দিল্লিতে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কুস্তিগিররা। বুধবার রাতে তাদের সঙ্গে পুলিশের ঝামেলা হয়। কুস্তিগিরদের মারধরের অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার প্রায় সারাদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে দিল্লিতে। যন্তর মন্তরে কুস্তিগিররা বেশ কিছুদিন হলো বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারা মাটিতে কাঠের তক্তার উপর গদি পেতে শুয়ে থাকেন। বৃষ্টিতে সেগুলি ভিজে যায়। কুস্তিগিররা তখন ফোল্ডিং খাট আনান।
সেই খাট যখন বিক্ষোভস্থলে আনা হয়, তখন পুলিশ বাধা দেয়। তারা কিছুতেই খাট ভিতরে নিয়ে যেতে দিতে রাজি ছিল না। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। কুস্তিগিররা খাট ভিতরে নিয়ে যেতে চান।
বেশ কয়েকজন কুস্তিগির মাথায় আঘাত পান। একজন অজ্ঞান হয়ে যান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
পুলিশের বক্তব্য, আপ নেতা সোমনাথ ভারতী ঘটনাস্থলে ফোল্ডিং খাট নিয়ে যান। কিন্তু এই খাট নিয়ে আসার কোনো অনুমতি তার ছিল না। তাই তাকে বাধা দেয়া হয়। তারপর ছোটখাট ঝামেলা হয়।
কুস্তিগিরদের দাবি, কিছু পুলিশ মদ খেয়ে ছিল। তারা নারী কুস্তিগির বিনেশ ফোগতের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। বিনেশ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেডেলপ্রাপ্ত। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পাওয়া কুস্তিগির গীতা ফোগত জানিয়েছেন, তার ভাই দুষ্মন্ত ফোগতের মাথায় আঘাত লেগেছে।
বিনেশ ফোগত কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ''আমরা কি অপরাধী? যদি আমাদের মারতে চাও তো মেরে দাও।'' অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া বজরং পুনিয়া বলেছেন, ''সরকার আমাদের কাছ থেকে সব মেডেল নিয়ে নিক।''
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরো এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সাংবাদিকদেরও সেখানে যেতে দিচ্ছে না। কংগ্রেস নেতা দীপিন্দর সিং হুডা রাতে সেখানে গিয়েছিলেন। তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন এই বিক্ষোভ?
কুস্তিগিরদের অভিযোগ, ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং মেয়ে কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা করেছেন। তাকে শাস্তি দিতে হবে। তাকে ফেডারেশনের পদ থেকে সরাতে হবে।
এর আগেও এই দাবি নিয়ে কুস্তিগিররা যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কিন্তু তখন সরকার একটা কমিটি করে দেয়। তারপর বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নেন তারা।
সাতজন নারী কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিং তাদের যৌন নিগ্রহ করেছেন। তারা পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। তারপরেও কিছু হয়নি। তারা অবিলম্বে ব্রিজভূষণকে ফেডারেশনের প্রধান পদ থেকে সরানোর দাবি করেছেন ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
কারা আছেন বিক্ষোভে
প্রথম নারী কুস্তিগির হিসাবে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া সাক্ষী মালিক বিক্ষোভে আছেন। কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী বিনেশ ফোগত আছেন। বিনেশের বাবা মহাবীর ফোগতকে সামনে রেখেই 'দঙ্গল' তৈরি হয়েছিল। আমির খান সেখানে মহাবীরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা বজরঙ্গ পুনিয়া আছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রধান সব কুস্তিগির মিলেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উপরের ছবিতে বিনেশ ও বজরঙ্গকে দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
রাতভর রাস্তায়
যন্তর মন্তরে রাতভর রাস্তার উপরে চাদর পেতে শুয়ে থাকছেন কুস্তিগিররা। বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সারাদিন ধরে। যারা দেশের হয়ে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে পদক এনেছেন, তাদের পাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তাদের কথা কেউ শুনছেনও না। সরকার চুপ।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
আড়াই মাস আগে
আড়াই মাস আগে ঠিক এই অভিযোগ নিয়েই যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ করেছিলেন কুস্তিগিররা। তখন বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দেয় সরকার। সেই কমিটির একমাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। তাদের আরো দুই সপ্তাহ সমসীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়। রিপোর্ট জমা পড়েছে। কিন্তু সরকার তা প্রকাশ করেনি।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
এবার কী হবে?
সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগতরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। গতবার তারা ভুল করেছিলেন। কিছু মানুষের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছিলেন। তারপর কিছুই হয়নি। তাই এবার তারা কোনো প্রতিশ্রুতিতে ভুলবেন না। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারাও এভাবেই বিক্ষোভ দেখিয়ে যাবেন।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
সকলে স্বাগত
গতবার রাজনীতিকদের বিক্ষোভের জায়গায় ঢুকতে দেননি কুস্তিগিরেরা। এবার তারা জানিয়েছেন, গতবার ভুল হয়েছিল। এবার যে কেউ তাদের বিক্ষোভস্থলে আসতে পারেন। আগেরবার আসতে না দেয়ার জন্য তারা ক্ষমা চাইছেন। উপরের ছবিতে বজরঙ্গ পুনিয়া।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
কে এই ব্রিজভূষণ?
ব্রিজভূষণ শরণ সিং হলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত বিজেপি-র সাংসদ। অত্যন্ত প্রভাবশালী সাংসদ হিসাবে তার খ্য়াতি আছে। তিনি পাঁচবারের সাংসদ। চারবার বিজেপি-র হয়ে। একবার সমাজবাদী পার্টির হয়ে জিতেছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অভিযোগমুক্ত বলে জানায়।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
কী হবে?
কুস্তিগিরেরা জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরও করেনি পুলিশ। সাক্ষী, বিনেশদের মনে হচ্ছে, পুলিশের উপর প্রবল রাজনৈতিক প্রভাব আছে। তারা জানিয়েছেন, ক্রীড়ামন্ত্রকও চুপ। তারা মেডেল পেলে তখন মন্ত্রী, নেতারা ছবি তোলার জন্য ভিড় জমান। এখন তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তারাও এবার ঠিক করে এসেছেন, তারা শেষ দেখে ছাড়বেন।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
আইনি ব্যবস্থা
বিক্ষোভরত কুস্তিগিরেরা জানিয়েছেন, তারা এবার প্রয়োজনে আইনি পথেও হাঁটবেন। তারা আগে দেখতে চান, সরকার কিছু করে কি না, যদি না করে, তাহলে তারা আইনি পথে হাঁটবেন। আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
9 ছবি1 | 9
কুস্তিগিরদের অভিযোগ, এরপরেও কিছু হয়নি। তারা পুলিশে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই ব্রিজভূষণ শরণ সিং হলেন বিজেপি-র সাংসদ এবং উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী নেতা।
দিল্লির মহিলা কমিশনের বক্তব্য
দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান স্বাতী মালিওয়াল বলেছেন, তিনি রাতে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।
স্বাতী জানিয়েছেন, সকালে তিনি আবার আসেন। তখনও ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না। অনেক ঝগড়া করে তিনি এসেছেন। তার প্রশ্ন, দিল্লি পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কেন তারা কাউকে এখানে ঢুকতে দেবে না? কেন তারা দিল্লির মহিলা কমিশনকে পর্যন্ত কাজ করতে বাধা দিচ্ছে? কোন আইনে তারা এই কাজ করতে পারে?