1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লির মসনদ নিয়ে‌ শেষ পর্যায়েও টানাপোড়েন

২২ মে ২০১৯

নির্বাচনি ফলাফলের দোরগোড়ায় পৌঁছে রাজনৈতিক মহল দ্বিধাবিভক্ত৷ একদিকে এনডিএ, অন্যদিকে ইউপিএ৷ দু-‌পক্ষের দাবি পরবর্তী সরকার গড়তে চলেছে তারাই৷

Indien Dharamsala Wahlen Exil-Tibeter Tinte Finger
ছবি: Reuters/A. Abidi

চাপানউতোর আরো তুঙ্গে তুলে দিয়েছে বুথ-ফেরত সমীক্ষা৷ এখন কাঠগড়ায় ইলেক্টনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম৷

দু-‌মাস ধরে চলা সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া অবশেষে অন্তিম ক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে৷ দিল্লির মসনদ কার কপালে জুটবে, জানতে আর দেরি নেই৷ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরের মাথায় বজ্রপাত ঘটিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ‘‌এক্জিট পোল' বা বুথ-ফেরত সমীক্ষা৷

সবক'টি সমীক্ষক সংস্থার ইঙ্গিত, ভারতে আরো একবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ‘‌ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স' বা এনডিএ সরকার৷ প্রতিবার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত হলে বুথ ফেরত সমীক্ষা হয়ে থাকে৷ যতটা সম্ভব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে এই সমীক্ষা চালায় সংস্থাগুলি৷ তবে সমীক্ষা যে একশ' শতাংশ মিলে যায়, তেমনটা নয়৷ যেমন ২০০৪ ও ২০০৯ সালে মোটেও মেলেনি৷‌‌ এখন প্রশ্ন, তবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা নিয়ে ভয় কিসের?‌

বিরোধীদের কাণ্ডকারখানা দেখে বাংলা সাহিত্যের হযবরল- র দুটি চরিত্রের কথা মনে পড়ছে: সুজিত রায়

This browser does not support the audio element.

বিরোধীরা পরাজয়ের ইঙ্গিত পেয়ে হতাশা থেকে ইভিএমকে দোষারোপ করছে৷ এমনটা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজিত রায়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধীদের কাণ্ডকারখানা দেখে ‌বাংলা সাহিত্যের হযবরল-‌র দুটি চরিত্র হিজবিজবিজ ও কাকেশ্বর কুচকুচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে৷ মোদী-‌বিরোধীদলগুলির হাতে আর কোনো অস্ত্র নেই৷ এক্জিট পোলের ফল দেখে ইভিএমের ঘাড়ে দোষ চাপাতে উঠেপড়ে লেগেছে৷ তাতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, এবার নির্বাচনের ফলাফল মোদীর পক্ষেই যাচ্ছে৷ শোচনীয় পরাজয় হতে চলেছে বিরোধীদের৷ ভালো করে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, যে দলগুলি নিজেদের রাজ্যেই ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করেছে, তারাই বেশি গলা চড়াচ্ছে৷ যেমন, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল, বিহারের আরজেডি ও অন্ধ্রের টিডিপি৷ ১৯৮২ থেকে ইভিএমে ভোট হচ্ছে৷ আজকে হঠাৎ ইভিএমকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে কেন?''‌

২২টি বিরোধী দল জাতীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তাদের দাবিসনদ পেশ করে এসেছে৷ ইভিএমে কারচুপির সন্দেহ থেকে সরছে না বিরোধী শিবিরে থাকা দলগুলি৷ মঙ্গলবার নতুন দিল্লিতে পরপর দু-‌বার বৈঠকে বসেছিলেন বিজোপি-‌বিরোধী ২২টি দলের প্রতিনিধিরা৷ তাতে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গোহলট ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের পাশাপাশি ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলামনবি আজাদ, তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও'‌ব্রায়েন, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির সতীশ মিশ্র, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর ডি রাজা, আরজেডি-‌র মনোজ ঝা, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি প্রমুখ৷

এই প্রসঙ্গে গুলামনবি আজাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‌‘‘‌আমাদের দাবি, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে আগে ভিভিপ্যাটের স্লিপ ও ইভিএম গণনা করা৷ কোনো বুথে যদি গরমিল ধরা পড়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রের সম্পূর্ণ ভোটগণনা আরো একবার করতে হবে৷'' নির্বাচন কমিশন ‌দাবিগুলি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে৷

বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে সামনে রেখে বিরোধীদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা চলছে, মনে করছে কংগ্রেস৷ দলের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র দলীয় কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে অডিও বার্তা দিয়েছেন৷

প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, ‘‘‌প্রিয় কর্মী ভাই-‌বোনেরা, গুজব ও এক্জিট পোলে দয়া করে মনোবল হারাবেন না৷ মনোবল ভাঙার লক্ষ্যে এসব রটানো হচ্ছে৷ গণনা-কেন্দ্র ও স্ট্রং রুমে দৃঢ়তার সঙ্গে সজাগ থাকুন৷ আমাদের আশা, আপনাদের ও আমাদের পরিশ্রম সফল হবে৷''‌

ওদিকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন৷ টুইটে মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‌‘নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা ইভিএমের সুরক্ষার দায়িত্ব কমিশনের৷ গণতন্ত্রের পক্ষে অমঙ্গল, এমন সমস্যার কোনো ঠাঁই নেই৷ জনগণের সিদ্ধান্তই সবার ওপরে৷ এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকা উচিত নয়৷''

যদি সমীক্ষা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় তাহলে বিরোধীদের অভিযোগ প্রমাণিত হবে: মানস ভুঁইয়া

This browser does not support the audio element.

তবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা যা-‌ই বলুক কেন্দ্রে আরো একবার ইউপিএ-‌৩ (‌ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)‌ সরকার গড়ার সম্ভাবনা প্রবল, এমনটাই মনে করছে বিরোধী শিবির৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌প্রথম থেকেই ভারতীয় জনতা পার্টি নির্বাচন কমিশন ও বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমকে করায়ত্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, প্রচারের শুরু থেকে  নরেন্দ্র মোদী  ও অমিত শাহ বলে আসছেন তাঁরা ৩০০-‌র বেশি আসন পাবে৷ এখন এক্জিট পোল তাই বলছে৷ এই দুয়ের মধ্যে মিল স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে৷ আমরা বহুবার কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ জানিয়েছি৷ এখন ফল প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করব৷ আমরা মনে করি, নিশ্চিত জয় হবে বিরোধীদের৷ কিন্তু, যদি সমীক্ষা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় তাহলে বিরোধীদের অভিযোগ প্রমাণিত হবে৷'‌'‌

এরইমধ্যে ইউপিএ জোটে টানার চেষ্টা চলছে তেলুগু রাজ্যের দুটি দল টিআরএস এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে৷ প্রয়োজনে টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওকে উপ-‌প্রধানমন্ত্রীর পদ দেওয়ার কথাও ভাবছেন শিবিরের নেতারা৷ বিরোধী শিবিরের নেতারা বলছেন, ‘‘‌আরো একবার ‌ইউপিএ-‌৩ গড়া নিয়ে ২২টি বিরোধী দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে-কোনো পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি বিজেপিকে প্রথমে সরকার গড়ার ডাক দেবেন৷ কিন্তু বিরোধী শিবিরের হাতে উপযুক্ত সংখ্যা থাকবে৷ সরকার কার, ঠিক করবেন কে চন্দ্রশেখর রাও এবং জগণমোহন রেড্ডি৷ তাই শিবির আরো মজবুত করতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ কেসিআরকে উপ-‌প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হবে৷''

গোটা দেশের বহু স্ট্রংরুমে রাতপাহারা শুরু দিচ্ছেন বিরোধী নেতারা৷ ইভিএম বিতর্ক গগনচুম্বি হচ্ছে দেখে সরকারিভাবে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের দাবি, ‌‘‘‌অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ ইভিএম সুরক্ষিত রয়েছে৷ সিসিটিভি-‌র নজরদারিতে রয়েছে৷ এমনকি প্রোটোকল মেনে স্ট্রংরুমে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে৷'‌'‌ যদিও তারপরও কোথাও ইভিএম ভর্তি গাড়ির ভিডিও, কোথাও ইট ভাটায় ইভিএম জড়ো করার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়৷ উত্তাল গোটা দেশ৷ সব দেখে-শুনে সাধারণের মনে প্রশ্ন, ‘‘ইভিএম তুমি কার?''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ