1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লি দূষণে বন্ধ স্কুল, শুরু অনলাইন ক্লাস

৬ নভেম্বর ২০২৩

সোমবার দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচ। প্র্যাকটিসে নামতেও সমস্যা হয়েছে দুই দলের।

দিল্লিতে বাড়ছে দূষণের মাত্রা
দূষণের চাদরে ঢেকেছে দিল্লিছবি: Hindustan Times/imago images

সুস্থ ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০ এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়। ২০০ একিইউআই পর্যন্ত অ্যাভারেজ ধরা হয়। সেখানে সোমবার সকালে দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের একিউআই ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।

দিল্লি ইউনিভার্সিটি অঞ্চলে দূষণের পরিমাণ সোমবার সকাল সাতটায় ছিল ৪৭৩। দিল্লি বিমানবন্দরে সেই মাত্রা ছিল ৫৫৯। দিল্লির পার্শ্ববর্তী শহর নয়ডায় দূষণের মাত্রা ৬১৬।দিল্লি আইআইটি অঞ্চল, যা দক্ষিণ দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, সেখানে সোমবার দূষণের মাত্রা ৫১৭। দিল্লির আরেক পার্শ্ববর্তী শহর গুরগাঁওয়ে দূষণের মাত্রা ৫১৬।

চিকিৎসক সাত্যকি হালদার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই পরিমাণ দূষণে বাড়িতে বসেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হওয়ার কথা। বাইরে বেরোলে মাস্ক অবশ্যই পড়তে হবে। কিন্তু তাতেও দূষণের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।''

সফদরজং হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক এবং নয়ডানিবাসী বিষ্ণু দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''গত এক সপ্তাহে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা অন্তত ১০ গুণ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু এবং বয়স্কদের।'' বিষ্ণুর বক্তব্য, ফুসফুসের অসুখ থাকলে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে কোনোভাবেই এই সময় বাইরে যাওয়া ঠিক নয়।

চিত্তকঞ্জন পার্কের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থপ্রতিম বোস জানিয়েছেন, ''রোগীর সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে। এখন বাইরে বেরোবার আগে স্টিম নিয়ে, গার্গল করাটা জরুরি।''

প্র্যাকটিসও করলো না বাংলাদেশ

বস্তুত, দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়ে চিন্তিত আইসিসি। সোমবারই দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে (যার নতুন নাম অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বাংলাদেশ আগেই দিল্লি এসে পৌঁছেছিল। শুক্রবার তারা প্র্যাকটিস করতে নেমেও দ্রুত ড্রেসিংরুমে চলে যায়। শনি এবং রোববার শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রাও প্র্যাকটিসের সময় অনেক কমিয়ে দেন। বেশিরভাগ সময়েই তারা ড্রেসিংরুমের ভিতর ছিলেন। বাইরে এসেছেন মাস্ক পরে।

বায়ু দূষণে বিপর্যস্ত নতুন দিল্লি

01:59

This browser does not support the video element.

বৃষ্টি বা ফগের জন্য আইসিসি খেলা বন্ধ করে দেয়। বায়ু দূষণের মাত্রার জন্যও তারা খেলা বন্ধ করে দিতে পারে। বস্তুত, রোববার বিশেষজ্ঞদের একাংশ খেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সোমবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে দুই দলের খেলোয়াড় এবং ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই চিকিৎসকরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দিল্লির প্রশাসন জানিয়েছে, দূষণ কমানোর জন্য বেশ কিছু যন্ত্র মাঠে রাখা হবে।

বন্ধ স্কুল, অনলাইন ক্লাস শুরু

গত সপ্তাহ থেকেই দিল্লির একাধিক স্কুল ক্লাসরুম বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্রদের অনলাইনে পড়ানো হচ্ছে। সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিশেষ বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে ঠিক হয়েছে, ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ থাকবে।  ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস অনলাইনে নেয়া হবে। তবে স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হতে পারে। 

একইসঙ্গে দিল্লিতে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডিজেল গাড়ি চলার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কেবলমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ট্রাক এবং ডিজেল গাড়ি দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়া হবে।

অড-ইভন চালু

দিল্লিতে আবার গাড়ির ক্ষেত্রে অড-ইভন শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৩ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত অড-ইভন চালু হবে। যে সব গাড়ির নম্বরপ্লেটের শেষ অক্ষর এক, তিন, পাঁচ, সাত বা নয় সেগুলি অডের দিনে বেরোতে পারবে। বাকিরা ইভনের দিনে বেরোতে পারবে।

দিওয়ালির পর

আগামী সপ্তাহে দীপাবলি। সে সময় দূষণের মাত্রা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানী দীপায়ন দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''দিল্লির আবহাওয়ার এটাই সবচেয়ে বড় সংকট। এই দূষণ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। যত দিন যাবে দূষণের মাত্রা তত বাড়বে।'' দীপায়নের বক্তব্য, বছরের এই সময়টায় একদিকে মরুভূমি এবং অন্যদিকে পাহাড়ে আটক দিল্লিতে একটি দূষণের পকেট তৈরি হয়। কারণ, বাতাস আচমকাই শুকনো হয়ে যায়। বাতাসের গতি হঠাৎ করে কমে যায়। ফলে বাতাসের ধূলিকণা এই পকেটে আটকে থাকে। দূষণ বাড়তে থাকে।

বস্তুত, বছরের এই সময়েই পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় ফসল কেটে জমিতে আগুন দেওয়া হয়। সেই দূষণ দিল্লিতে দূষণের পকেট তৈরি করে। খড় জ্বালানোর এই প্রথা নিয়ে প্রতি বছরই নানা আলোচনা হয়। চাষীরা যাতে খড় না জ্বালিয়ে তা সাড় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে একটি কিটও তৈরি হয়েছে। পাঞ্জাবের কৃষক আনন্দ মহীন্দ্রা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পাঞ্জাব হরিয়ানায় ফসল যন্ত্র দিয়ে কাটা হয়। ফলে জমিতে পুরনো গাছের অংশবিশেষ থেকে যায়। না জ্বালালে ওই জমিতে পরের ফসল নষ্ট হয়ে যায়।'' সরকার যে কিটের কথা বলছে, আনন্দের বক্তব্য, তা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অপ্রতুল। হরিয়ানাতে কেন্দ্রীয় সরকার ওই কিট দিলেও পাঞ্জাবে তা পৌঁছায়নি বলে আনন্দের দাবি।

সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে দিল্লিতে। দিপাবলির আগেই দূষণের মাত্রা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। দীপাবলিতে তা আরো দেড় গুণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ