দিল্লির ওয়াজিরাবাদে এদিন ওয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স(একিউআই) ছিল ৭৯৮। যা কি না, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর খারাপ, বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি দিল্লির একিউআই সকালের দিকে ৩৭০ থেকে ৪৭০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। চিকিৎসকদের মতে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ।
কিছুদিন আগেই দিল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহরের শিরোপা পেয়েছে। তারপরেও পরিস্থিতি ভালো হওয়া দূরস্থান, ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সকাল থেকে ধোঁয়াশার আবরণে ঢাকা পড়ে থাকে দিল্লি। শুক্রবারও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দূষণ ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষের সুপারিশ, অবিলম্বে চতুর্থ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এই চতুর্থ পর্যায়ের ব্যবস্থা মানে, বাইরে থেকে দিল্লিতে কোনো ডিজেল গাড়ি ঢুকতে পারবে না। ডিজেল ট্রাক, ম্যাটাডোরও নয়। দিল্লির ভিতরে গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডিজেল গাড়ি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জোড়-বেজোড় বা অড-ইভন আবার চালু করতে হবে। তার অর্থ, নম্বর প্লেটের শেষের অক্ষর জোড় সংখ্যা থাকলে সেই গাড়ি একদিন বেরোবে, বেজোড় সংখ্যা অন্যদিন বের হতে পারবে।
দূষণ থেকে রেহাই নেই দিল্লির
প্রতি শীতেই ঘুরেফিরে শিরোনামে উঠে আসে বিষাক্ত দিল্লির বাতাস৷ কেন বদলাচ্ছে না বাস্তবতা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/I. Aditya
কতটা দূষিত দিল্লি?
দিল্লির বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া আর দিনে ২৫টা সিগারেট খাওয়ার প্রভাব ফুসফুসের ওপর সমান৷ এতটাই দূষিত ভারতের রাজধানীর বাতাস যে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম বিপজ্জনক বাতাসের মানের চেয়ে ২০ গুণ খারাপ৷ ভারতের কেন্ত্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রক সিপিসিবি জানাচ্ছে, বাতাসের মানের মাপকাঠিতে সবচেয়ে বেশি দূষণের মাত্রা হয় ৫০০৷ দিল্লির বাতাস সেই মাপকাঠিতে কখনোই ৪৫০ থেকে নামে না ও প্রায়ই ৫০০ ছুঁয়ে থাকে
নিকটবর্তী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত যানচলাচল দিল্লির বাতাসকে নিশ্বাসের অযোগ্য করে তুলেছে৷ এছাড়া, ভারতের অন্যান্য শহরের চেয়ে তুলনায় দিল্লিতে বেশি শীতের আবহাওয়া থাকায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ও বিভিন্ন দূষকের কণা বাতাসে আটকে থাকে৷
ছবি: DW/Catherine Davison
ভৌগলিক কারণ
ক্লিন এয়ার এশিয়ার ভারত অঞ্চলের প্রধান প্রার্থনা বরা ডয়চে ভেলেকে জানান, অবস্থানগত কারণের জন্য দিল্লির এই সমস্যা গুরুতর হচ্ছে৷ আশেপাশে কোনো জলাধার না থাকায় ও আবহাওয়ার ধাঁচ শীতপ্রধান ও শুষ্ক হওয়ায় দূষিত বাতাস পালাবার জায়গা পায় না৷ এছাড়া, তীব্র বেগে চলা বাতাস প্রায়ই সাথে করে আরো বাড়তি ধুরো নিয়ে আসে, যা আরো খারাপ করে পরিস্থিতি৷
ছবি: Gaurav Menghaney
প্রভাব
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতি শীতেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিশ্বাসজনিত ও হৃদরোগ-সম্পর্কিত রোগীদের বাড়ন্ত দেখতে পাই৷ দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকাশ রোধ করে৷ দিল্লিতে বর্তমানে প্রতি তিনজনে একজন শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বহু শিশুর ফুসফুস সম্পূর্ণ বেড়ে ওঠে না ও সেখানে রক্তক্ষরণও হয়=তে থাকে৷’’
ছবি: DW/Catherine Davison
কোভিড, উৎসব ও দূষণ
নিকৃষ্ট বাতাসের মান দিল্লির বাসিন্দাদের সবল ফুসফুসকে বিকল করছে৷ এরসাথে উৎসবের মরসুমে আতশবাজির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে এই মান আরো নিচে নামাতে থাকে৷ অসমর্থ্য ফুসফুস কোভিড সংক্রমণ টেকাতে পারছে না, ফলে হু হু করে বাড়ছে দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ, মনে করছেন অনেকে৷ সোমবার দিল্লিতে একদিনে সাত হাজার ৭৪৫টি নতুন সংক্রমণ দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar
কর্তৃপক্ষের অভিমত
২০১৯ সালে কৃষিবর্জ্য পোড়ানো থামাতে আইনী নির্দেশ এলেও, তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি৷ জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনাল নভেম্বর মাসে আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘গ্রিন অ্যাপ’ চালু করেছেন, যাতে করে দুষণবিষয়ক নাগরিক নালিশ নথিভুক্ত করা যায়৷
ছবি: DW/A. Ansari
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অনুমিতা রায়চৌধুরীর মতে, অবিলম্বে শহরে বিকল্প গণপরিবহণের কথা ভাবতে হবে, বাড়াতে হবে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যানচলাচল৷ পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও শিল্পক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার চালু করতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে এসবের কিছুই সরকারী তৎপরতা ছাড়া সম্ভব নয়, মনে করেন রায়চৌধুরী৷
ছবি: DW/A. Ansari
7 ছবি1 | 7
দিল্লিতে বাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তা, ফ্লাইওভার, পাইপলাইন-সহ সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। যে কারখানাগুলো পিএনজি ছাড়া অন্য জ্বালানিতে চলে, সেগুলিও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। স্কুলবন্ধ রাখার ব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
দিল্লিবাসীর দুর্ভোগ
গ্রিনপিস সাউথইস্ট এশিয়া অ্যানালিসিস ও আইকিউএয়ারের সমীক্ষা জানাচ্ছে, দূষণের জন্য ২০২০ সালে দিল্লিতে ৫৪ হাজার মানুষের অকালে মৃত্যু হয়েছে। সর্দি, কাশি, জ্বর ও সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দিল্লিবাসী। তাদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হচ্ছে। এছাড়া মাথাব্যথা, বমি ভাব, ঝিমুনিতে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বলছে, শ্বাসকষ্ট তো বটেই, হৃদরোগও হতে পারে। দূষণ শরীরে যকৃৎ, মস্তিস্ক, স্নায়ু-সহ অন্য অঙ্গের উপর বিরূপ প্রভাব, ফেলতে পারে।
টিকিৎসকরাও জানাচ্ছেন, তাদের কাছে শ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে প্রচুর মানুষ আসছেন।