গাড়ির ধোঁয়া এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে খড় পোড়ানোর জেরে দিল্লির বাতাস আরো বিষাক্ত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ ছিল ৩৭৬ একিউআই। বৃহস্পতিবার সকালে তা পৌঁছে গেছে ৪০৮ একিউআইয়ে। চিকিৎসক এবং পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, বাতাসের দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে সকালের দিকে। সে সময় বাড়ি থেকে বার না হওয়াই শ্রেয়। বস্তুত, শিশুদের সকালে স্কুলে যেতে হয় বলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন দিল্লির একাধিক চিকিৎসক।
এ কারণেই জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে স্কুল বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, বায়ু দূষণের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখা হোক।
দিল্লিতে সবরকম বাজি ফাটানোই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু দীপাবলির রাতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে দিল্লির বহু এলাকায়। সন্ধে ৭টা থেকে লাজপতনগর, পশ্চিম দিল্লি, বুরারি, পশ্চিম বিহারে বিপুল বাজি ফেটেছে। পুলিশের চোখের সামনেই রাস্তায় নেমে মানুষ বাজি ফাটিয়েছেন।
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
দূষণের চাদর
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে দিল্লিতে। শুক্রবার সকালে ধোঁয়াশার হালকা চাদরে ঢেকে গেছে দিল্লি। চোখ জ্বালা করছে। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির দূষণ অতি ভয়ংকর বা সিভিয়ারে পৌঁছে গিয়েছিল। শুক্রবার সকালে তা হ্যাজারডাস সূচকে আছে। দিল্লির আশপাশের শহরগুলির পরিস্থিতিও ভয়াবহ। নয়ডা, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদে বিপুল বাজি ফেটেছে।
ছবি: Imtiyaz Khan/AA/picture-alliance
সুপ্রিম কোর্টের রায়
পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরেই এত বাজি ফাটানোর সুযোগ পেলেন নাগরিকরা। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, গ্রিন ক্র্যাকার ফাটানো যাবে। তারপরেই সাধারণ মানুষ বাজি কিনতে শুরু করেন। যার মধ্যে বহু নিষিদ্ধ বাজিও ছিল। গ্রিন ক্র্যাকারের লেবেল লাগিয়ে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতার পরিস্থিতি
অন্যবারের মতো না হলেও কলকাতাতেও ষথেষ্ট পরিমাণ বাজি ফেটেছে বৃহস্পতিবার। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজি ফাটানোর অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজির দূষণ
বিভিন্ন পাড়ায় এভাবেই রাস্তায় নেমে বাজি ফাটিয়ে দূষণ ছড়িয়েছেন নাগরিকরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সবুজ বাজি
অনেকেই দাবি করেছেন, তারা দোকান থেকে সবুজ বাজি কিনে এনেছেন। কিন্তু পরিবেশবিদদের বক্তব্য, সবুজ বাজির লাইসেন্স পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কারো কাছে নেই। ফলে সবুজ বাজি বিক্রি করাও সম্ভব নয়। যে বাজি ফেটেছে, সবই নিষিদ্ধ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এবং চকোলেট বোমা
অন্তত এক দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের চকোলেট বোমা ফাটানো নিষিদ্ধ হয়েছে। এই বোমের শব্দমাত্রা ৬৫ ডেসিবলের উপরে। কিন্তু যত্রতত্র ফেটেছে চকোলেট বোমা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছোটদের হাতে বোমা
কিশোরদের হাতে দেখা গেছে চকোলেট বোমা। রাস্তায় নেমে প্রকাশ্যে তারা এই বোমা ফাটিয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তুবড়ির দূষণ
দেখতে সুন্দর লাগলেও এই ধরনের তুবড়ি বাজিতে বিপুল দূষণ হয়। এর ভিতরে গন্ধক থাকে। বারুদের সঙ্গে পুড়ে যা দূষণ তৈরি করে। কলকাতা এবং দিল্লির রাস্তায় এমন তুবড়ি ফাটানো হয়েছে দীপাবলির রাতে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফানুস ঐতিহ্য
কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে কালীপুজোর দিন ফানুস ওড়ানোর ঐতিহ্য আছে। ফানুস বাজি নিষিদ্ধ হলেও ঐতিহ্যবাহী ফানুস ওড়ানো হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফানুস উৎসব
উত্তর কলকাতার কোনো কোনো এলাকায় ফানুস উৎসব হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তেমনই এক উৎসবের প্রস্তুতি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
11 ছবি1 | 11
চিকিৎসক বিষ্ণু দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা এখন যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ গলা এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক এবং শিশুরা।'' বিষ্ণু জানিয়েছেন, সাধারণ ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। কারণ, শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত বায়ু শরীরে ঢুকছে।
পরিবেশবিদ দীপায়ন দে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ভোরের দিকে বাতাসে দূষণের স্তর অনেক নীচের দিকে থাকে। যে কারণে শহরজুড়ে স্মগ বা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সে সময় বাইরে বার হওয়া সবচেয়ে খারাপ।''
শিশু অধিকার কমিশনের বক্তব্যও তাই। তারা বলেছেন, শিশুদের ওই সময়েই স্কুলে যেতে হয়। ফলে বহু শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে অভিভাবকেরা শিশু অধিকার কমিশনের সঙ্গে সহমত নন। তাদের বক্তব্য, করোনার জন্য দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ছাত্রছাত্রীদের তার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার দূষণের কারণে স্কুল বন্ধ হলে তারা আরো পিছিয়ে পড়বে। সরকারের দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতে হবে। স্কুল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।
এর আগেও দূষণের জন্য দিল্লিতে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। সরকার এবারেও জানিয়েছে, অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বার না হওয়াই ভালো। সম্ভব হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অফিসগুলি সে পরামর্শ মানছে না বলেই দাবি পরিবেশবিদদের।
পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বায়ুর গতি এখন যা, তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেও দিল্লির দূষণ কমার বিশেষ সম্ভাবনা নেই।