কর্ণাটকের পর এবার দিল্লি। রাজ্য সরকারের একটি স্কুলে এক ছাত্রীকে হিজাব খুলে ক্লাসে যেতে বলা হলো।
বিজ্ঞাপন
স্কুল-কলেজে হিজাব পরা নিয়ে কর্ণাটকে এখনো বিতর্ক চলছে। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা চলছে। এই অবস্থায় দিল্লির সরকারি স্কুলে হিজাব বিতর্ক শুরু হলো।
মুস্তাফাবাদ এলাকায় একটি স্কুলে এক ছাত্রীকে হিজাব খুলে ক্লাসে যেতে বলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী একটি ভিডিওতে এই অভিযোগ করে। ভিডিওটি যথারীতি ভাইরাল হয়। তারপর দিল্লি সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের এব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তারা কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। কিছু মানুষ এই নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে তার অভিযোগ।
কী হয়েছিল?
দিল্লিতে আপ সরকার আসার পর সরকারি স্কুলের অনেক উন্নতি হয়েছে। স্কুলে ড্রেস কোড তৈরি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা সেই কোড মেনেই পোশাক পরে।
মুস্তাফাবাদের স্কুলের ওই ছাত্রীটি ভিডিওতে অভিযোগ করে, স্কুলে যাওয়ার পর এক শিক্ষক তাকে হিজাব খুলতে বলে। তাকে বলা হয়, মায়ের মতো না হতে। স্কুলে হিজাব পরে না আসতে। আরো দুই তিনজন ছাত্রীকেও হিজাব খুলতে বলা হয়।
কর্নাটকের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
হিজাব নিয়ে বিতর্ক ও তুমুল উত্তেজনার মধ্যে কর্নাটক রাজ্যের সব স্কুল তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ তারপরও বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলছে৷দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Rupak De Chowdhuri/REUTERS
‘হিজাব আমাদের অধিকার’
কর্নাটক রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার পর থেকে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে ভারতে৷ নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাও হয়েছে আদালতে৷ওপরের ছবিটি দিল্লিতে মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের৷ সমাবেশে অংশ নেয়া এক মুসলিম ছাত্রীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘হিজাব আমাদের অধিকার৷’’
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিবাদ
এদিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরাসরি জানিয়েছেন তিনি হিজাব নিষিদ্ধের ঘোর বিরোধী৷ কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘‘একজন নারী কী পোশাক পরবেন, মাথা ঢাকবেন কিনা, সেটা তার নিজস্ব বিষয়। চাইলে তিনি ঘোমটা দেবেন, চাইলে হিজাব পরবেন, কেউ নারীর এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’’
ছবি: Reuters/A. Dave
নারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ
কর্নাটকের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ভারতের মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্টের নারী শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: MOHSIN JAVED/DW
হায়দ্রাবাদে বিক্ষোভ
কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদ হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন শহরে৷ ওপরের ছবিটি হায়দ্রাবাদের৷
ছবি: AFP
সরব মালালা
শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই-ও মনে করেন হিজাব পরার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে না দেওয়া খুব অন্যায়। টুইটারে তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘বেশি কাপড় বা কম কাপড় পরা - যে-কোনো অছিলাতে নারীদের পণ্য বানানোর প্রবণতা চলছেই।" টুইট বার্তায় মালালা ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘মুসলিম নারীদের কোণঠাসা করা বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Joe Giddens/PA Wire/empics/picture alliance
‘সংবিধান আমাদের মাথার মুকুট, হিজাব আমাদের অধিকার’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা যে ভারতের সংবিধানও অনুমোদন করে না- সেই বিষয়টির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন মুসলিম শিক্ষার্থীরা৷ কলকাতার সমাবেশে যোগ দেয়া এক শিক্ষার্থীর হাতের ব্যানারেও তাই লেখা, ‘‘সংবিধান আমাদের মুকুট, হিজাব আমাদের অধিকার৷’’
ছবি: Rupak De Chowdhuri/REUTERS
প্রতিবাদ চলবে...
এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ সরকার শিক্ষার্থীদের অপমান বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো৷আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক... আমাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না৷’’
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP
7 ছবি1 | 7
সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে দিল্লির স্কুলে চালু রীতি হলো, ছাত্রীরা স্কুলে আসার পথে হিজাব পরে, কিন্তু ক্লাসে তারা তা খুলে রাখে। এক্ষেত্রে তাই ছাত্রীটি হিজাব পরে স্কুলে আসার পর শিক্ষক তাকে ওই অনুরোধ করেন। তবে পরে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয় এবং বিরোধ মিটে যায়।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া জানিয়েছেন, দিল্লির সরকারি স্কুলে সব ধর্মের ছাত্রছাত্রীকে সমভাবে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে সমান ব্যবহার করা হয়। তাদের উপর কোনোরকম বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়া হয় না। ঐতিহ্য মেনে চলা হয়।
সিসোদিয়া জানিয়েছেন, ''আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমার মনে হয় না, আর কোনো সমস্যা আছে। শিক্ষাবিভাগ কোনোরকম বিধিনিষেধ চালু করেনি। তবে এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। তাই এত হইচই হচ্ছে।''