1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতেই শরণার্থীদের ভিড় বেশি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২ এপ্রিল ২০১৭

প্রাণ বাঁচাতে মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় নানা কারণে৷ এভাবেই আফগান, সোমালি, তিব্বতি, বার্মিজ, সিরিয়ান শরণার্থীরা দলে দলে চলে আসছেন ভারতে, যদিও এখানে আইনি মর্যাদা নেই তাঁদের৷ বেঁচে থাকার জন্য এঁদের প্রথম পছন্দ দিল্লি৷

Indien - Afghanen in Delhi
ছবি: Anil Chatterjee

গৃহযুদ্ধ, জাতি দাঙ্গা, সরকারি নির্যাতন ইত্যাদি নানা কারণে প্রাণ হাতে নিয়ে নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এঁরা৷ চলে আসেন ভারতে, শরণার্থী হিসেবে৷ কেউ এ দেশে আছেন কয়েক বছর ধরে, কেউ বছর দশেক আবার কেউ কেউ ১৫ বছর বা তারও বেশি৷ দিল্লিই তাঁদের কাছে প্রথম পছন্দের শহর৷ যদিও সরকারি আইনি সংজ্ঞায় এঁদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই, তবুও যেটুকু পাচ্ছেন তা জাতিসংঘের রিফিউজি কনভেনশন বা ইউএনএইচসিআর-এর দৌলতে৷

আইনি সংজ্ঞায় পড়েন না বলে সব শরণার্থীকে একই বন্ধনিতে রাখা হয় না ভারতে৷ এটা নির্ভর করে প্রশাসনিক বড় কর্তাদের সিদ্ধান্তের ওপর৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর কার্ড যাঁদের আছে, তাঁদের ভারতে থাকার একটা পরোক্ষ বৈধতা আছে৷ অধিকার আছে রুটিরুজি বা জীবিকার৷ তাই অনেকেই ছোটখাটো কাজ করেন, মজদুরি করেন, ছোট ছোট দোকান বা রেস্তোরাঁ চালান৷ আর শহরের অলিগলিতে বিক্রি করেন সেদেশের বিশেষ বিশেষ খাবার৷ সেদিক থেকে আফগান ও তিব্বতি খাবারের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি ভারতে৷

আফগান শরণার্থীদের একটা বড় ঘাঁটি রয়েছে দক্ষিণ দিল্লির লাজপতনগর এলাকায়৷ সেখানে গড়ে উঠেছে আফগানি দোকানপাট, ডিসপেন্সারি, ওষুধের দোকান, রেস্তোরাঁ, মুদিখানার দোকান, আরো কত কী! পাড়াটা তাই ‘মিনি কাবুল' বলে পরিচিত৷ আর পাড়ার বড় রাস্তার মোড় ‘আফগান চক' বা চৌমাথা বলে চিহ্নিত৷ পাড়ার দশজন লোকের সঙ্গে দেখা হলে, তাঁদের পাঁচজনই আফগান৷ বুঝতে পারলেও, ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতে পারেন তাঁরা৷ এঁদের মধ্যে বৈধ পথে এসেছে বেশ কয়েকজন৷ তারপর তাঁদের হাত ধরে অনুপ্রবেশ হয়েছে দলে দলে আগান৷ কেউ চিকিত্সার জন্য, কেউ রুজি-রোজগারের ধান্দায়, কেউ বা নিরাপদে থাকার জন্য৷

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক চিরকালই বন্ধুত্বের৷ সেটা ভূ-রাজনৈতিক কারণেই হোক বা অর্থনৈতিক কারণেই হোক৷ তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো৷ ছেলে-বুড়ো সকলের মুখে কুলুপ আঁটা৷ বাইরের লোকের সঙ্গে বড় একটা কথা বলেন না তাঁরা৷ আর মিডিয়া শুনলে তো কথাই নেই৷ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সরে পড়েন তাঁরা৷ অনেক চেষ্টার পর একটা আফগান রেস্তোরাঁর তরুণ ম্যানেজার আবদুল ওয়ালি নিজেদের সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে শুধু এটুকুই বললেন যে, তাঁরা বছর চারেক আগে এই রেস্তোরাঁ খুলেছেন৷ বিক্রিবাটা ভালোই৷ আফগানিস্তানের খাবার-দাবার দিল্লির লোকেদের ভারি পছন্দ৷ কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, মাথা নেড়ে উত্তর দেন, ‘না হয়নি৷' 

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক চিরকালই বন্ধুত্বেরছবি: Anil Chatterjee

জানা যায়, শুধু দিল্লিতেই আছে প্রায় হাজার পঞ্চাশেক শরণার্থী৷ এর বাইরে আছে আরও হাজার দশেক অ্যাসাইলাম বা আশ্রয়প্রার্থী৷ শরণার্থীদের কাছে তাঁদের ভিটে-মাটি ছেড়ে আসার কথা জানতে চাইলে বেশিরভাগই মাথা নীচু করে থাকেন৷ স্পষ্ট করে বলতে জিব আটকে যায়৷ মহিলারা আরও নীরব৷ মাঝে মাঝে ছল ছল চোখে যা বলার বুঝিয়ে দেন তাঁরা৷ বয়স্ক নারী-পুরুষরা কখনও কখনও স্বপ্নমেদুর হয়ে পড়েন৷ হয়ত ভাবতে থাকেন, একদিন দেশে ফিরতে পারবেন৷ আবার অন্য একটা অংশ তা মনে করে না৷ এক বয়স্ক আফগান গৃহকর্তা বলেন, ‘‘এই তো বেশ আছি৷ দিল্লির মাটিতে মানিয়ে সংসার পেতে বসেছি৷ তেমন বৈরিতা আর নেই৷ রাজধানির জীবন ও সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চাই৷ ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়াশুনা করতে পারছে, ইংরেজি শিখছে৷ আমরা হিন্দি শিখে নিয়েছি কাজ চালাবার মতো৷ সুযোগ পেয়েছি গ্রাসাচ্ছাদনের৷''

প্রতি শরণার্থী পরিবার পিছু দেওয়া হয় মাসে পাঁচ হাজার টাকাছবি: Anil Chatterjee

তবে সব শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা কিন্তু এক নয়৷ সোমালিয়ার শরণার্থীরা দিল্লিতে নাকি প্রান্তিক৷ অনেক সময় তাঁদেরকে নাইজেরিয়ান বলে ভুল করে মানুষ৷ সম্প্রতি মাদক ও যৌন পেশায় জডিত থাকার অভিযোগে দক্ষিণ দিল্লির এক এলাকার লোকেরা হামলা চালায় তাঁদের ওপর৷ তাই ভয়ে ঐ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় তাঁরা৷ এর পেছনে স্থানীয় কিছু রাজনীতিকদের উসকানি ছিল বলে পুলিশের দাবি৷ এছাড়া এঁদের মধ্যে যা ‘সিঙ্গল' নারী শরণার্থী, তাঁদের জীবনটা বেশি কষ্টকর হয়৷ আশেপাশের পুরুষদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় তাঁদের৷ ‘‘নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে প্রাণান্তকর লড়াই এখানেও কিছু কম নয়'', বলেন সোমালিয়ার ২৭ বছর বয়সি সাদিয়া শেখ৷ বলেন, ‘‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাবছি দেশে ফিরে যাবো৷''

কী চলছে সোমালিয়ায়? সোমালিয়ার সামরিক সরকারকে উচ্ছেদের পর থেকে সেখানে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ, সেই ১৯৯১ সাল থেকে৷ এখনও প্রকৃত সরকার বলে সেদেশে কিছু নেই৷ বরং সোমালিয়া এখন দুর্ভিক্ষের মুখে৷ আফগান ও সিরিয়ার পর সোমালিয়া থেকে সবথেকে বেশি শরণার্থীর আগমন৷ অবশ্য দিল্লিতে সবথেকে বেশি শরণার্থী আফগানিস্তানের৷ প্রথমে সোভিয়েত আগ্রাসন, তারপর গৃহযুদ্ধ৷ তালেবান শাসন এবং তালেবান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ৷ বেশির ভাগ আফগান শরণার্থী দেশে ফিরে যেতে চান না সেখানকার প্রতিকূল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে৷ তরুণ আফগান মনোভাব, ‘এই তো দিব্যি আছি৷ লেখাপড়া, কাজ সব চলছে৷ দেশে ফিরে কী হবে?' মিয়ানমারেও ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিল একই নিরাপত্তা পরিস্থিতি৷ সামরিক শাসন, গৃহযুদ্ধ, জাতি দাঙ্গা৷ হিংসা, হানাহানি ও সামরিক বাহিনীর হাতে অত্যাচারে জর্জরিত চেন জাতি গোষ্ঠী৷ বেসামরিক শাসনকালেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা এবং চেন জাতিগোষ্ঠী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল, যাঁদের কারুর কারুর বাড়ি আজ এই দিল্লি শহর৷ আর তিব্বতি শরণার্থীদের সংখ্যা তো দিল্লিতেই ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷

কীভাবে সাহায্য করা হয় শরণার্থীদের? এঁদের সাহায্য করে জাতিসংঘের শরণার্থী হাই-কমিশনারের মাধ্যমে উদ্বাস্তু সহায়তা কেন্দ্র৷ প্রতি শরণার্থী পরিবার পিছু দেওয়া হয় মাসে পাঁচ হাজার টাকা৷ এছাড়া অন্যান্য সহায়তার মধ্যে আছে – শারীরিক ও মানসিক চিকিত্সা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, স্থানীয় ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি৷ তবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকেই মানসিক বিষাদে আক্রান্ত, বিশেষ করে যাঁরা পরিবারহীন, মানে একা৷ মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শদাতারা তাঁদের বোঝান, পৃথিবীটা বড় জটিল৷ তবে দেশের বাইরেও দেশ আছে, ঘরের বাইরেও আছে ঘর৷ সেই ঘর শুধু খুঁজে নিতে হবে৷

বন্ধুরা, আপনি কি কোনো শরণার্থী পরিবারকে চেনেন? জানান আপনার অভিজ্ঞতা, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ