আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে সরগরম দিল্লি। তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন রাশিয়ার এনএসএ এবং মার্কিনগোয়েন্দা প্রধান। দুইজনেই আলাদা আলাদা করে ভারতীয় এনএসএ-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
বুধবার দুপুরে দিল্লিতে বৈঠক করেন রাশিয়ার জাতীয় উপদেষ্টা নিকোলাই পাত্রশেভ ও ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, নিকোলাই দেখা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গেও। দিনকয়েক আগেই আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। তারপরেই এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
কাদের হাতে আফগান মন্ত্রিসভা
কেউ ছিলেন মোস্ট ওয়ান্টেড। জাতিসংঘের তালিকায় এখনো কেউ কেউ 'জঙ্গি'। এক নজরে তালেবান সরকার।
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দাজা। ২০১৬ সাল থেকে তালেবানের ধর্ম, রাজনীতি সহ সমস্ত বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। তার নেতৃত্বেই সরকার গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সহ সমস্ত মন্ত্রী তার কাছে জবাবদিহি করবেন। তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পরে এখনো পর্যন্ত আখুন্দজাদা ক্যামেরার সামনে আসেননি। তবে সরকার গঠনের কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি।
ছবি: Imago/Xinhua
প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ হাসান আখুন্দ
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মোল্লাহ হাসান আখুন্দ। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারে আখুন্দ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অন্যতম তিনি। তবে এখনো জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম আছে।
ছবি: SAEED KHAN/AFP
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন বারাদার। অনেকে মনে করেছিলেন বারাদারকেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে তালেবানের ভিতরে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের আইএসআই-য়েরও হাত ছিল। হাসান আখুন্দকে সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়েছেন বারাদার।
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মৌলভি আদুল সালাম হানাফি
হানাফিও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন। তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক সদর দফতরে বিশেষ পদে ছিলেন হানাফি। অ্যামেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বেও ছিলেন। তবে তিনি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমনটা আশা করেননি অনেকেই। (ছবিতে ডানদিক থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: AFP/Getty Images/K. Jaafar
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দীন হাক্কানি। এফবিআইয়ের জঙ্গি তালিকায় তার নাম আছে। ২০১৭ সালে কাবুলে ট্রাক বোমা বিস্ফোরণে তিনিই মূল চক্রী বলে মনে করা হয়। যেখানে ১৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে আল কায়দারও যোগাযোগ আছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা দফতর মনে করে। অ্যামেরিকার তালিকায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
ছবি: FBI/REUTERS
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ইয়াকুব মুজাহিদ। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি। তালেবান সরকারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন। ইয়াকুবের নামও জাতিসংঘের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
ছবি: IRNA
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন মৌলভি আমির খান মুতাক্কি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে মোল্লাহ হিদায়েত বাদরি। বিচারবিভাগ দেখবেন আব্দুল হাকিম ইশাকজাই। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন খইরুল্লাহ সায়িদ ওয়ালি খায়েরখা।
ছবি: REUTERS
কথা রাখেনি
বিশেষজ্ঞদের দাবি, তালেবান একটি বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের মূল নীতি থেকে সরছে না। তারা জানিয়েছে, শরিয়ত আইনেই ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান শাসিত হবে। তারা কোনো নারীকে মন্ত্রিসভায় রাখেনি। আফগানিস্তান দখলের পরে তালেবানের কথা শুনে অনেকে মনে করেছিলেন, এবারের সরকার মধ্যপন্থা নিয়ে চলবে। তালেবান ছাড়াও অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের সরকারে নেয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রিসভা দেখে অনেকেই বলছেন, তালেবান কথা রাখেনি।
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AFP
8 ছবি1 | 8
বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এখনো পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে আফগানিস্তান পরিস্থিতি সন্ত্রাস নিয়ে মূলত কথা হয়েছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। বস্তুত, রাশিয়া আগেই তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। আফগানিস্তানে রাশিয়ার দূতাবাসও বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু রাশিয়া আশা করেছিল, তালেবান সমস্ত গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি 'ইনক্লিউসিভ' সরকার তৈরি করবে। কিন্তু মঙ্গলবার তালেবান যে মন্ত্রিসভা সামনে এনেছে, রাশিয়া তা নিয়ে খুশি নয় বলেই জানা যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি সামনে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতও আফগানিস্তান পরিস্থিতি, পাকিস্তানের ভূমিকা, চীনের অবস্থান নিয়ে বৈঠকে সংশয় প্রকাশ করেছে। দুই দেশ এই বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি ভারতীয় উপমহাদেশের শান্িতেত ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারত। সূত্র এমনই জানিয়েছে। উঠেছে কাশ্মীরের কথাও।
শুধু রাশিয়া নয়, মঙ্গলবার অত্যন্ত গোপনে অজিত ডোভাল বৈঠক করেছেন সিআইএ প্রধান উইলিয়াম জে বার্নসের সঙ্গেও। বুধবার এ খবর জানা যায়। বুধবারও দিল্লিতেই আছেন উইলিয়াম। আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক তিনি করতে পারেন। সিআইএ প্রধানও মূলত আফগানিস্তান নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও ভারত এবং অ্যামেরিকার প্রশাসন এই বৈঠক নিয়ে একটি মন্তব্যও করতে চায়নি।
সম্প্রতি গোপনে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন সিআইএ প্রধান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়েই তিনি আলোচনা করেছিলেন বলে জানা গেছিল। তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের পরদিনই তার ভারত সফরে আসা অন্য বার্তা বহন করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তালেবানের মন্ত্রিসভা নিয়ে অ্যামেরিকাও সন্তুষ্ট নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি নিয়েই ভারতীয় এনএসএ-এর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছে। আইএসআই তালেবানের পিছনে আছে বলেও অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ভারত এ বিষয়ে অভিযোগ করেছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সংশয় প্রকাশ করছিল ভারত। সেই পরিস্থিতিতে একই দিনে ভারতীয় রাজধানীতে সিআইএ প্রধান এবং রাশিয়ান এনএসএ-এর উপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।