ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, বিকল্প বিদ্যুতের উৎস-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বেয়ারবকের।
বিজ্ঞাপন
দুই দিনের সফরে দিল্লি এসেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। সোমবার সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পরেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় তার। বৈঠক শেষে একসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই মন্ত্রী।
প্রথমে জয়শংকর এবং পরে বেয়ারবক বৈঠকের বিষয়বস্তু এবং তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। দুইজনই জানিয়েছেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বস্তুত, বিবৃতি দেওয়ার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নও গ্রহণ করেছেন দুই মন্ত্রী।
বেয়ারবক জানিয়েছেন, ঐতিহাসিকভাবে ভারত জার্মানির সহজাত সঙ্গী। দাীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-সহ একাধিক সম্পর্ক আছে। এবার সেই সম্পর্ক আরো বড় মাত্রা পাবে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইউরোপ তো বটেই, ভারতও সমস্যায় পড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। কীভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বিকল্প শক্তির উৎস, বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশই এই বিষয়ে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বস্তুত, মঙ্গলবার দিল্লির প্রান্তে হরিয়ানার একটি গ্রামে বিকল্প বিদ্যুতের একটি প্রকল্প দেখতে যাবেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জার্মানির নতুন সরকার: ফ্যাশনে পরিচয়?
বুধবার জার্মানিতে নতুন সরকার শপথ নিচ্ছে৷ তিন দলের জোট সরকারের শীর্ষ নেতাদের পোশাক নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
‘যেন রক ব্যান্ডের সদস্য’
জার্মানির ভবিষ্যৎ চার মন্ত্রী৷ (বাঁ থেকে) ভাইস চ্যান্সেলর এবং ইকোনমি ও জ্বালানিমন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক, পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো মন্ত্রী ফল্কার ভিসিং এবং অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার৷ কেউ টাই পরেননি৷ আরেকজনের পায়ে স্নিকার৷ জোট সরকার গঠনের আলোচনায় অংশ নিতে তারা এভাবেই গিয়েছিলেন৷ পরে ইতিহাসবিদ ক্লাওদিয়া গাৎস্কা বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে ইন্ডি রক ব্যান্ডের সদস্য৷’’
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর
জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন ওলাফ শলৎস৷ ম্যার্কেল সরকারে তিনি অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন৷ ছবিতে এ বছর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে এভাবেই অংশ নিয়েছেন তিনি৷ টি-শার্টের সঙ্গে ছিল ট্রাউজার৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, চ্যান্সেলর হলে সবসময় টাই পরবেন কিনা৷ উত্তরে বলেছিলেন, বেশিরভাগ সময় পরবেন, সবসময় নয়৷
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
সাধারণত তারা যা পরেন
২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর জোট সরকার গড়তে আলোচনা শুরু করেছিল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, সবুজ দল ও মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল৷ ২৪ নভেম্বর তারা জোট চুক্তিতে উপনীত হয়৷ ছবিটি সেই দিনের৷ খেয়াল করে দেখুন, ডানে থাকা ইকোনমি ও জ্বালানিমন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক টাই পরেননি৷ তাকে কখনো টাই পরতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
‘নতুন শুরুর পক্ষে’
ছবিঘরের প্রথম ছবি ‘রক ব্যান্ডের’ যে সদস্যদের দেখেছেন এই ছবিতেও তাদের দেখতে পাচ্ছেন৷ জার্মান নির্বাচনের দুদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর তোলা এই ছবিতে সবুজ দল ও এফডিপির শীর্ষ চার নেতাকে দেখা যাচ্ছে৷ ইতিহাসবিদ ক্লাওদিয়া গাৎস্কা বলেন, ‘‘এ বছরের নির্বাচনে যারা জিতেছেন তারা দেখাতে চান যে তারা পরিবর্তনের পক্ষে, নতুন শুরুর পক্ষে৷ নিজস্ব স্টাইল দিয়ে তারা সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন৷’’
ছবি: Instagram/@volkerwissing/via Reuters
সমালোচনা
ফ্যাশন ডিজাইনার ভল্ফগাং ইয়ুপ ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস (বামে) ও ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেকের (ডানে) পোশাকের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ স্পিগেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তাদের পোশাক অসহায়ত্বের একটা মাত্রার প্রতীক৷’’ হাবেকের মাঝেমধ্যে টাই পরা উচিত বলেও তিনি মনে করেন৷ ‘‘কেউ যদি পোশাককে অবহেলা করে সেটা তার চিন্তাভাবনার ধরনকে প্রতিফলিত করে,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Christophe Gateau/dpa/picture alliance
‘স্বাভাবিক’
স্টাইলের উপর কয়েকটি বইয়ের লেখক ব্যার্নহার্ড রোয়েৎসেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সময় পালটেছে৷ এখনকার ‘বিজনেস লুক’ অনেকটাই কম ফর্মাল৷ তাই তিন নতুন নেতার (হাবেক, শলৎস, লিন্ডনার) পোশাক-আশাক এখনকার যুগে একেবারেই ‘স্বাভাবিক’৷’’ সাইকোলজিস্ট ইয়েন্স ল্যোনেকার মনে করেন, ঐ তিন নেতা যে সাদা শার্ট পরেন সেটাকে ক্লাসিক বিজনেস লুক মনে করা যেতে পারে, যা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রতীক৷
ছবি: Frank Molter/Alexey Vitvitsky/Malte Krudewig/dpa/picture alliance
হাই হিলের বেয়ারবক
ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক প্রায় সবসময় উঁচু হিল পরেন৷ ফ্যাশন এক্সপার্ট রোয়েৎসেল মনে করেন, ‘‘এটা তাকে স্টাইলিশের চেয়ে সময়ের চেয়ে পেছনে পড়ে থাকা মানুষ বানিয়ে দেয়৷’’ এছাড়া বেয়ারবক যে সবসময় সর্বাধুনিক ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনে চলেন তা মনে করেন না রোয়েৎসেল৷
ছবি: K. Schmitt/Fotostand/picture alliance
স্নিকার পরে মন্ত্রীর শপথ
বেয়ারবকের সবুজ দলের অন্যতম বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন ইয়শকা ফিশার৷ ১৯৮৫ সালে হেসে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি স্নিকার পরে হাজির হয়েছিলেন (ডানে)৷ পরে ১৯৯৮ সালে তিনি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তখন অবশ্য ‘আনুষ্ঠানিক পোশাক’ পরেছিলেন তিনি (বামে)৷
ছবি: Michael Jung/Heiz Wieseler/dpa/picture alliance
সেরা পোশাক পরা ব্যক্তি
পুরুষদের ম্যাগাজিন জিকিউ ২০১৬ সালে জার্মানির বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসকে জার্মানির সবচেয়ে সেরা পোশাক পরা মানুষ নির্বাচিত করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
9 ছবি1 | 9
এদিনের আলোচনায় ভিসা সমস্যা-সহ একাধিক 'প্রশাসনিক লাল ফিতের' প্রসঙ্গও উঠেছে। দুই মন্ত্রীই জানিয়েছেন, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। এছাড়াও বেয়ারবকের সফর নিয়ে জার্মানি যে প্রেস বিবৃতি জারি করেছিল, তাতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভারতের সঙ্গে রাশিয়া এবং চীনের সম্পর্ক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
জয়শংকর জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এশিয়া প্যাসিফিকের সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত নিজের কূটনৈতিক অবস্থান জানিয়েছে।
বস্তুত, জার্মান সংবাদসংস্থা এআরডি-র এক সাংবাদিক জয়শংকরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এবং ইউরোপ রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরেও ভারত কেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনেছে। উত্তরে জয়শংকর তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে যে পরিমাণ তেল কিনেছে, ইউরোপ তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কিনেছে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও। এছাড়াও ইউরোপ রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস নিয়েছে। জয়শংকর জানিয়েছেন, ভারত বিশ্বের কথা অবশ্যই ভাববে, কিন্তু তাদের নিজের দেশের প্রয়োজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে বিষয়ে ভারত কোনোরকম আপস করবে না।
এদিন জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লির মান্ডি হাউস স্টেশনে যান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকে মেট্রোয় তিনি চাঁদনিচক যান। সেখানে চাঁদনিচকের দোকান ঘুরে দেখেন। মেট্রোভ্রমণে তার সঙ্গে ছিলেন জার্মান সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকেরা।
মঙ্গলবার বেয়ারবক যাবেন ভারতের নির্বাচন কমিশনে। সেখান থেকে হরিয়ানার খড়িতে অপ্রচলিত বিদ্যুতের প্রকল্প দেখে বার্লিনে ফিরে যাওয়ার কথা তার। ভারত এবছর জি২০-র সভাপতিত্ব পেয়েছে। ফলে ফের তিনি ভারতে আসবেন বলে জানিয়েছেন বেয়ারবক। জার্মান সরকার সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছর অন্তত দুইবার জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস ভারতে আসতে পারেন।