দিল্লির যন্তরমন্তরে বৃহস্পতিবার থেকে প্রতীকী সংসদ শুরু করলেন আন্দোলনরত কৃষক নেতারা। পুলিশের কড়া নিরাপত্তা।
বিজ্ঞাপন
দিল্লির যন্তরমন্তর ঘিরে রেখেছে পুলিশ। নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী। সেখানেই বৃহস্পতিবার থেকে প্রতীকী সংসদ শুরু করেছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। গত বছর জুন মাস থেকে কৃষি আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন দেশের এক বিপুল অংশের কৃষক। তাদের দাবি ছিল, সরকার কৃষি আইনে সংশোধন করে পুঁজিপতিদের লাভের ব্যবস্থা করছে, কিন্তু কৃষকদের উপকারের কথা ভাবা হচ্ছে না। বস্তুত ওই আইন এলে কৃষকরা প্রভূত সমস্যায় পড়বেন বলে অভিযোগ তাদের। গত নভেম্বরের শেষ দিকে দিল্লি ঘেরাওয়ের ডাক দেয় কৃষক সংগঠনগুলি। তখন থেকে দিল্লির সীমানায় অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে কৃষক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দিল্লি উত্তালও হয়ে উঠেছিল। তারপরেও অবস্থান তোলেননি কৃষকরা।
ভারতীয় সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার পরে ফের বিক্ষোভের পরিকল্পনা শুরু করেন কৃষকরা। স্থির হয়, পার্লামেন্ট চলাকালীন প্রতীকী সংসদের আয়োজন করবেন কৃষকরা। সেখানে স্পিকার থাকবেন, সরকারপক্ষ এবং বিরোধীপক্ষ থাকবে। কৃষি আইন সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে।
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
দিল্লির সীমানায় কৃষক বিক্ষোভ চলছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকরা দিল্লিতে ট্রাক্টর মার্চ করার পরিকল্পনা করেছে।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture-alliance
সরকারি আলোচনা বিফল
মোদী সরকারের সঙ্গে বহুবার আলোচনায় বসেছেন বিক্ষোভরত কৃষক নেতারা। কিন্তু এতবার আলোচনার পরেও কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। কৃষকদের মূল দাবি মানতে চায়নি সরকার।
ছবি: Sameeratmaj Mishra/DW
সুপ্রিম কোর্টের কমিটি
বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটাবার জন্য কমিটি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারও আগে কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখনো কৃষকরা রাজি হয়নি। এবারও তাঁরা বলেছেন, কমিটি তার কাজ করতে পারে। কিন্তু তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
কৃষকদের মূল দাবি
কৃষকদের প্রধান দাবি হলো, বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। আইন করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর তাঁদের চুক্তি চাষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।
ছবি: Mohsin Javed
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে
সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, আপাতত তিনটি কৃষি আইনের রূপায়ণ স্থগিত থাকবে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করবেন।
ছবি: Mohsin Javed
কৃষকরা কেন মানছেন না
কৃষক নেতারা মনে করেন, সরকার চাইছে, কৃষকরা আন্দোলন থামিয়ে দিল্লির সীমানা ছেড়ে চলে যাক। সুপ্রিম কোর্টের কমিটি যে তাঁদের দাবি মানবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অতীতে কৃষি বিলের সমর্থন করেছেন। তাই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন করবেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
দিল্লির সীমানায় বসে কৃষকরা
গত ৪৯ দিন ধরে কৃষকরা দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের সঙ্গে দিল্লির যে সীমানা আছে, তার বেশির ভাগ জায়গায় কৃষকদের বিক্ষোভ চলছে। দিল্লিতে এখন প্রবল শীত। তার মধ্যেই কৃষকরা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
বহু কৃষকের মৃত্যু
কৃষক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আন্দোলনরত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। শীত সহ্য করতে না পেরে অনেকে মারা গেছেন। তবে তারপরেও বিক্ষোভ থামেনি।
ছবি: Sameeratmaj Mishra/DW
প্রজাতন্ত্র দিবসের পরিকল্পনা
আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে সামরিক বাহিনীর প্যারেড হয়। সেখানে ভারতের সামরিক শক্তির পাশাপাশি উন্নয়নের নজির এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। কৃষকরা ঠিক করেছেন, সেদিন তাঁরাও দিল্লিতে ট্রাক্টর প্যারেড করবেন।
ছবি: Reuters/A. Hussain
সরকারের আপত্তি
মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠনে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা দেশের কাছে বিড়ম্বনার কারণ হবে। কিন্তু যোগেন্দ্র যাদবের দাবি, তাঁরা জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাতেই এই পরিকল্পনা করেছেন।
ছবি: Seerat Chabba/DW
9 ছবি1 | 9
প্রাথমিক ভাবে দিল্লির প্রশাসন এবং পুলিশ কৃষকদের অনুমতি দেয়নি। এরপর দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রশাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। স্থির হয় ২০৬ জন কৃষক একদিনে একসঙ্গে যন্তরমন্তরের প্রতীকী সংসদে যোগ দিতে পারবেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকালে বাস বোঝাই কৃষক দিল্লির সীমান্ত থেকে যন্তরমন্তরের দিকে রওনা হন। কিন্তু মাঝরাস্তায় পুলিশ তাদের আটকে দেয়। প্রথমে তাদের একটি রিসর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের সংখ্যা গোনে পুলিশ। এরপর যন্তরমন্তরের দিকে ফের রওনা হন কৃষক নেতারা।
কৃষক নেতা যোগেন্দ্র যাদব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কীভাবে সুষ্ঠুভাবে সংসদের অধিবেশন চালাতে হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্ক করতে হয়, প্রতীকী সংসদে তারা তা দেখাবেন। ৯ অগাস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কৃষক সংসদ চলবে।
কৃষকদের প্রতীকী সংসদ চালানোর অনুমতি দিলেও গোটা দিল্লি জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ তৈরি করেছে দিল্লি পুলিশ। সাতটি মেট্রো স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে।
কৃষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে তারা এই প্রতীকী সংসদের আয়োজন করবেন। গোলমাল এড়িয়ে চলা হবে। তবে গত ২৬ জানুয়ারি কৃষক আন্দোলন ঘিরে দিল্লিতে যে উত্তাপ ছড়িয়েছিল, সে কথা মাথায় রেখে সতর্ক প্রশাসন।