1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতে পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৭ এপ্রিল ২০১৭

নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে এখন দিল্লিতে শেখ হাসিনা৷ প্র্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান৷ আগামী বছর বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন আর মোদীর অগ্নিপরীক্ষা ২০১৯ সালে৷ তাই দু’দেশের জন্যই এ সফরের গুরুত্ব অনেক৷

Berlin Merkel mit Bangladeschs Ministerpräsidentin Sheikh Hasina
ছবি: Getty Images/K. Koall

হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই তৈরি ভারত৷ দিল্লি জুড়ে তাই সাজসাজ রব৷ দু'দেশের জাতীয় পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছে ভারতের রাজধানী শহরকে৷ দিল্লির পার্ক রোডের নাম হয়েছে ‘‘শেখ মুজিবুর মার্গ’’৷ শুক্রবার ভারতে পৌঁছেছেন হাসিনা৷ প্রোটোকল ভেঙে দুপুরের ব্যস্ত রাস্তার যানজট পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং৷ মোট তিনদিনের সফর৷ অর্থাৎ ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে থাকবেন তিনি৷ এ সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মোট ৩৫টি চুক্তি এবং সমঝোতা-পত্র স্বাক্ষরিত হতে চলেছে৷ খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রিবাহী বাস ও ট্রেন চলাচল এবং বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালগাড়ি চলাচলের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে৷ তবে এখনই তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে না, ইতিমধ্যেই জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর৷ তবে অদূর ভবিষ্যতে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এই চুক্তিটি যাতে বাস্তবায়িত হয়, তার পথো মসৃণ হতে পারে হাসিনার এ সফরে৷

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জন্য ঢাকা থেকে বিশেষ উপহার এনেছেন হাসিনা৷ নিজের হাতে সেগুলি তাঁদের হাতে তুলে দেবেন তিনি৷ সফরের শুরুতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দূতাবাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখী হবেন শেখ হাসিনা৷ সেখানে তিনদিনের এই সফরের উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য সাফল্য-সূচী তুলে ধরবেন৷ পরদিন, অর্থাৎ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফ থেকে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে৷ এছাড়া এদিন রাতেই হাসিনার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছে রাষ্ট্রপতি ভবন৷ রবিবার হাসিনা রাজস্থানের আজমির শরিফ দরগা দর্শণে যাবেন৷ সেখানে এখন ওরস উৎসব চলছে৷ তারপর ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা৷

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নিজে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ প্রথমে নিমরাজি হলেও পরে রাষ্ট্রপতির টেলিফোন পেয়ে দিল্লি আসছেন মমতা৷ তার মানে, রাষ্ট্রপতি ভবনে মুখোমুখি হবেন মমতা-‌হাসিনা৷

হাসিনার ভারত সফরে ‌বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘‌অসমাপ্ত আত্মজীবনী'-র হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করবেন দু'‌দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ মুক্তিযুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবের মেয়ের ভারত সফরে একাত্তরের স্মৃতিকে আরও একবার উসকে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দিল্লিতে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মাটিতে নিহত ভারতীয় সেনাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা৷ ১৬৬১ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ দিয়েছিলেন সেই যুদ্ধে৷ তাঁদের নিকটাত্মীয়ের হাতে সম্মান ও স্বীকৃতি তুলে দেবেন হাসিনা৷ এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে হাসিনার সফর শুরু হবে৷ দিল্লির ‘মানেকশ সেন্টার'-এ ঐ তালিকার প্রথম সাতজন সেনার পরিজনদের হাতে মানপত্র, রৌপ্য মেডেল এবং ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেবেন হাসিনা৷ থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও৷ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের জন্য মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বাংলাদেশ সরকার৷ প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর ধাপে ধাপে তালিকার বাকিদের পরিবারকেও ঐ সাম্মানিক দেওয়া হবে৷

ঋতব্রত ব্যানার্জি

This browser does not support the audio element.

‌‌হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলিও৷ পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল সিপিআই(‌এম)‌-‌এর রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জি জানালেন, ‘‌‘‌বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নাড়ির টান রয়েছে৷ মঝের কাঁটাতারের বেড়া শুধুই কাঁটাতার মাত্র৷ আমরা দু'দেশের মানুষ এক ভাষায় কথা বলি৷ একই খাবার খাই৷ একই গান গাই৷ একইরকম পোশাক পরি৷ তাই ওপার বাংলার প্রধানমন্ত্রী এদেশে এলে আনন্দ হয় বৈকি৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতের সমগ্র উত্তর-‌পূর্ব অংশ ভীষণ ভাবে উপকৃত হবে৷'‌'‌

তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অনড় মনোভাবকে সমর্থন করেননি তিনি৷ বলেছেন, ‘‌‘‌আলাপ-‌আলোচনার মধ্যে দিয়ে তিস্তা চুক্তি নিয়ে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে৷ সদিচ্ছা থাকলে সেটা মোটেও অসম্ভব নয়৷'‌'‌

নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনার মধ্যে যে ৩৫টি চুক্তি হতে চলেছে তার বেশরিভাগই বাংলাদেশের দুই দেশের পরিকাঠামো উন্নয়ন-‌সংক্রান্ত৷ বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালগাড়ি চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রিবাহী বাস ও ট্রেন চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ, ভারত-‌বাংলাদেশ সীমান্তে বর্ডার হাট গড়া, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় ভারতের সহযোগিতা, তথ্য ও সম্প্রচার, অসমারিক পারমাণু সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, তৃতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি), ভারতীয় ঋণ, যশোরে হিরো মোটোকর্প তৈরি, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা৷

অন্যদিকে, তিস্তার জলবণ্টন চুক্তিতে সায় নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির৷ তিস্তা প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘‌‘‌তিস্তায় পর্যাপ্ত জলই নেই৷'‌'‌ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌জলই যদি না-থাকে, আমি কী করতে পারি? তিস্তার জলস্তর তো ক্রমশ শুকিয়ে নীচে নেমে যাচ্ছে৷ এখনই নদীতে জল নেই৷'‌'‌

মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, ২০১১ সালেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনমোহনের সঙ্গে ঢাকা সফর বাতিল করেন মমতা৷ ফলে শেষ মুহূর্তে তিস্তা চুক্তি বানচাল হয়ে যায়৷ মমতা বলেন, ‘‌‘‌বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই ঠিকই৷ তবে তা রাজ্যের মানুষের ক্ষতি করে নয়৷''

মমতা ‌আরও বলেছেন, ‘‌‘‌যদি এপ্রিলের গোড়াতেই এই অবস্থা হয়, তা হলে আপনারই কল্পনা করুন ভরা গ্রীষ্মে কী হতে চলেছে৷ বর্ষা তো এখন আসতে আসতে জুলাই হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে এই তিন মাসের জন্য খরাপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে৷'‌'‌

তিস্তার জলবণ্টনের বিরোধিতা অবশ্য এই প্রথম নয় মমতার৷ উত্তরবঙ্গের বাস্তব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির বিরোধী৷ ক্ষমতায় আসার পর তিস্তার প্রকৃত অবস্থা জানতে বিশেষজ্ঞ কমিটিও নিয়োগ করেন তিনি৷ তিস্তার জলবণ্টনে সম্মতি না থাকলেও, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে তিনি দিল্লিতে আসছেন৷

গোটা উত্তরবঙ্গের জন্য জলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উত্‍‌স হলো তিস্তার জল৷ উত্তরবঙ্গ থেকে সিকিম হয়ে তিস্তা ঢুকেছে বাংলাদেশে৷ গতিপথে বিভিন্ন জলবিদ্যুত্‍‌ প্রকল্পের ধকল নিতে গিয়ে, টান পড়েছে জলে, যার প্রভাব পড়ছে দু'দেশের চাষবাসে৷

প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আরও কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি হতে পারে৷এর মধ্যে ভারতের ত্রিপুরার পালাটানা কেন্দ্র থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে একটি ‘‌বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি'‌ (পিপিএ-পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট) হতে চলেছে৷ বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করছে ভারত৷ বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে৷ বাংলাদেশ সার্ক ফ্রেম ওয়ার্ক ফর এনার্জি কো-অপারেশন (ইলেকট্রিসিটি) ও বিমসটেক (বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) ভুক্ত দেশের মধ্যে অভিন্ন বিদ্যুত লাইন তৈরিতে ইতিমধ্যেই একটি চুক্তি রয়েছে৷ বিমসটেকভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা৷ ভারতের দু'টি বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি আদানি ও রিলায়েন্সের সঙ্গেও পৃথক দু'টি চুক্তি হতে পারে৷ এই চুক্তি অনুযায়ী, রিলায়েন্স বাংলাদেশের মেঘনাঘাটে এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে ৭১৮ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করবে৷ পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডে ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে আদানি গোষ্ঠী৷ ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের সবটাই বাংলাদেশকে দেবে তারা৷ এছাড়াও নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশ আমদানি করতে চায়৷ একইভাবে ভূটানে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের কথা ভাবছে বাংলাদেশ৷ ভুটানের কুরি-১ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারত যৌথভাবে ১১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ এ জন্য অবশ্য ভারতের জমি ব্যবহার করতে হবে বংলাদেশকে৷ এ ব্যাপারে ভারত-‌বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তিতে সই করতে পারেন মোদী ও হাসিনা৷ জ্বালানি বিষয়ক দু'টি চুক্তি সই হতে পারে৷ সেগুলি হলো, বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের একটি এলএনজি পাইপলাইনের করিডর তৈরি৷ করিডরটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা দিয়ে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে পৌঁছাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ