দিল্লিতে সোমবার সকালে বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল চলতি মরসুমে সবচেয়ে বেশি। চতুর্থ ও চূড়ান্ত পর্যায়ের সতর্কতা জারি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকালে দিল্লিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স(একিউআই) ছিল ৭৯৩, এই মরসুমে সবচেয়ে বেশি। দিল্লির লাগোয়া শহর ফরিদাবাদে একিউআই ছিল ৮৯৫। সকালে পুরো দিল্লি ছিল ধোঁযাশার চাদরে ঢাকা। ১৫০ মিটারের বেশি দেখা যাচ্ছিল না। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।
সকালে দিল্লিবাসীর ঘুম ভাঙে এই চরম দূষণের মধ্যে। রাস্তায় নামতেই দেখা যায়, চারপাশে ধোঁয়া ও ধুলোর আস্তরণ। অনেক মানুষই মাস্ক পরে যাতায়াত করছেন। বেলা বাড়লেও ওই অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং বাড়ির বাইরে বেরোলে ধোঁয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডাও লাগছে। রাস্তায় নামলেই দেখা যাচ্ছে, মানুষ সমানে কাশছেন। এই দূষণের ফলে প্রথমেই মানুষের গলা খারাপ হচ্ছে। সর্দি, জ্বর হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থ প্রতীম বোস আগেই ডিডাব্লিউকে জানিয়েছিলেন, এই সময় বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তার মধ্যে অন্যতম হলো, বারবার গার্গল করা ও স্টিম নেয়া। খুব জরুরি কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে না বেরনোই ভালো। এখন তাদের কাছে আসা রোগীর সংখ্যাও বহুগুণ বেড়ে গেছে।
সকাল থেকে এই অবস্থায় বিমান চলাচল বিঘ্নিত হয়। সকালেই অন্তত চারটি বিমান জয়পুরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অনেক বিমান দেবিতে ওঠানামা করছে। সকালে ইন্ডিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তার পাশের এলাকায় দৃশ্যমানতা ছিল কম।
দূষণ চরমে, দিল্লিতে নির্মাণ বন্ধ, ঘরে থেকে কাজ করার অনুরোধ
এই নিয়ে পরপর তিনদিন ধরে দিল্লির একিউআই গড়ে চারশর উপরে। তাই শুক্রবার থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিলো প্রশাসন।
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
বায়ুদূষণের তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয়
বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দিল্লির স্থান দুই নম্বরে। এক নম্বরে আছে পাকিস্তানের লাহোর। পরপর তিন দিন ধরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স(একিউআই) গড়ে চারশোর উপরে। শুক্রবার সকালে তা অনেকখানি বেড়ে যায়। একটু বেলা গড়ালে তা কিছুটা কমে। ফলে দিল্লিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন ৩ প্ল্যান চালু করা হয়েছে।
ছবি: Rouf Fida/DW
একাধিক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা
গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান(জিআরএপি)-র চারটি পর্যায় আছে। একিউআই চারশ থেকে পাঁচশ হলে তিন নম্বর পর্যায় চালু হয়। এর ফলে অত্যন্ত জরুরি সরকারি ক্ষেত্র ছাড়া অন্য জায়গায় নির্মাণ বন্ধ থাকে। মাটি কাটার কাজ করা যায় না। ধুলো ধোঁয়া হয় এমন কোনো কাজ করা যায় না। শুক্রবার সকাল আটটা থেকে এই পর্যায় চালু করা হয়েছে।
ছবি: Rouf Fida/DW
প্রাথমিক স্কুল অনলাইনে
জিআরএপি ৩ চালু হওয়ায় সব স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। বাচ্চারা যাতে এই দূষণের মধ্যে বাইরে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ছবি: Sajjad Hussain/AFP
কাঠ ও কয়লা পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা
এখন কেউ কাঠ বা কয়লা পোড়াতে পারবেন না। দিল্লিতে শীতের সময় কাঠ জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার একটা অভ্যাস আছে। বিশেষ করে সরকারি বা বেসরকারি রক্ষী যারা বাইরে সারারাত কাজ করেন, তারা এভাবেই শীতের হাত থেকে বাঁচেন। আর পোশাক ইস্তিরি যারা করেন তারা কয়লার ইস্তিরি ব্যবহার করেন।
ছবি: Charu Kartikeya/DW
ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে
দূষণের ক্ষেত্রে ভারত-তিন ও ভারত-চার পর্যায়ের ডিজেল গাড়ি এখন দিল্লিতে চলবে না। তাছাড়া বাইরে থেকে কোনো ডিজেল বাস দিল্লির ভিতরে ঢুকতে পারবে না। দিল্লির ভিতরে সিএনজি বা ইলেকট্রিক বাসই চলে। তাছাড়া দিল্লির ভিতরে সিমেন্টের বস্তাও কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না।
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
দিল্লিবাসীকে অনুরোধ
দিল্লিবাসীদের বলা হয়েছে, তারা যেন পারলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন। বাইরে গেলে মেট্রো বা গণপরিবহন ব্যবহার করেন। একান্তই গাড়ি বের করতে হলে কার পুল করেন।
ছবি: AB Rouf/DW
গ্যাস চেম্বার
দিল্লিতে দূষণ যখন চরমে ওঠে তখন রাজধানী গ্যাস চেম্বার হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ করা হয়। সেসময় এখানকার দূষণে একদিন থাকা মানে দিনে ৫০টা সিগারেট খাওয়ার সমান বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ছবি: Rouf Fida/DW
7 ছবি1 | 7
সর্বোচ্চ সতর্কতা
দিল্লি সরকার সর্বোচ্চ চতুর্থ পর্যায়ের সতর্কতা বা গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান(জিআরএপি ৪) জারি করেছে। এর ফলে দিল্লিতে কোনোরকম নির্মাণকাজ বা ভাঙাভাঙির কাজ করা যাবে না। দিল্লিতে মাটি কাটা যাবে না। গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি চালু হবে। স্কুলে অনলাইন ক্লাস হবে। খুব জরুরি না হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাড়িতে বসে কাজ করা যাবে।
তবে দিল্লি সরকারের কড়া সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কেন জিআরএপি ৩-এর রূপায়ণে দেরি হলো? কেন এই ঝুঁকিটা নেয়া হলো ? কেন একিউআই তিনশর উপর যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হলো?
সোমবারই জরুরি ভিত্তিতে দূষণ নিয়ে শুনানি হয়। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, তাদের না জানিয়ে যেন কোনো কড়াকড়ি শিথিল না হয়।
দূষণ নিয়ে রাজনীতি
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিল্লির দূষণ এই অবস্থায় পৌঁছেছে। দূষণ পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়েছে এবং তা ভয়ংকর জায়গায় চলে গেছে।
দূষণকে বুড়ো আঙুল, দেদার বাজি দিল্লিতে
বাজির দাপটে দূষণের মাত্রা ফের চরম সীমায় দিল্লিতে। সোমবার ভোরে কোনো কোনো জায়গায় একিউআই ছিল ৯০০।
দিল্লিতে বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ। বাজি বিক্রিও নিষিদ্ধ। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষের হাতে এত বাজি এল কোথা থেকে? নাগরিকদের বক্তব্য, পাড়ায় পাড়ায় লুকিয়ে বিক্রি হয়েছে বাজি।
ছবি: Kabir Jhangiani/NurPhoto/picture alliance
শব্দ-ধোঁয়ার তাণ্ডব
রোববার সন্ধের পর থেকেই তাণ্ডব শুরু হয়। পাড়ায় পাড়ায় বিকট শব্দে ফাটতে শুরু করে বাজি। আকাশে রকেটের রোশনাই। এই সবকিছুই হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে।
ছবি: Rouf Fida/DW
দূষণের মাত্রা
রোববার রাত থেকেই দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সোমবার ভোরে কোনো কোনো এলাকায় দূষণের মাত্রা ৯০০ একিউআই-এ পৌঁছে যায়।
ছবি: Rouf Fida/DW
আকাশ থেকে দিল্লির ধোঁয়া
সোমবার ভোরে দক্ষিণ দিল্লির প্রাণকেন্দ্র লাজপত নগরে দূষণ ছিল ৯৫৯ একিউআই। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম অঞ্চলে ছিল ৯১০। করোলবাঘে ছিল ৭৭৯। দিল্লির গড় একিউআই ছিল ৫০০।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance
ধোঁয়ায় ধোঁয়া
ভোরের দিল্লিতে কার্যত কোনো দৃশ্যমানতা ছিল না। চারিদিক ঢেকে ছিল ধোঁয়ায়। রোদ ওঠার পর ইন্ডিয়া গেটের সামনের অবস্থা ছিল এমন।
ছবি: Rouf Fida/DW
দুপুরে কমেছে
সোমবার বেলায় দূষণের পরিমাণ সামান্য কমেছে। গড় একিউআই ৩৫০-এ পৌঁছেছে।
ছবি: Rouf Fida/DW
বৃষ্টিতে লাভ হলো না
বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার ভোরে বৃষ্টি হওয়ায় দিল্লির দূষণের পরিমাণ অনেকটাই নেমে গেছিল। রোববার লাগামছাড়া বাজি না ফাটলে দূষণ আয়ত্ত্বের মধ্যে থাকতো।
ছবি: Rouf Fida/DW
কেন এত বাজি
সরকার স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, সোমবার থেকে রাস্তায় অড-ইভেন নম্বরে গাড়ি চলবে। এত কিছুর পরেও কেন প্রশাসন সতর্ক হলো না, কেন বাজি ফাটানোর জন্য যথেষ্ট ধরপাকড় হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
ছবি: Rouf Fida/DW
কৃত্রিম বৃষ্টি
সরকার জানিয়েছে, দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে দূষণ কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। একমাত্র সেনাবাহিনীর হাতে সেই প্রযুক্তি আছে। শেষপর্যন্ত তা সম্ভব হবে কি না, এখনো সে বিষয়ে সেনা কোনো তথ্য দেয়নি।
ছবি: Rouf Fida/DW
10 ছবি1 | 10
আতিশির অভিযোগ, গত ছয় বছরে মধ্যপ্রদেশে খড় পোড়ানোর ঘটনা বেড়েছে। তার প্রশ্ন, কেন কেন্দ্র এই খড় পোড়ানো কম করছে না?
দিল্লি বিজেপি বলেছে, দূষণ বাড়ার সব দায় রাজ্য সরকারের। তারা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। দিল্লি বিজেপি-র সভাপতি ও অন্য নেতারা মেট্রো স্টেশনের বাইরে সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় মাস্ক দেয়া শুরু করেছেন।