সপ্তদশ সংসদীয় নির্বাচনের সাত দফা ভোটের মধ্যে ছয় দফা শেষ৷ বাকি মাত্র এক দফা৷ ১৯শে মে৷ কাজেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং ভোট সমীক্ষকদের মধ্যে এখন থেকেই অঙ্ক কষা চলেছে জোর কদমে৷
বিজ্ঞাপন
কোন দল বা জোট সরকার গড়বে? শাসক ও বিরোধী উভয়ের দাবি, তারাই গড়বে সরকার৷ পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে বলছে, সরকার গঠনের সম্ভাবনায় তারাই এগিয়ে৷
এই জল্পনার অবসান হবে ২৩ মে ভোট গণনার পরেই৷ কিন্ত তার আগেই সরকার গড়া নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গেছে, সংসদের নিম্নসভা লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে শাসক দল, বিরোধী দল এবং আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট কে ক'টা আসন পেতে পারে৷ শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ধারণা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের হাতের মুঠোয়৷ অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলির দাবি, সরকার গড়ার চাবিকাঠি তাদের হাতেই৷ তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, শাসক ও বিরোধী দল সরকার গড়ার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে আঞ্চলিক দলগুলিকে কাছে টানতেই হবে৷ দেখা যাক, বিকল্প সম্ভাবনা কী কী হতে পারে৷
এক, ২০১৪ সালের মতো বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো এবং শরিক দলগুলিকে নিয়ে এনডিএ (জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট) সরকার গঠন করল৷
দুই, শরিকদের নিয়েও দেখা গেল বিজেপি এনডিএ সরকার গড়তে পারলো না৷ সেক্ষেত্রে শরিক দলকে সরকার গড়তে দিয়ে বিজেপি বাইরে থেকে সমর্থন দিলো৷
‘ভোটে মোদী হাওয়া বলে এবার কিছু নেই’
তিন, শরিকদের নিয়েও যদি বিজেপি সরকার গড়তে না পারে, সেক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ (সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট) সরকার দিল্লির মসনদ দখল করতে পারে৷
চার, বিরোধী শিবিরের আঞ্চলিক দলগুলি মিলে সরকার গড়লো এবং কংগ্রেস তাদের সমর্থন দিলোবাইরে থেকে৷ এই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে জোর তত্পরতা চালিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও প্রমুখ৷ তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের প্রধান স্টালিন কিন্তু এই জোটে যোগ দেবেন কিনা সে বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেননি৷
কিন্তু সবথেকে বড় প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে৷ আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? চন্দ্র শেখর রাও দক্ষিণী রাজ্যগুলির কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার ইঙ্গিতও দিয়ে এসেছেন৷ এমনটাই শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে (৮০টি আসন) প্রধান দুই দল দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির জোট এখন পর্যন্ত একটু তফাতে থাকতেই পছন্দ করছে৷ কারণ, মায়াবতী মনে করেন, তিনিই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবার উপযুক্ত প্রার্থী৷
বিজেপিকে চিনে নিন
ভারতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ বর্তমানে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব রাখা দলটি সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম৷ ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিজেপির গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
আদর্শগত উৎস
বিজেপিকে চিনতে হলে ‘সংঘ পরিবার’-এর অন্তর্গত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির উৎস আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানা দরকার৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মারাঠি চিকিৎসক কেশব হেডগেওয়ার৷ ১৯২৫ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ ভি ডি সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই আরএসএস-এর প্রধান উদ্দেশ্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরত্ব
কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে ছিল আরএসএস৷ ১৯৪০-এর দশকে সংগঠনের নেতা হিসেবে এম এস গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে ব্রিটিশ বিরোধিতার বদলে ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় সত্যাগ্রহীদের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাড়া পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Desfor
দেশভাগ ও আরএসএস
দেশভাগের সময় আরএসএস পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে৷ আরএসএস ও বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মীরা মনে করেন, দেশভাগ মুসলিমদের প্রতি নরম আচরণের ফল৷ এজন্য গান্ধী ও নেহরুকে বিশেষভাবে দায়ী মনে করেন তাঁরা৷ স্বাধীনতার পর কংগ্রেসকে ঠেকাতে ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ সেই জনসংঘই আসলে বিজেপির উৎস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জরুরি অবস্থা ও জনতা পার্টির জন্ম
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে জনসংঘের অসংখ্য সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন৷ কংগ্রেসকে হারাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যায় জনসংঘ, জন্ম নেয় জনতা পার্টি৷ নির্বাচনে জিতেও যায় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই৷ স্বাধীন ভারতে সূচিত হয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজেপির জন্ম
১৯৮০’র পর দল ও আরএসএসের দ্বৈত সদস্য হবার বিধান না থাকায় জন্ম নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ নতুন দলে নতুন সদস্য যোগ দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল পুরোনোদের দাপট৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন বাজপেয়ী৷ মূলত, ইন্দিরা হত্যার পর ভোটে খারাপ করার কারণেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন৷ তবে বিজেপির উত্থান শুরু ১৯৮৪ সালে৷ সে বছর দলের সভাপতি হন লালকৃষ্ণ আডবানি৷ রাম জন্মভূমির দাবিকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী হতে থাকে বিজেপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও বাবরি মসজিদ
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিজেপি সরাসরি ধর্মের রাজনীতিতে নামে৷ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গঠনের দাবিতে সারা দেশ থেকে অযোধ্যার পথে রওয়ানা দেয় হাজার হাজার ‘করসেবক’৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে উত্তেজিত জনতা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হন দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
সরকার গঠন ও জোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১৬১টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ কিন্তু ১৩ দিন পর, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সেই সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে আবার নির্বাচন হয়৷
ছবি: UNI
প্রথম এনডিএ সরকার
নির্বাচনে জিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গড়ে৷ জোটে অংশগ্রহণ করে সমতা পার্টি, অকালী দল, শিব সেনা, নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (এআইএআইডিএমকে), বিজু জনতা দল ও শিব সেনা৷ ১৯৯৯ সালে তাঁরা সংসদে ৩০৩টি আসন জিতলে বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাঁচ বছরের পূর্ণমেয়াদী এই জোট সরকার প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার পাশাপাশি নব্য-উদার অর্থনীতির ওপর জোর দেয়৷
ছবি: Imago/photothek/T. Koehler
দুর্নীতি ও দাঙ্গায় কোণঠাসা বিজেপি
বিজেপির জয়রথে প্রথম ‘বাধা’ গোধরা দাঙ্গা৷ তীর্থযাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগাকে ঘিরে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান৷ তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতার নাম এই দাঙ্গার সাথে জড়ায়৷ বিজেপি-প্রধান বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ সব মিলিয়ে বিপন্ন বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ২০০৪ সালে নতুন সরকার গড়ে৷ প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷
ছবি: AP
নেতৃত্বে কে? মোদী, না আডবাণী?
২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলের নেতৃত্বের দায়ভার বর্ষীয়ান নেতা এল কে আডবানির ওপর বর্তানোর কথা উঠলেও, বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: AP
মোদীর উত্থান
বিজেপির ইতিহাসে ব্যক্তিকেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচার মোদীর ক্ষেত্রেই প্রথম৷ পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে মোদীর ‘গুজরাট মডেল’-কে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রচারে৷ সুবক্তা মোদী শীঘ্রই হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্ম থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের প্রিয়পাত্র৷ নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেলেও, মোদীর প্রাক-নির্বাচন বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Aktas
মোদী থেকে ‘মোদীজি’
২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে৷ ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার পাশাপাশি বিজেপির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল আরএসএসের নিঃশর্ত সমর্থন৷ নরেন্দ্র মোদীই হন প্রধানমন্ত্রী৷ পিউ গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমানে মোদীর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে, যা ২০১৯-র নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির জন্যও নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়৷
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
ষষ্ঠ দফা ভোটেরপরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকার গড়া নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৪ সালের মতো ভোটে মোদী হাওয়া বলে এবার কিছু নেই৷ গত পাঁচ বছরে মোদী সরকারের কর্মকাণ্ডের একটা অভিঘাত তো পড়তেই পারে, বিশেষ করে দুটো বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে, একটা হচ্ছে নোটবন্দি (বিমূদ্রাকরণ), অন্যটা হচ্ছে জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা শুল্ক)৷ এই দুটো সিদ্ধান্ত নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট চাপে ফেলেছে৷ এর একটা ফল তো পড়বেই৷ অনেক আসনে বিজেপি এজন্য ভোট হারাবে৷ সাম্প্রদায়িকতা বা সংখ্যালঘু স্বার্থের কথা যদি বাদও দিই, অর্থনৈতিক দিকগুলো বিজেপির জনপ্রিয়তায় চাপ বাড়িয়েছে৷ মনে হয়, সেটা বিজেপি সরকার এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি৷ তবে হ্যাঁ, গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি মোদী সরকার বাস্তবায়িত করেছে৷ যেমন, গ্রামীণ শৌচালয়, অল্প দামের বাড়িঘর তৈরি ইত্যাদি৷''
কংগ্রেসের একাল-সেকাল
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ২০১৯-এর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে দলটি৷ ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসার গল্প নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিষ্ঠা
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগে ১৮৮৫ সালে বোম্বে, অর্থাৎ আজকের মুম্বই শহরে জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস৷ তৎকালীন বৃটিশ শাসকের সাথে সাধারণ ভারতীয় জনতার সংলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে কংগ্রেস৷ প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী উমেশচন্দ্র বনার্জী৷ তখন দলের প্রতীক ছিল চরকা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস৷ দলটি ছিল নানা মতের মিলনমেলা৷ একদিকে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ’র মধ্যপন্থা, বিপরীতে ঋষি অরবিন্দ, লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক ও সুভাষচন্দ্র বসু’র চরমপন্থি জাতীয়তাবাদ — দলটি যেন দেশের মানুষের মতোই বিচিত্র, বহুমুখী৷
ছবি: picture alliance/AP Images
মতবিরোধ এবং সুভাষ বসুর দলত্যাগ
গান্ধী ও সুভাষের মধ্যেও মতবিরোধ ছিল৷ গান্ধী মনোনীত প্রার্থী, পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষ৷নিরস্ত্র আন্দোলন না সশস্ত্র আন্দোলন — কোন পথে লড়বে কংগ্রেস? এই প্রশ্নে উত্তাল দলের অভ্যন্তর৷ মতাদর্শগত টানাপড়েনের মুখে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ৷ কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন৷
ছবি: Public Domain
দাঙ্গা
ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছিল, তার ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা৷ ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলীম লীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক অঞ্চলের দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক চাপ বাড়লে কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়৷ ৪০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান ও লক্ষাধিক হন গৃহহীন৷ আস্তে আস্তে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তৈরি হতে থাকে ভারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
কংগ্রেস ও দেশভাগ
দাঙ্গার দগদগে ঘা নিয়েই ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ তবে অখণ্ড ভারত থাকেনি৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় দেশ, জন্ম নেয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান৷ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন গান্ধীবাদী জওহরলাল নেহরু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন গান্ধী
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার সদস্য, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী৷ গান্ধী বেঁচে থাকাকালীন পাকিস্তান নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভার মতো কিছু গোষ্ঠী ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়৷ গান্ধীর মৃত্যুকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে নেহরু বিভিন্ন চরমপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/K. Gandhi
নেহরুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ
জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়৷ ১৯৬৪ পর্যন্ত দল ও দেশের নেতৃত্ব দেন নেহেরু৷ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে পরিচিত নেহরু ‘জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ও ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
ছবি: AP
ইন্দিরার হাত ধরে পরিবারতন্ত্রের শুরু
নেহরু-কন্যা ইন্দিরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ অবধি তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ইন্দিরা৷ তবে ১৯৫৯ সালেই কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী৷ ১৯৬৬ সালে তাঁরও মৃত্যু হলে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/united archives
জরুরি অবস্থায় কংগ্রেস
১৯৭৫ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগে সারা দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওঠে ইন্দিরা-বিরোধী আওয়াজ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা৷ জরুরি অবস্থার শেষে পুনর্নিবাচনে কংগ্রেস হেরে যায়৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
নতুন প্রতীক, নতুন আঙ্গিকের কংগ্রেস
১৯৫১ সাল পর্যন্ত দলের প্রতীক ছিল চরকা৷ ১৯৫২-৭১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতীক ছিল হাল ও বাছুর৷ ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ইন্দিরার নতুন দল কংগ্রেস (আই)-এর প্রতীক হয় হাত৷ পরে তা হয় একত্রিত কংগ্রেসের প্রতীক৷ বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতীক ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে ডান হাত৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস৷ পুত্র সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় পুত্র রাজীবকে৷
ছবি: AP
ইন্দিরার প্রয়াণ, রাজীবের আগমন
১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের ঠেকাতে ইন্দিরা শুরু করেন ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’৷ স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে৷ সে বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী ভারতের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/Sven Simon
রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে চরমপন্থি তামিল গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর রোষের মুখে পড়েন৷ ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রচার করার সময় এলটিটিই কর্মীদের আত্মঘাতী বোমায় মারা যান রাজীব৷ ফলে আবার নেতৃত্বের সংকটে পড়ে কংগ্রেস৷
ছবি: Getty Images/AFP
পরিবারতন্ত্রে সাময়িক ছেদ
রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিংহ রাও৷ পাশাপাশি চলতে থাকে রাজীব গান্ধীর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনার প্রস্তুতি৷ বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট সরকার৷ ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
ক্ষমতায় আসা যাওয়া
২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি সোনিয়া৷ সেই দায়িত্ব পান মনমোহন সিং৷ কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ইউপিএ জোট সরকারের সাথে জুড়তে থাকে ‘টু-জি মামলা’ বা কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ৷ ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসন জিতে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৭ সালের শেষে সোনিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নিলে দলের নেতৃত্ব নেন রাজীব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল৷
ছবি: Reuters/B. Mathur
দলের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী
২০১৩ সালে উপ-সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আগমনের পথ ধরেছিলেন রাহুল৷ ২০১৪’র নির্বাচনে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভরাডুবি হয়৷ এর জন্য তাঁর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করেন অনেকে৷ তবে ২০১৯ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস৷
ছবি: IANS
15 ছবি1 | 15
সেদিক থেকে কংগ্রেসের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? উত্তরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কয়েকটা রাজ্যে কংগ্রেস ভালো ফল করবে বলে মনে হয়৷ যেমন, পাঞ্জাব, রাজস্থানে ভালো ফল করতে পারবে৷ এছাড়া ছত্তিশগড়,মধ্যপ্রদেশ এমনকি কেরালাতেও কংগ্রেস আগের চেয়ে ভালো ফল করবে৷ তবে কেন্দ্রে একক সরকার গড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছোবে না৷ তখন বাইরের সমর্থন ছাড়া চলবে না৷ সামগ্রিক ছবিটা এখনো পর্যন্ত খুব স্পষ্ট নয়৷ কাজেই ছয়-দফা ভোটের পর কংগ্রেসকে মাঝখানে রেখে বা বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের সম্ভাবনাই ক্রমশ উজ্জ্বল মনে হচ্ছে৷ অন্তত আমি তাই মনে করি৷''
মহাজোট কি দেশকে একটা স্থিতিশীল সরকার দিতে পারবে? কারণ আঞ্চলিক দলগুলির মতাদর্শের ভিন্নমুখীনতা বারংবার উঠে এসেছে এবং আসছে৷ ‘‘সেক্ষেত্রে সরকার চালাতে দলীয় স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে৷ সহমতে আসা কঠিন হয়ে পড়বে৷ সেই রকম পরিস্থিতিতে বিজেপি সেই সুযোগ নেবে৷ কংগ্রেস যদি ১৪০ কিংবা ১২০-১৩০এর মতো আসন পায় এবং মহাজোট যদি দেড়শ'র মতো আসন পায়, তাহলে সরকার গঠন করতে অসুবিধা হবে না৷ তার পরে কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না,'' বললেন অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায়৷
এক নজরে ভারতের আঞ্চলিক দল
২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়া এবং টিকিয়ে রাখায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দলগুলি নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
ছবি: UNI
দলিতের দল বহুজন সমাজ পার্টি
উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রাণপুরুষ, দলিত নেতা ডক্টর বি. আর আম্বেদকরের আদর্শে ১৯৮৪ সালে দলটি গঠন করেন কাঁসিরাম৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী তিনি৷ নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন হাতি৷ বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপির চারজন থাকলেও লোকসভায় একজনও নেই৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
ক্ষমতার আশায় সমাজবাদী পার্টি
১৯৯২ সালে মূল জনতা দল ভেঙে গঠিত সমাজবাদী পার্টি (এসপি) উত্তরপ্রদেশে খুবই প্রভাবশালী৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুলায়েম সিং যাদব, তবে বর্তমান দলনেতা অখিলেশ সিং যাদব৷ দলের মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র৷ নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল৷ ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে শাসক দল বহুজন সমাজ পার্টিকে পরাজিত করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করে৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭টি এবং ১৩টি৷
ছবি: picture-alliance
দাঁড়িপাল্লায় অকালী দল
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ ও পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল শিরোমণি অকালী দল৷ সব থেকে পুরানো এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি ‘অকালী’ নামেই পরিচিত৷ নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা৷ বর্তমান সভাপতি সুখবীর সিং বাদল৷ গুরুদোয়ারার মতো শিখ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর দল৷ প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে৷ বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অকালী দলের সাংসদ চারজন, বিধানসভায় ১১৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৫টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দক্ষিণ ভারতের এআইএডিএমকে
অখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, বা সংক্ষেপে এআইএডিএমকে, ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রাজনৈতিক দল৷ ১৯৭২ সালে এম.জি. রামচন্দ্রন কর্তৃক এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় প্রতীক জোড়া পাতা৷এই দল সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দ্রাবিড় আঞ্চলিক পার্টি৷ ‘আম্মা’ জয়ললিতার নেতৃত্বে ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে এআইএডিএমকে৷ রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল এআইএডিএমকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
উদীয়মান ডিএমকে?
দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, সংক্ষেপে ডিএমকে তামিলনাড়ু রাজ্যের পুরনো আঞ্চলিক দল৷ প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই৷ ‘জাস্টিস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দ্রাবিড় কড়গম পার্টি ভেঙে গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে আমৃত্যু দলের নেতৃত্ব দেন করুণানিধি৷ মতাদর্শ সামাজিক গণতন্ত্র ও আঞ্চলিকতাবাদ এবং নির্বাচনি প্রতীক উদীয়মান সূর্য৷ বিরোধীনেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর আগামী ভোটে কেমন ফল করে ডিএমকে, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sankar
আম জনতার আম আদমি পার্টি
২০১২ সালে গঠিত আম আদমি পার্টি বর্তমানে দিল্লির শাসক দল৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারী আন্না হাজারে ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নামে আম আদমি পার্টি ও সরকার গঠন করে৷ অবিলম্বে লোকপাল বিল আনার শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা না থাকায় ৪৯ দিনের মাথায় ইস্তফা দিলেও ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Reuters/A. Mukherjee
বিজু-র জয়রথ কি বজায় থাকবে?
১৯৯৭ সালে গঠিত বিজু জনতা দল বর্তমানে ওড়িষায় ক্ষমতাসীন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের ছেলে নবীন পট্টনায়েক এখন মুখ্যমন্ত্রী৷ পিতার নামেই দলের নাম৷ দলের প্রতীক চিহ্ন শঙ্খ৷ নবীন পট্টনায়েক ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন৷ ২০০০ সাল থেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় নবীন পট্টনায়ক এখন মোট চারবারের মুখ্যমন্ত্রী৷