র্যান্ড মাস্টার হলেন দিব্যা দেশমুখ।
দিব্যা দেশমুখের সাফল্য নারীদের অনুপ্রাণি্ত করবে বলে দাবাড়ুরা মনে করেন। ছবি: FIDE/picture alliance
বিজ্ঞাপন
মাত্র ১৯ বছর বয়েসে আন্তর্জাতিক দাবা সংগঠন ফাইড ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৫ জিতে জর্জিয়ার বাটুমিতে ইতিহাস রচনা করেছেন দিব্যা দেশমুখ। তিনি প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে এই খেতাব জিতলেন। একই সঙ্গে ভারতের চতুর্থ নারী গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি হারালেন ভারতেরই কনেরু হাম্পিকে। এই দুই ভারতীয় নারী দাবাড়ুর জয়ে আশার আলো দেখছেন ভারতের অন্যান্য গ্র্যান্ডমাস্টাররা।
অনুপ্রাণিত হবে নারীরা
২০ বছর বয়েসে গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন মিত্রাভ গুহ। তিনি ডিডাব্লিউকে জানালেন, ''আজও দাবা প্রতিযোগিতায় হাতে গোনা নারীদের দেখতে পাওয়া যায়।'' তিনি বলেন, ''১৩ বছরের কম বয়সিদের প্রতিযোগিতা পর্যন্ত সম পরিমাণ নারী পুরুষ প্রতিযোগীদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে বয়স সীমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের সংখ্যা কমতে থাকে। দিব্যার জয়ে অনেক নারী দাবাড়ু নতুন করে ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার স্বপ্ন দেখবে।"
এবছর আর কিছুদিনের মধ্যে সমরখন্দে অনুষ্ঠিত হবে গ্র্যান্ড সুইস দাবা প্রতিযোগিতা। ওপেন বিভাগে পুরুষদের সঙ্গেই খেলবেন রাশিয়ার আলেকসান্ড্রা গোরিয়েচকিনা। মিত্রাভ বলেন, "অন্যান্য খেলার তুলনায় দাবায় নারীপুরুষ ভেদাভেদ কম। তাও সামাজিক চাপে নারীদের মাঝপথে খেলা থামাতে হয়। দিব্যা, হাম্পিরা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে।"
'নতুনদের উৎসাহ দেবে এই জয়'
গ্র্যান্ডমাস্টার এবং দাবা প্রশিক্ষক দিব্যেন্দু বড়ুয়া ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমি এই মুহুর্তে দিব্যাকে রিল্যাক্স করতে বলব। অনেক পরিশ্রম আর মানসিক চাপের পর এই জয় এসেছে। এখন কদিন শান্তিতে এই জয় উপভোগ করুক। তবে তার এই জয় অনেক ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেবে, মোটিভেট করবে। আমি দেখেছি অনেক নারী মাঝপথে খেলা ছেড়ে দেন। যদিও দাবা শারীরিক পরিশ্রমের খেলা নয়। বুদ্ধির খেলা। তাও সামাজিক চাপে, বিশেষ করে বিয়ের পর অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই খেলা ছাড়তে হয় নারীদের। আমরা আমাদের সংস্থা থেকে কাজ করি নারীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য।"
যে সাতটি খেলা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
দাবা থেকে শুরু করে স্টারক্রাফট, এখানে থাকছে সাতটি কৌশলের খেলা যা ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো৷ যারা ব্রেনের ব্যায়ামে আগ্রহী, তারা এগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
দাবা: খেলার রাজা
দাবা খেলার নামটা মূলত এসেছে ফার্সি শব্দ ‘শাহ’ থেকে, যার অর্থ রাজা৷ দাবার বোর্ড তৈরি হয়েছে ভারতে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে৷ দু’জন খেলায়াড় একে অপরের বিপরীতে এই খেলায় অংশ নিতে পারেন৷ খেলায় জিততে হলে প্রতিপক্ষের রাজাকে এমনভাবে ‘চেক’ দিতে হয়, যাতে তার পালানোর কোনো উপায় না থাকে৷ এই ‘চেক’ দেয়াকে বলা হয় ‘কিস্তি মাত’৷
ছবি: MEHR
গো: এশিয়ায় তৈরি
‘গো’ খেলাটি সৃষ্টি হয়েছে চীনে৷ তবে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া এবং জাপান৷ কালো এবং সাদা পাথর দিয়ে একটি বোর্ডের উপর খেলাটি খেলতে হয় যেখানে ১৯টি অনুভূমিক এবং ১৯টি উল্লম্ব রেখা টানা থাকে৷ বোর্ডের অধিকাংশ অংশ যে দখলে রাখতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: Imago/Xinhua
শোগি: জাপানের দাবা
দাবার জাপানি সংস্করণ শোগিতে বোর্ডটি নয়টি মাঠে ভাগ করা থাকে৷ তবে ছোট বা বড় বোর্ডও পাওয়া যায়৷ দাবার সঙ্গে এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গুটিগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই৷ অর্থাৎ উভয়েই সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে উদ্দেশ্য একই, রাজাকে ‘চেক’ দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Sasahara
চেকারস: লাফান এবং চুরি করুন
চেকারবোর্ড দেখতে দাবার বোর্ডের মতো৷ তবে খেলার নিয়ম পুরোপুরি ভিন্ন৷ এখানে একটি গুটি আড়াআড়িভাবে একঘর পর্যন্ত সরানো যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রতিপক্ষের একটি গুটিকে ডিঙাতে পারে৷ আর ডিঙানো গুটিটি যে ডিঙিয়েছে তার হয়ে যাবে৷ এভাবে প্রতিপক্ষের সবগুটি নিতে পারলে জয় আসবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Bouys
টিক-টেক-টো: সার্কেল অথবা স্কয়ার?
খেলাটার বাংলা নাম ‘কাটা-কুটি’৷ দীর্ঘ ভ্রমণের পথে দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসা এই খেলাই সম্ভবত সেরা৷ এর জন্য আপনার শুধু একটি পেন্সিল এবং এক টুকরো কাগজ দরকার৷ কাগজের উপরে আঁকা নয়টি ঘরের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড় ক্রস বা সার্কেল আঁকেন৷ যে খেলোয়াড়টি আগে একইরকম সংকেত দিয়ে অনুভূমিক, উল্লম্ব কিংবা আড়াআড়িভাবে তিনটি ঘর ভরতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: imago/J. Tack
সিভিলাইজেশন: বোর্ড থেকে স্ক্রিনে
শুরুতে বোর্ড গেম হিসেবে চালু হওয়া ‘সিভিলাইজেশন’-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ খেলার ধারণা জটিল ছিল: একটি সিভিলাইজেশনকে সেই লৌহযুগের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টিকে থাকতে হবে৷ সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে এটি খেলতে পারে৷ আর একেকটি গেমের দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ১৯৯১ সালে ‘সিভিলাইজেশন’ কম্পিউটার গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
ছবি: 2007 Free Software Foundation, Inc.
স্টারক্রাফট: অবসরের খেলা
কারো কারো কাছে এটা হয়ত নিখাদ বিনোদন, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্টারক্রাফট’ হচ্ছে অবসর সময়ের জন্য উপযোগী জাতীয় খেলা৷ ‘রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি’ খেলাটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে৷ আর তখন থেকেই এটি অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম হিসেবে বাজার দখল করে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
7 ছবি1 | 7
শুধু নারীদের নয়, নতুন প্রজন্মের কিশোররাও দাবার প্রতি উৎসাহিত হচ্ছেন বলে মনে করেন নবীন গ্র্যান্ডমাস্টার রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দের কোচ আর বি রমেশ। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "আর বৈশালী, দ্রোণাভাল্লি হারিকা, হাম্পি আর এখন দিব্যা -- ভারতীয় নারী দাবাড়ুরা একটা গোটা প্রজন্মকে আশার আলও দেখিয়েছেন। নারীদের উৎসাহিত করেছেন। তবে শুধু নারীদেরই নয়, বিশ্বে ময়দানে সামগ্রিক সাফল্য ভারতের ক্রীড়া জগতে দাবাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আগে অন্যান্য অনেক খেলার মতোই দাবাও উপেক্ষিত থাকত। এখন গুকেশ, প্রজ্ঞা, দিব্যাদের সাফল্য দাবাকে লাইমলাইটে এনেছে। ক্রিকেটের মতো না হলেও, দাবা নিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহ বেড়েছে। এতে স্পনসর আসবে। নতুন খেলোয়াড়রা আরো অনুপ্রেরণা পাবেন।"